ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৫
শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত

আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে মানবজাতিকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে একমাত্র তারই ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এমন অনেক পথ আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন এবং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের সামনে তা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন।

অল্প নেক আমলের বিনিময়ে আল্লাহর অসীম দয়া ও অনুগ্রহের পাত্র হওয়ার জন্য নবী করিম (সা.)-এর মুখ নিঃসৃত অমিয় বাণীতে প্রদত্ত উত্তম পন্থাসমূহ থেকে একটি অতি সহজ পন্থা হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা।

বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ছয়টি নফল রোজা রাখবে, তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সওয়াব দিয়ে দেবেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণবছরই রোজা রাখল। ’ -সহিহ মুসলিম: ১১৬৪

শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন সারাটি বছর রোজা রাখার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। একজন ব্যক্তি যখন রমজান মাসের রোজা রেখে তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসেও ছয়টি রোজা পালন করল, সে এই রোজার কারণে আল্লাহর দরবারে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব পেয়ে গেল। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান; এই হলো এক বছরের রোজা। ’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। ’ -আহমাদ: ৫/২৮০, দারেমি: ১৭৫৫

কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতাস্বরূপ শাওয়ালের ছয়টি নফল রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব। মাহে রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখার ফজিলত কতই না মহান! কারও পক্ষে সহজেই সম্ভব নয় এক বছর লাগাতার রোজা রাখা। অথচ এই নেক আমলটা বিরাট ফজিলত সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব। একদা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সারা বছর রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘নিঃসন্দেহে তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক বা অধিকার রয়েছে। ’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘মাহে রমজানের এবং তার পরবর্তী দিনগুলোরও প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখবে। সুতরাং যখন তুমি এই রোজাগুলো রাখবে তখন যেন তুমি সারাটা বছরই রোজা রাখলে। ’

বান্দার ওপর আল্লাহ কতই না পরম দয়ালু ও অশেষ মেহেরবান যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক সওয়াব দেবেন। বান্দা যখন আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়ে তার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সামান্যতম আমল তার দরবারে পেশ করে, আল্লাহ তখন বান্দার এই আমলকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর এ দয়া ও অনুগ্রহ বান্দা তখনই লাভ করবে, যখন বান্দা নেক আমল করবে। তাই বান্দা যেন আল্লাহর রহমতকে হাতছাড়া না করে, বরং অল্প নেক আমলের বিনিময়েই যেন সে আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও অশেষ অনুগ্রহের অধিকারী হয়ে যায়। সৎ কর্ম সম্পাদনের প্রতিফল সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ কোনো সৎ কর্ম করলে সে তার ১০ গুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে। ’ -সূরা আনআম: ১৬

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘অনন্তর কেউ অণু পরিমাণ সৎ কর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। ’ -সূরা জিলজাল: ৭-৮

কোনো কিছুতেই যাতে শাওয়ালের নফল রোজাগুলো ছুটে না যায় এবং কোনো ব্যস্ততাই যেন মানুষকে অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা মাসের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত পালন করা যাবে। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক, যেভাবেই হোক না কেন, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন, যদি আল্লাহর দরবারে রোজা কবুল হয়। তবে যার ওপর মাহে রমজানের রোজা কাজা আছে, সেই ব্যক্তি আগে কাজা আদায় করবে, তারপর শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা পালনে ব্রতী হবে। কারণ, ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মাহে রমজানের পূর্ণ রোজা রাখবে, আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ ওই রোজাগুলো কাজা আদায় না করে। ’ –আল মুগনি: ৪/৪৪০

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরজের আগে-পরে সুন্নত ও নফল প্রবর্তন করেছেন। যেমন- ফরজ নামাজের পূর্বাপর সুন্নতগুলো এবং মাহে রমজানের আগে শাবানের ঐচ্ছিক রোজা আর পরে শাওয়ালের নফল রোজা। এই নফল ইবাদতগুলো ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে। কারণ, রোজাদার কখনো অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি খারাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বাঁচতে পারে না, যা তার রোজার সওয়াব কমিয়ে দেয়। একজন মুমিন রোজাদার যদি মিথ্যাচার, পরচর্চা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতারণা, মুনাফেকি, অসাধুতা, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতিপরায়ণতা, আত্মকলহ, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি সামাজিক অনাচার-জাতীয় গর্হিত ও অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিহার করে আত্মসংযমী হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, সহিহ শুদ্ধভাবে ফরজ ও নফল রোজা পালন এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তওবা, ইস্তেগফার- এসব ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর একজন খাঁটি আবেদ বা প্রিয় মকবুল বান্দা হিসেবে গণ্য হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।