ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মুফতি আবদুর রহমানের জানাযা সকাল ১০টায় বসুন্ধরা কেন্দ্রীয় মসজিদে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
মুফতি আবদুর রহমানের জানাযা সকাল ১০টায় বসুন্ধরা কেন্দ্রীয় মসজিদে

ঢাকা: মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯১ বছর।



মরহুমের নামাজে জানাযা বুধবার সকাল ১০টায় বসুন্ধরা কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে বসুন্ধরা নতুন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

মুফতি আবদুর রহমান ১৯২৫ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ইমামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম চাঁন মিয়া।

তিনি নাজিরহাট ও হাটহাজারি মাদ্রাসায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। উচ্চমাধ্যামিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। ১৯৫০ সালে সেখানে কওমি মাদরাসা পাঠ্যক্রমের সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন।

দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের তিনি প্রথম ডিগ্রি লাভকারী মুফতি।

দেশে ফেরার পর পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র আল-জামিয়া আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতি আজিজুল হক (রহ.) এর আহবানে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে তাঁর কর্ম জীবনের শুভসূচনা করেন।

১৯৬২ সালে তিনি উত্তরবঙ্গ গমন করেন। সেখানে জনসাধারণকে নিয়ে বহু মসজিদ ও মাদরাসা, মক্তব ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করে নবপ্রজন্মের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। সেখানকার সর্বজন পরিচিত ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়া কাসেমুল উলুম জামীল মাদরাসা হযরত ফকিহুল মিল্লাত এর সর্বাত্মক চেষ্টারই ফসল।

মৃত্যুর আগে তিনি দেশের প্রায় ১৮টি উত্তরাঞ্চলীয় জেলার সহস্রাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত তানযীমুল মাদারিস আদ্বীনিয়্যা বাংলাদেশ (উত্তরবঙ্গ) এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

সুদীর্ঘ ছয় বছরের মিশন শেষে ১৯৬৮ সালে তিনি আল জামিয়া পটিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেখানে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পুরোদমে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি একাধারে জামিয়ার প্রধান মুফতি, সহকারী মহাপরিচালক ও শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দাওরায়ে হাদিসে সর্বোচ্চ কিতাব বোখারি শরিফের ১ম খণ্ডের পাঠদান করেন।

আল জামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালক থাকাকালে তিনি দেশব্যাপি একশ’ সদস্য বিশিষ্ট ইফতা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সময় তিনি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রাখেন। তিনি সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিরুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন।

আরব বিশ্ব তথা দুবাই, বাহরাইন, কাতার ইত্যাদি রাষ্ট্র এবং ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বড় বড় ইসলামি অর্থনৈতিক সেমিনারে তিনি যোগ দেন। এসব সেমিনারে ইসলামি অর্থনীতির উপর তাঁর গবেষণালব্ধ বিভিন্ন প্রবন্ধ খুবই সমাদৃত হয়।

ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরায় তিনিই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে ইসলামি অর্থনীতি ও ইসলামি ব্যাংকিং বিভাগ চালু করেন। ইসলামি ব্যাংকিং ও অর্থনীতিকে এদেশের আলেম, ওলামা ও মাদরাসা পড়ুয়াদের মধ্যে বিস্তৃতির জন্য বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক সেমিনারেরও আয়োজন করেন তিনি।

তাঁর উদ্যোগে ২০০২ সালে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকাতে পক্ষকালব্যাপি এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

২০০৬ সালে ১৫ দিন ব্যাপি এক অর্থনৈতিক কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন করেন তিনি। এ কর্মশালা ও সেমিনার বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের ইসলামি অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে বহুদুর এগিয়ে দেয়। এ বিষয়ে তাঁদের উৎসাহ ব্যাপকভাবেই বৃদ্ধি পায়।

হযরত ফকিহুল মিল্লাত আমৃ্ত্যু আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত হন। দীর্ঘদিন তিনি  সেন্ট্রাল শরীয়া বোর্ড ইসলামিক ব্যাংকস-এর ভাইস চেয়ারম্যানের পদ অলংকৃত করেন।

১৯৯০ সালে হযরত ফকিহুল মিল্লাত আধ্যাত্মিক জ্ঞানে পরিপূর্ণতার দিকে মনোনিবেশ করেন। খুব কম সময়ে তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সকল স্তর অতিক্রম করে যুগ শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ পীরে কামেল শাহ আবরারুল হক সাহেব (রহ.) হতে খেলাফতপ্রাপ্ত হন।

১৯৯১ সালে তিনি রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী উচ্চ শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। নাম দেন মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী। এটি বর্তমানে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত।

২০০৪ সালে তিনি বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় জামিআতুল আবরার নামে আর একটি প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। বছরখানেকের ভেতর প্রতিষ্ঠানটি একটি বৃহৎ শিক্ষাকেন্দ্রে রূপ নেয়।

ফকিহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে তাঁর একটি সেবামূলক সংস্থা রয়েছে। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

তাঁর অবস্থান ছিলো জঙ্গিবাদ বিরোধী। তিনি সবসময়ই বলতেন, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।

বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের শোক
ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমানের মৃত্যুতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি তার বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৫
এমএ/জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।