ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

‘আজ পবিত্র শবেকদর’

হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত আপনি যেভাবে চিনবেন

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত আপনি যেভাবে চিনবেন

আজ সূর্যাস্তের পর শুরু হবে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ও মহিমান্বিত শবেকদর। যদিও কোথাও স্পষ্ট করে বলা নেই শবেকদর সম্পর্কে।

তবে আলেম ও বুজুর্গরা আজকের রাত শবেকদর হওয়ার ব্যাপারে বেশি মত ব্যক্ত করেছেন। মূলত রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবেকদর রয়েছে বলে বর্ণনা রয়েছে। তাই রমজান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সম্ভাবনা থেকেই যায়। ফলে অবহেলা না করে রমজানের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাতের আশায় ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা দরকার। এ লক্ষ্যেই রোজার শেষ দশকে মানুষ মসজিদে ইতিকাফে বসে থাকে। শবেকদর সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখল তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় কদরের রাতে (ইবাদতে) দাঁড়াল তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। -সহিহ বোখারি

কোরআনে কারিমে শবেকদরকে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সুতরাং এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করলে হাজার রাতের চেয়ে বেশি ফজিলত অর্জিত হবে- এটা বলা যায় নিঃসেন্দহে। আলেমরা কোরআন-হাদিসের আলোকে বলেছেন, পাঁচ রাতে ইবাদত-বন্দেগির ফজিলত বেশি। এগুলো হলো- শবেকদর, দুই ঈদের রাত, জুমার রাত এবং শবেবরাত। শবেকদর যেহেতু কোরআন নাজিলের রাত হিসেবে পছন্দ করা হয়েছে, সে জন্য এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার ফজিলত সবচেয়ে বেশি।

তবে এ রাতের আমলের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও তাসবিহ পাঠের কথা বলা হয়েছে। তাহাজ্জুদের নামাজ ছাড়া অন্যান্য নফল নামাজ যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যেতে পারে। যেহেতু নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে, সুতরাং এ রাতে জীবনের কাজা নামাজ আদায় করাই উত্তম। তবে মনে রাখতে হবে, কোনো ইবাদত যেন লোক দেখানো না হয়। লোক দেখানো ইবাদত শিরকের সমতুল্য। ইবাদত কম হলে আপত্তি নেই; তবে তাতে ইখলাস থাকা বাঞ্জনীয়। ইখলাস ছাড়া কোনো ইবাদত আল্লাহর দরবারে গ্রহণ করা হয় না।

সূর্যাস্তের পর শবেকদরের সূচনায় গোসল করা উচিত। আলেমরা গোসল করে মাগরিবের নামাজ আদায় করার কথা বলেছেন। বস্তুত পবিত্রতা অর্জন করে রাতের ইবাদতের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই গোসলের কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী মুসলমানরা তো এমনিতেই নামাজ পড়ার আগে অজু করে পবিত্রতা অর্জন করে থাকেন। কিন্তু গোসল করা হলো পবিত্রতার পাশাপাশি শারীরিক-মানসিক উভয় প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া। গোসল করলে একটা প্রশান্তি এবং প্রফুল্ল ভাব আসে, ক্লান্তি-শ্রান্তি দূর হয়ে যায়। ফলে ইবাদতে ভালোভাবে মনোনিবেশ করা যায়। তবে গোসলের যেসব ফজিলতের কথা বলা হয়, তা অতিরঞ্জিত।

আলেমরা শবেকদরে রাত জেগে স্বাভাবিক আমলের কথাই বলেছেন। রাত জেগে কষ্ট স্বীকার করে ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহতায়ালা বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দেন। হাদিসে বলা হয়েছে, বান্দার গুনাহের পরিমাণ যদি পর্বত পরিমাণ কিংবা আকাশের তারার মতো অগণিতও হয়, তবুও সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। তবে রাতজাগা মানে দৈহিক জাগৃতি নয় বরং অন্তরকে জাগ্রত রাখা। আর অন্তরকে জাগ্রত রাখার সর্বোত্তম উপায় হলো- কোরআন তেলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত বেশি বেশি করে করা। এ আমলগুলো খুব একটা কষ্টসাধ্য বিষয় নয়। আল্লাহতায়ালা যাদের শারীরিক সুস্থতা দিয়েছেন তাদের উচিত শবেকদরকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো।

কদরের রাতে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়স্বজনের জন্য, মৃতদের জন্য বেশি বেশি দোয়া-খায়ের করা দরকার। এ রাতে দরিদ্রদের মাঝে দান-খয়রাতও করা যেতে পারে। মৃত মা-বাবা কিংবা আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করা যেতে পারে। মোটকথা ইসলাম যেসব ইবাদতের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে, সবই করা যেতে পারে কদরের রাতে। উম্মদের প্রতি দয়ালু অনেক বুজুর্গ এ রাতের বেশ কিছু আলামতের কথা বলে গেছেন। আলামতগুলো হলো- এ রাতে আকাশ অন্যান্য দিনের তুলনায় পরিষ্কার থাকে, তারকারাজির উজ্জ্বলতা বেশি থাকে, নাতিশীতোষ্ণ ভাব থাকে, চারদিকে নীরব-নিস্তব্ধ ভাব থাকে।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রহমত, বরকত ও মাগফিরাত লাভের আশায় আজ সারা রাত ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে কাটাবেন।

এ মহিমান্বিত রাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহ ও দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘন্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এমএ

** শবেকদরের বিশেষ দোয়া
** শবেকদর আসলে কোন তারিখে?
** পবিত্র শবেকদরে যেসব ইবাদত করতে পারেন
** পবিত্র শবেকদরের বৈশিষ্ট্যসমূহ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।