ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

তওবা মানুষের মর্যাদা বাড়ায়

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৫
তওবা মানুষের মর্যাদা বাড়ায়

তওবা ইসলামের সর্বাধিক পরিচিত ও প্রসিদ্ধ পরিভাষাসমূহের অন্যতম একটি। নামাজ শেষে আসতাগফিরুল্লাহ বলা এবং কোনো অপরাধ বা গর্হিত কাজ হয়ে গেলে আসতাগফিরুল্লাহ- বলা এ অঞ্চলের মুসলমানের সাধারণ অভ্যাস।

আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ হলো, আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

অন্যদিকে তওবা শব্দের অর্থ ফিরে আসা। কোরআন এবং হাদিসে শব্দটি আল্লাহর নিষেধকৃত বিষয়সমূহ ত্যাগ করা ও তার আদেশকৃত বিষয়সমূহর দিকে ফিরে আসা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ইসলাম মতে শব্দটি নিজের কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তা পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্পকে বোঝায়। তওবার প্রাথমিক স্তর হলো আসতাগফিরুল্লাহ বলা।

তবে তওবার ক্ষেত্রে শুধু মুখের এমন উচ্চারণ যথার্থ তওবা নয়। বিষয়টি অনেকেই জানেনও না। আর সে কারণেই দেখা যায়, পাপাচার অনেক মানুষের জীবনের সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বস্তুত শয়তানের প্রতারণায়, নফসের প্রবঞ্চনায় কিংবা পার্থিব মোহে কোনো মুসলমান দ্বারা পাপের কাজ হতেই পারে। তাই বলে পাপাচার কোনো মুসলমানের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হবে এটা মেনে নেয়া যায় না।

মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হলো, কদাচিৎ তার দ্বারা পাপের কাজ সংগঠিত হলে সে তওবা না করা পর্যন্ত মানসিকভাবে স্থির হতে পারবে না।

অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন, তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে তওবা পরিপূর্ণ হয়। যথা-
ক. পাপের কারণে আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টি এবং নিজের পরকালীন যে ক্ষতি হয়েছে তার পূর্ণ উপলব্ধি থাকা, খ. কৃত অন্যায় তথা পাপের জন্য লজ্জিত হয়ে পুনরায় পাপ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা ও গ. আল্লাহতায়ালার কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

তওবার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যদি পাপের কাজটা কোনো মানুষের অধিকার সংশ্লিষ্ট হয়- তাহলে অবশ্যই যার হক বা অধিকার হরণ করা হয়েছে কিংবা নষ্ট করা হয়েছে; তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এভাবে তওবা করলে আল্লাহর দরবারে সেই তওবা কবুল হবে বলে আশা করা যায়। এমন তওবাকারীকে আল্লাহতায়ালাও ভালোবাসেন।

তওবার শর্তসমূহ পূরণ করে তওবা করলে গুনাহ করার আগে আল্লাহর কাছে বান্দার যে মর্যাদা ছিল, তওবা করার পর তার মর্যদা পূর্বাপেক্ষা আরও বাড়ে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে। ’ -সূরা আন নূর : ৩১

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো উট বিরান মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পরে ফিরে পেলে সে যতটুকু খুশি হয়, আল্লাহতায়ালা তার কোনো বান্দা তওবা করলে তার থেকেও বেশি খুশি হন। ’ -বোখারি ও মুসলিম

গুনাহ করলেই শুধু তওবা করতে হবে বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। বরং গুনাহ না করেও তওবা করা যায়। বলা হয় এটা অত্যন্ত উত্তম এক আমল। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খুব বেশি বেশি তওবা করতেন; অথচ তার জীবনে কোনো গুনাহ ছিল না।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর শপথ আমি দৈনিক সত্তরবারের বেশি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই ও তওবা করি। -বোখারি

অন্য এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও ও তওবা কর । আমি প্রতিদিন একশ’বার তওবা করি। -মুসলিম

তওবার ক্ষেত্রে আত্মার বিনয়ই কিন্তু প্রধান বিষয়। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমরা আন্তরিকভাবে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। -সূরা আত তাহরিম : ৮

অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন, রাতের গভীরে আল্লাহতায়ালার নিকট আত্মার বিনয়টা বেশি নিবেদন করা যায়। সে জন্য বুজুর্গরা রাতের শেষভাগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের পর তওবা-ইস্তেগফারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তবে রাতেই শুধু তওবা করতে হবে- এমন কোনো বাধ্য-বাধকতাও নাই। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সারারাত তার কুদরতি হাত প্রসারিত করে রাখেন, যাতে দিনের গুনাহগার তওবা করে। আর দিনের বেলায় তিনি তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করে রাখেন, যাতে রাতের গুনাহগাররা তওবা করে। এভাবে পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত (কিয়ামত পর্যন্ত) করতে থাকবেন। -মুসলিম

আল্লাহতায়ালা রহমান ও রাহিম। তাই বান্দা তওবা করলে তিনি ক্ষমা করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে অবশ্য অবশ্যই ক্ষমালাভের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। মৃত্যুর আগ পূর্ব পর্যন্ত তওবার দরজা খোলা। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বান্দার তওবা কবুল করতে থাকবেন- তার মৃত্যু লক্ষণ প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত। -তিরমিজি

কিছু মানুষ এমন আছেন, যারা অবলীলাক্রমে পাপের কাজ করতে থাকেন আর বলেন, ‘আল্লাহ রহমান ও রাহিম- তিনি তো ক্ষমা করবেনই। ’ এমন মনোভাব ভালো না। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, যে ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহর ভয় নাই, যে আল্লাহর পরাক্রমের কথা চিন্তা করে না, যে জান্নাতের আশা করে না, জাহান্নামের শাস্তির ভয় করে না- মহান আল্লাহ তাকে ক্ষা করবেন এমনটা আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। বরং আত্মার গভীর অনুতাপ ও মনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছাড়া তওবাটাই একটা পাপ।

লেখক : খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ, রাজশাহী

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘন্টা, জুন ০৯, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।