ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

জাতির ভবিষ্যৎ শিশুর যথাযথ বিকাশের ওপর নির্ভরশীল

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৫
জাতির ভবিষ্যৎ শিশুর যথাযথ বিকাশের ওপর নির্ভরশীল

আজ ২০ নভেম্বর, সর্বজনীন শিশু দিবস। ১৯৮৯ সালে দিনটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে।

সারাবিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়। পৃথিবীর সব ধর্ম ও আইনে শিশুর সর্বজনীন অধিকারের কথা বলা আছে। তারপরও নানাভাবে আমাদের দেশসহ বিশ্বে শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে। তাই তো শিশু শব্দের সঙ্গে শিশুশ্রম, শিশু নির্যাতন, শিশু পাচার ইত্যাদিও যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় পৃথিবীর সব শিশুর যথাযথ যাবতীয় অধিকার প্রদানে সবাইকে সচেতন করাই দিবসটির লক্ষ্য।

মানবতার ধর্ম ইসলাম শিশুদের অধিকার ও কল্যাণের বিষয়টি অন্যসব বিষয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখে। ইসলাম শিশু-কিশোরদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশকে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। শিশু-কিশোরদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার মাধ্যমে গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে গিয়ে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, ‘শিশু কিশোরদের জন্য তার পিতার পক্ষ হতে সবচেয়ে বড় উপহার এটাই যে, তিনি তাদের যথাযথ বড় করে গড়ে তুলবেন। ’

এ হাদিসে আলোকে বলা চলে, শিশু-কিশোরদের লালন-পালন ও যথাযথ গঠন ইসলামে অতি জরুরী কাজ। যা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর বর্তায়। তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম মনে করে শিশুদের উন্নত ও যথাযথ বিকাশের ওপরই একটি মর্যাদাশীল জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল।

এ কথা বলা অনাবশ্যক যে, শিশুদের ভালোভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব তাদের পিতা-মাতার। কিন্তু আজকাল কিছু কিছু পিতা-মাতা শিশুদের ভরণ-পোষণ এবং লালন-পালনকে বোঝা বলে মনে করে। পবিত্র কোরআনে কারিম ও হাদিসে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও অনেক মুসলিম পরিবার বিষয়টির প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয় না। অনেকে আবার এটিকে তাদের জীবন বিধানের অতি প্রয়োজনীয় বিষয় বলেও ভাবতে পারে না। সকল মুসলমানের ক্ষেত্রে এটি সত্যি না হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্যি। এমন মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য নয়।

শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শিশুদের অত্যধিক ভালোবাসতেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার মুসলিম মিল্লাত এ জন্য অন্যদের চাইতে শ্রেষ্ঠ যে তারা শিশুদের অধিক ভালোবাসতেন। ’ তাই শিশুদের অধিকারের বিষয়টিকে প্রধান দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

ইসলামি দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের অভিমত হলো, শিশুর মানসিক ও ধর্মীয় বিকাশে পিতা-মাতা অবশ্যই সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন। নবী করিম (সা.) তাই তাগিদ দিয়েছেন, যেন পিতা-মাতা শিশুর সাত বছর বয়স থেকে তারা তাকে নামাজের তাগিদ দিবেন। আর দশ বছর বয়স থেকে শিশু-কিশোরেরা যদি নামাজ পড়তে শুরু না করে তা হলে তাদের শাস্তি প্রদানেরও নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)।

উল্লেখ্য, পিতা-মাতা ততক্ষণই শিশু-কিশোরদের কল্যাণের দায়িত্ব পালন করবেন যতক্ষণ না তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয় অর্থাৎ তারা নিজের পায়ে দাঁড়াবার শক্তি অর্জন করে। তারপর পিতা-মাতা তার সন্তানদের সাধারণ ভরণপোষণ, খাবার, আশ্রয় এবং আলাদা থাকার ব্যবস্থা করবেন এবং তাদের নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা করবেন।

হাদিসে নবী করিম (সা.) প্রতিটি ঈমানদার মানুষের ওপর জ্ঞানার্জনকে অত্যাবশকীয় করেছেন। তাই শিশুদের শিক্ষিত করে তোলা আমাদের বিরাট এক দায়িত্ব। শিশুদের শিক্ষা শুরু হয় তার পরিবারের পিতা-মাতার কাছ থেকে। তাই পিতা-মাতার কাজ হচ্ছে শিশুর শিক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা এবং প্রথমে তাকে কোরআন শিক্ষা দেয়া। এতে শিশু এমনভাবে বেড়ে উঠবে যাতে ইসলামই সব সময় তার জীবনের অংগ হয়ে থাকবে। তারা কোনোভাবে বিভ্রান্ত হবে না। কেননা তার শিক্ষার আলোই তাকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করবে।

ইসলাম চায় প্রত্যেক পিতা-মাতা তার দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হোক এবং আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুক। একটা শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সে কতটা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে গড়ে উঠছে তার ওপর। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ ও সুস্থ জীবনের খাতিরে তাদেরকে ইতিবাচক ও গঠনমূলক মানসিকতা নিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এটা কোনো সাধারণ কর্তব্য নয়। এ দায়িত্ব ও কর্তব্য মহান আল্লাহতায়ালার প্রদত্ত একটি বড় জরুরী ও পবিত্র দায়িত্ব। এটা হেলাফেলার বিষয় নয়।



বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।