ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

পিতা-মাতা অবাধ্য সন্তান বেহেশতে যাবে না

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫
পিতা-মাতা অবাধ্য সন্তান বেহেশতে যাবে না

সীমাহীন কষ্ট ও অবর্ণনীয় যাতনা সহ্য করে মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। মৃত্যু যন্ত্রণা পার হয়ে যখন সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন এ নবজাতককে ঘিরে মায়ের সব প্রত্যশা উঁকি মারতে থাকে।

মা পরম আদর আর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে সন্তানকে ঘিরে রাখে সারাক্ষণ। যত বিপদই আসুক না কেন মা যদি বুকের সাথে চেপে ধরে কিংবা স্নেহ মাখা দৃষ্টিতে একবার তাকায় তাহলে সব কষ্ট যেন নিমিষেই উধাও হয়ে যায়- এই হলো মা। পরম মমতাময়ী মা।

আর পিতা? তিনি সন্তানের আহার জুটাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন। সহ্য করেন নানা ধরনের কষ্ট এবং ক্লেশ। দুনিয়ার প্রতিটি বাবা সন্তানের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য যে কোনো ধরণের বিপদের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন। আর এসব কারণে আমাদের অস্তিত্বের প্রতিটি ধাপ, পদক্ষেপ পিতা-মাতার নিকট ঋণী।

আর এসব কারণেই আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে তার ইবাদতের পরই পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণ করার কথা বলেছেন বার বার। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলেও আদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না। এবং তাদেরকে ভর্র্ৎসনা করো না; তাদের সাথে কথা বলো সম্মানসূচক নম্র কথা। ’ -সূরা বনি ইসরাঈল : ২৩

পবিত্র কোরআনের অন্যত্র আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় কর। ’ -সূরা লোকমান : ১৪

এ সব আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেছেন, কেউ যদি শুধু আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে কিন্তু পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় না করে- তবে তা আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত। আর এ কারণেই কোরআনে কারিমে একাধিকবার আল্লাহর আনুগত্যের নির্দেশের সাথে সাথে পিতা-মাতার আনুগত্য করার প্রতি নির্দেশ এসেছে। ধ্বনিত হয়েছে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করার প্রতি কঠিন হুশিয়ারী। তা যে কোনো কারণেই হোক না কেন।

এভাবে শুধু পবিত্র কোরআনে কারিমে নয়; অসংখ্য হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদেরকে পিতা-মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণিত এসব হাদিসে বলা হয়েছে, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, পিতা-মাতাই সন্তানের জান্নাত-জাহান্নামের কারণ।

এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টির ওপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতা-মাতার অসন্তষ্টির ওপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি নির্ভর করছে। ’

হজরত মোয়াবিয়া ইবনে জাহাম সুহামি নবী করিম (সা.)-এর সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বললেন, ‘যাও, তোমার আম্মার সেবা করো। ’ কিন্তু তিনি জিহাদে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ জানাতে থাকলে তিনি বললেন, ‘হায় আফসোস! তোমার মার পা ধরে থাক। ওখানেই তোমার জান্নাত। ’ –ইবনে মাজাহ

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, একলোক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম সংস্রব পাওয়ার জন্য কে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত? তিনি বললেন, তোমার মা। ’ লোকটি আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা। ’ সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা। ’-বোখারি ও মুসলিম

হাদিসে আরও বলা হয়েছে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের প্রতি আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তাকাবেন না। আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না। পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রূপ হতে পারে। যেমন—

ক. পিতা-মাতার ওপর নিজেকে বড় মনে করা। অর্থাৎ সম্পদ, শিক্ষা-দীক্ষা, সম্মান-প্রতিপত্তি ইত্যাদি বিষয়ে পিতা-মাতার চেয়ে নিজেকে বড় মনে করা।

খ. পিতা-মাতাকে সহায়-সম্বলহীন এবং নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে রাখা এবং যার কারণে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে বাধ্য হয়।

গ. বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তান বা অন্য কাউকে, এমনকি নিজের প্রয়োজনকেও পিতা-মাতার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া তাদের অবাধ্যতার অর্ন্তভুক্ত।

ঘ. পিতা-মাতাকে শুধু নাম ধরে বা এমন শব্দ প্রয়োগে ডাকা যা তাদের অসম্মান ও মর্যাদাহানীর ইঙ্গিত দেয়।

ঙ. পিতা-মাতার সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে ধমকের সুরে কথা বলা।

চ. তাদের সেবা-শুশ্রূষা না করা এবং শারিরীক বা মানসিক দিকের প্রতি লক্ষ না রাখা। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে রোগ-ব্যাধিতে তাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘন্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।