ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

খাবার অপচয়কারীর পরিণাম শুভ নয়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫
খাবার অপচয়কারীর পরিণাম শুভ নয়

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বেশি আহার করো না। ’ বর্তমানে আমরা শুধুই যে বেশি খাই তা নয়, বরং বেশি খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ডাস্টবিনে ফেলে দেই।

বিশেষ করে কোনো অনুষ্ঠানে যে হারে খাবার নষ্ট করার রেওয়াজ চলমান- তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তারকামানের হোটেল থেকে শুরু করে দেশীয় সাধারণ মানের হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানের ফাস্টফুডের দোকানে দেখা যায় খাবার নষ্ট করার মচ্ছব। প্রায়ই দেখা যায়, মানুষ প্লেট ভরে খাবার নেয়, এর কিছুটা খায় বাকীটা নষ্ট করে রেখে দেয়। এভাবে খাবার নষ্ট করার আগে তার হাত একটুও হাত কাঁপে না। মাথায় একটুও আসে না, সে যে মুহূর্তে খাবার নষ্ট করছে, তখন তারই পাশে হয়তো কোনো ক্ষুধার্থ শিশু কিংবা বৃদ্ধ অথবা অসহায় নারী খাবারের জন্য কষ্ট করছে।

পৃথিবী কত দ্রুত বদলে যায়। এক সময় আমাদের বলা হতো মাছে-ভাতে বাঙালি। সেই শস্য-শ্যামলা-সুজলা বাংলাদেশে এখন আর মাছের সোনালী দিন নেই। নদীতে পানি নেই, আমনের মৌসুমে যেখানে ফসলের খেত পানিতে থই থই করত- সেখানে এখন পানির পাম্প বসিয়ে সেচ দিতে হয়। সেই পানির স্তরও নেমে গেছে অনেক নিচে। ফলে ফসল ফলাতে কৃষকদের প্রচুর কষ্ট করতে হয়। তবুও আমাদের বুক কাঁপে না। এতো কষ্টের খাবার তার পরও আমরা অপচয় করি।

অথচ আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেছেন, ‘তোমরা অপচয় করো না, আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না। ’ আমরা আল্লাহর ভালোবাসার থোড়াই কেয়ার করি।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কারো কাছ থেকে মাটিতে খাবার পড়ে গেলে সে যেন সেটা তুলে, ধুলোটা ঝেড়ে খেয়ে ফেলে; শয়তানের জন্য রেখে না দেয়। ’ নবী (সা.) খাবার শেষে হাত চেটে খেতে বলেছেন, কারণ খাবারের কোন অংশে বরকত আছে সেটা মানুষ জানে না। দেখুন, খাবারের বরকত কমে যাচ্ছে বলেই কিন্তু খাবারের উৎপাদন কমছে, সেই কম খাবার সংরক্ষণের জন্য ফরমালিনের বিষ মিশানো হচ্ছে, বিষ মেশানো সেই খাবারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, খাবারের স্বাদ-তৃপ্তি সব উধাও হয়ে যাচ্ছে। এবার আপনিই বলুন, গোড়ায় গলদ রেখে উন্নয়ন কীভাবে হবে? অর্থাৎ নিজ হাতে কল্যাণের সব দরজা বন্ধ করে রেখে অন্যকে দোষ দিয়ে কী লাভ?

পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ ছিলেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা মৃত্যু অবধি পরপর তিনদিন পেটপুরে খেতে পারেননি। আর আমরা তার উম্মত হয়ে খাবার নষ্ট করে নবীর হাশরের মাঠে তার সুপারিশ কোন মুখে প্রত্যাশা করি?

সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মানুষদের এমন সময়ের মধ্যে যেতে হয়েছে, যখন ‘হাবালা’ গাছের পাতা ছাড়া তাদের আর কোনো খাবার ছিলো না। গাছের পাতা খাওয়ার ফলে তাদের মল আর ভেড়ার মলের কোনো পার্থক্য ছিলো না।

আল্লাহতায়ালার অশেষ শোকরিয়া যে, আল্লাহতায়ালা অামাদের খাবারের প্রাচুর্য দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালার নিয়ামত। কিন্তু খাবারের এই প্রাচুর্য যে আল্লাহর পরীক্ষা সেটা স্বীকার করতে চাই না।

আলেমরা বলেন, আপনি যদি কোরআনকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করে থাকেন; তাদের জন্য উচিৎ নয় কোনোভাবে খাবার নষ্ট করা। আপনি খাবার খেতে পারবেন না- সমস্যা নেই। আপনি সেটা নষ্ট না করে রেখে দিন। আপনি যত বড় সম্পদশালীই হোন না কেন, খাবার নষ্ট করার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি।

মনে রাখবেন, পৃথিবীর মানুষের ভালোবাসা না পেলেও জীবন কাটিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু পৃথিবীর মালিক, আমার-আপনার জীবনদাতা আল্লাহর ভালোবাসা না পেলে ধ্বংস অনিবার্য। আর আল্লাহ কোনো অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘন্টা, মে ১২, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।