ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

কাল শুরু হচ্ছে বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দশ দিন

সাজ্জাদ শরিফ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
কাল শুরু হচ্ছে বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দশ দিন

কাল শুরু হবে হিজরি বর্ষের সর্বশেষ মাস জিলহজ। বরকতপূর্ণ এ মাসে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ পালিত হয়।

মর্যাদাপূর্ণ এই মাসের প্রথম দশ দিনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে কারিমে জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতের কসম খেয়েছেন আল্লাহতায়ালা।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘কসম ভোরবেলার এবং কসম দশ রাতের। ’

হজরত ইবনে আব্বাস, হজরত ইবনে জুবায়ের, হজরত কাতাদা এবং হজরত মুজাহিদ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] প্রমুখ তাফসিরবিশারদের মতে, ‘দশ রাত’ বলতে জিলহজের প্রথম দশ রাতকে বোঝায়। এর প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমান এবং প্রত্যেক রাতের ইবাদত শবেকদরের রাতের ইবাদতের সমতুল্য। ‍

হাদিসে আছে- ‘হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই যার আমল জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চাইতেও কি বেশি প্রিয়? রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, জিহাদ করা থেকেও বেশি প্রিয়। তবে যদি এমন হয়, যে ব্যক্তি জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হলো এবং এর কিছুই ফেরত নিয়ে এলো না।

অপর হাদিসে এসেছে- ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন- এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবির (আল্লাহু আকবার) এবং তাহমিদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে আদায় করো।

বর্ণিত হাদিসগুলোর মর্মার্থ হলো- সারা বছর সব মর্যাদাপূর্ণ দিনের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো এই দশ দিন। এই দশ দিনের প্রতিটি দিন হলো সর্বোত্তম দিন। তাই আল্লাহর নবী (সা.) এই দশ দিন বেশি বেশি আমল করার জন্য উত্সাহিত করেছেন। নবীজী (সা.) এই দশ দিন বেশি বেশি তাহলিল এবং তাকবির পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনেও এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

কোরআনে এসেছে- ‘যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানগুলোতে হাজির হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। এরপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও। ’ -সূরা হজ:২৮

আয়াতে বর্ণিত নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে কোন দিনগুলোকে বোঝানো হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ইমাম বোখারি (রহ.) বলেন- ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এই ‘নির্দিষ্ট দিনগুলো’র মাধ্যমে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের কথা বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও জিলহজ মাসের এই প্রথম দশ দিনে রয়েছে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতময় দুটি দিন। একটি হলো আরাফার দিন এবং অপরটি কোরবানির দিন।
আরাফার দিন ক্ষমা ও মুক্তিলাভের দিন। এই দিনে আল্লাহতায়ালা অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করে থাকেন। আর এই দিনের রোজা দু’বছরের গোনাহ মাফের কারণ, অর্থা‍ৎ এদিন রোজা রাখলে পূর্বাপর দুই বছরের গোনাহ মাফ হয়ে যায়।

যেমন হাদিসে এসেছে- ‘হজরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন- আরাফার দিনের রোজা বিগত এক বছরের গোনাহ এবং আগত এক বছরের গোনাহ মাফ হবে বলে আল্লাহতায়ালার কাছে আমার প্রত্যাশা।

সুতরাং দিনগুলোর আমল আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়। তাই আমাদের অঙ্গীকার হবে এই যে, রিপুর মায়াবি আবদার, ভোগের লালসাকে পরাজিত করে ইবাদত ও আমলের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের পাশাপাশি পরকালীন ক্ষমা ও মুক্তি লাভ করি। আর কোরবানির দিনে ইবরাহিমি ত্যাগের আহবে ঝলসে উঠে অর্জন করে নেই মর্যাদাপূর্ণ আসনের অভিধা। তবেই তো আমাদের জীবন সার্থক হবে। হবে চির সফল। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সেই সুবর্ণ সুযোগ দিন।



বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।