ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামে জীব-জন্তু ও প্রাণীকুলের অধিকারও স্বীকৃত

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
ইসলামে জীব-জন্তু ও প্রাণীকুলের অধিকারও স্বীকৃত

প্রাণিকুলের অধিকার রক্ষা ও তাদের কল্যাণার্থে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ অক্টোবর পালিত হয় ‘বিশ্ব প্রাণী দিবস’। ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে ১৯৩১ সালে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এক সম্মেলনে দিবসটি ঘোষণা করা হয়।



অনেকেই মনে করেন, হাল সময়েই কেবল পশু-প্রাণীর অধিকারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিষয়টি তেমন নয়। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মানবতার ধর্ম ইসলামেরও রয়েছে বিশাল ভূমিকা। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পশু-প্রাণীর অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন। জীব-জন্তু ও পশু-পাখি সংরক্ষণ এবং তাদের অধিকারের ব্যাপারে নবী করিম (রা.)-এর ব্যাপক দিকনির্দেশনা রয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, পশু-পাখি ও জীব-জন্তু আল্লাহতায়ালার অনন্য দান ও নিয়ামত। আল্লাহতায়ালা মানুষের উপকার ও সুবিধার জন্য এসব সৃষ্টি করেছেন। তাই এসবের কোনো ক্ষতি করা চলবে না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। ’ -সূরা বনি ইসরাইল: ৭০

ইসলাম জীব-জন্তু সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। অযথা কোনো পশুকে হত্যা বা উচ্ছেদ করতে নিষেধ করেছে। নবী করিম (সা.) জীব-জানোয়ারকে লক্ষ্য বানিয়ে তার দিকে তীর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে আছে, একদা ইবনে ওমর (রা.) কোরাইশের কিছু যুবকের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, যুবকেরা পাখি ও মুরগিকে তাক করে (তীর নিক্ষেপ করে) লক্ষ্যবস্তুতে সঠিকভাবে আঘাত করার বিষয়ে প্রতিযোগিতা করছে। যখন তারা ইবনে ওমরকে দেখল, দৌড়ে পালাল। তখন ইবনে ওমর তাদের লক্ষ্য করে বললেন: ‘আল্লাহর রাসূল (সা.) যারা প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানায় তাদের অভিশাপ করেছেন। ’ –সহিহ মুসলিম

পশু-পাখি সঠিকভাবে লালন-পালনের জন্যও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ইসলামে। এ সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা হাদিসে এসেছে, ‘এক মহিলাকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে একটি বিড়ালকে আটক রেখে খাবার ও পানি না দেওয়ার কারণে। যদি সে বিড়ালটিকে ছেড়ে দিত তাহলে পোকা-মাকড় খেয়ে হলেও বাঁচতে পারত। ’ –সহিহ বোখারি

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর পাশ দিয়ে কোনো বিড়াল হেঁটে গেলে তিনি তাকে পানির পাত্র এগিয়ে দিতেন এবং বিড়াল তা থেকে পান করত। ’ -দারে কুতনি

আরেক হাদিসে এসেছে, ‘একদা এক ব্যক্তি হাঁটতে হাঁটতে পিপাসার্ত হয়ে গেল। অতঃপর লোকটি একটি কূপে নেমে পানি পান করে আসতেই একটি কুকুরকে পিপাসায় কাতরাতে দেখলেন; দেখলেন কুকুরটি তৃষ্ণায় ভিজা মাটি খাচ্ছে। তখন তিনি মনে মনে বললেন: কুকুরটির আমার মতোই পিপাসা লেগেছে, অতঃপর তিনি আবারও কূপে নেমে জুতায় পানি ভরে; পানিসহ জুতা মুখে করে উপরে এসে কুকুরটিকে পানি পান করালেন। অতঃপর আল্লাহ তার ওপর খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, পশুর মধ্যেও কি আমাদের কোনো পুণ্য আছে? নবী (সা.) বললেন, প্রত্যেক প্রাণের মধ্যেই প্রতিদান রয়েছে। ’ –সহিহ বোখারি

অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, একদা নবী করীম (সা.) একটি উটের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, উটটির পেট পিঠের সঙ্গে লেগে গেছে। তখন নবী (সা.) বললেন, এই অবোধ পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। সবল অবস্থায় এর পিঠে আরোহণ কর এবং সবল অবস্থায় একে ভক্ষণ কর। ’ –সুনানে আবু দাউদ

হালাল যেসব পশুর গোশত খাওয়ার অনুমতি ইসলাম দিয়েছে, সেগুলো জবাই করার সময় পশুর সঙ্গে সদয় আচরণ ও দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে। ইসলাম বলেছে, এগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুন্দরভাবে জবাই করতে হবে, যাতে তাদের কষ্ট কম হয়।

পক্ষান্তরে যেসব পশু হিংস্র ও মানুষের ক্ষতি করে সেসব পশুকে সুন্দরভাবে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই ওই সব পশুকে কষ্ট দিয়ে মারা যাবে না। এগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে মারা যাবে না।

হাদিসে এসেছে, ‘ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি একটি ভেড়া জবাই করার জন্য শোয়ানো অবস্থায় রেখে চাকুতে ধার দিচ্ছিলেন। তখন নবী (সা.) বললেন, তুমি কি পশুটিকে দু’বার মারতে চাও? তুমি কি পশুটিকে শোয়ানোর আগে চাকুতে ধার দিয়ে নিতে পারতে না?

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। নবী (সা.) তার হাজত (প্রাকৃতিক প্রয়োজন) পূরণের জন্য গেলে আমরা একটি পাখিকে দুটি ছানাসহ দেখতে পেলাম এবং আমরা পাখির বাচ্চা দুটি নিয়ে এলাম। এ অবস্থায় পাখিটি বাচ্চা দুটির মায়ায় আমাদের পিছু নিল এবং ডাকাডাকি করছিল। নবী (সা.) হাজত থেকে ফিরে এ দৃশ্য দেখে বললেন, কে এদেরকে পিতা-মাতা থেকে ছিন্ন করে ভীতির মধ্যে ফেলে দিল, যাও বাচ্চা দুটিকে তাদের পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দাও। ’

কোনো পশু রোগাক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত চিকি‍ৎসার বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে পৃথক রাখতে বলা হয়েছে। যাতে করে অন্য পশু রোগাক্রান্ত না হয়।

এভাবেই ইসলাম পশু-পাখি ও প্রাণীর বিষয়ে নানা দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। তাই এসবের প্রতি উত্তম ও দয়ার্দ্র ব্যবহার কাম্য। এসব ইসলামের শিক্ষাও বটে।



বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
এমএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।