ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বাংলানিউজকে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম।

দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের অন্যতম। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক, বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘সীরাত বিশ্বকোষ’ প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সম্পাদনা করছেন মাসিক পাথেয়। এখনও তিনি লেখালেখিতে সরব। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি পূর্ণাঙ্গ, তথ্যসমৃদ্ধ ও সহজপাঠ্য একটি জীবনীগ্রন্থ রচনার। এ লক্ষে তিনি কাজ শুরুও করে দিয়েছেন। চলতি রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে নবী জীবনের নানাদিক নিয়ে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। আলাপাচারিতায় ছিলেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ আতাউর রহমান খসরু

বাংলানিউজ: মুমিন জীবনে সিরাত চর্চার গুরুত্ব ও তাৎপর্য কী?
মাওলানা মাসউদ: হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশ্বাস ঈমানের অন্যতম প্রধান অংশ। একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মুমিন হতে হলে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান আনতে হবে। কেননা আল্লাহর প্রতি মানুষের ঈমান তখনই গৃহিত হবে, যখন তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত গুণাবলীর অনুরূপ হবে। এর বাইরে মুমিন জীবনে আর কিছু থাকতে পারে না।

বাংলানিউজ: এখানে ঈমান ও জীবন বলে দুটি বিষয় এসেছে। এর মাঝে কোন ক্ষেত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চর্চা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
মাওলানা মাসউদ: দুটোকেই গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। কেননা মৌলিকভাবে বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে মানুষের জীবনচর্চা হয়। বিশ্বাস মানুষের জীবনচর্চাকে পরিচালনা করে। আবার কেবল বিশ্বাসের মধ্যেই যদি আটকে থাকি এবং আমার জীবনচর্চায় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না আনি, তবে আমার বিশ্বাস ও বিশ্বাসের উদ্দেশ্য অপূর্ণ থেকে গেলো।

বাংলানিউজ : আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ’- এ আয়াতের তাৎপর্য কতোটা বিস্তৃত?
মাওলানা মাসউদ: দেখুন, আয়াতে বর্ণিত ‘তোমাদের’ শব্দটি শুধু মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলা হয়নি। এর দ্বারা গোটা মানবতাকে সম্বোধন করা হয়েছে। বস্তুত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মানবতার জন্য অনুকরণীয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচর্চা একজন মুমিনের জন্য যেমন আবশ্যক, ঠিক তেমনি মানবতাকে যদি মানবতার সঠিক মাপকাঠিতে নিয়ে আসতে হয়; তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ-অনুকরণ আবশ্যক। তিনি দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের জন্য আদর্শ। একজন মানুষ যদি ঈমানের সঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করে, এর দ্বারা তার যেমন আখেরাতের সাফল্য অনিবার্য, তেমন আখেরাতের সাফল্যও অনিবার্য। আর কেউ যদি ঈমান ছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জাগতিক জীবনের অনুসরণ করে, তবে সে জাগতিক জীবনে সাফল্য পাবে।

বাংলানিউজ : হাদিসে এসেছে, ‘যতোক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয় না হবো, ততোক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না। ’ বর্ণিত হাদিসের আলোকে মুমিন জীবনে নবীপ্রেমের প্রতিফলন কেমন ও কীভাবে হওয়া উচিৎ?
মাওলানা মাসউদ: মৌলিকভাবে প্রেমই তার প্রেমাষ্পদের অনুসরণ করতে। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের ওপর একজন মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন সার্বিক সাফল্য নির্ভর করে। তাই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসাই তাকে প্রথমেই ধারণ করতে হবে। কাউকে ভালোবাসতে না পারলে তার অনুসরণ করা সম্ভব হয় না।

যথার্থ নয়, তবুও বলছি। ফরহাদ শিরিনকে ভালোবাসতো বলেই পাহাড় কাটার বিষয়টা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। ভালোবাসা সব কঠিন কাজকে সহজ করে দেয়। ভালোবাসা না থাকলে সহজটাও কঠিন হয়ে যায়। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা শুধু ঈমানের পূর্ণতার জন্য নয়; বরং তার বাস্তবায়নের জন্য আবশ্যক।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন। পরিপূর্ণ মানুষের মডেল ও আদর্শ ছিলেন। সুতরাং তার ভালোবাসা ও আদর্শের প্রতিফলন জীবনের সর্বত্র ঘটাতে হবে। যে ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটলো না, বুঝতে হবে সে ক্ষেত্রে ভালোবাসায় খাঁদ রয়েছে।

বাংলানিউজ: আল্লাহতায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত বলেছেন। তিনি বিশ্বজগতের জন্য রহমত কেন?
মাওলানা মাসউদ: প্রথম কথা হলো, আমার মালিক আল্লাহতায়ালা তাকে রহমত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং এখানে কেন প্রশ্নটাই আসে না। বলা যেতে পারে, কীভাবে? প্রথমত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শটাই রহমতের এবং শান্তির। কেউ যদি বিশ্লেষণ ও গবেষণা করে, তবে দেখা যাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গোটা জীবনে যে আচরণ ও কাজ করেছেন তার পুরোটাই শান্তির ও আদর্শের। এ ক্ষেত্রে এর চেয়ে উত্তম কিছু হতে পারে না।

আমি আগেই বলেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র মানবতার জন্য আবশ্যক। তাই কেউ যদি আল্লাহর রহমত পেতে চায়, তবে তাকে আল্লাহর করুণা ও রহমতের আধারের নিকট যেতে হবে। আল্লাহতায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রহমত ও করুণার আধার বানিয়েছেন।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশে সিরাতচর্চার সমস্যা, সঙ্কট ও সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন?
মাওলানা মাসউদ: সম্ভাবনা তো প্রচুর। কারণ বাংলাদেশের মানুষের যে প্রকৃতি-স্বভাব তা মৌলিকভাবে সিরাতানুকূল। যখন কোনো সিরাত মাহফিল করা হয়, তখন হাজার হাজার মানুষ; কোথাও লাখো মানুষ উপস্থিত হয়ে যায়। ধর্মীয় অনুভূতির বাইরেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামটাই এমন যে, তা মানুষের মনে কৌতুহল জাগায়। সে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেনো।

সেই সঙ্গে সঙ্কটও অসংখ্য। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসি বটে, কিন্তু তাকে জানতে চাই না। এই অনাগ্রহই প্রধান সঙ্কট। চাহিদা থাকলে তা পূরণের জন্য অনেক কাজ হয়, অনেক উদ্যোগ তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এটা হচ্ছে না।

আমি মাফ চেয়ে বলবো, মাদরাসায়ও এর প্রচুর ঘাটতি রয়ে গেছে। আমরা জানি, মাদরাসা শিক্ষার উল্লেখযোগ্য একটা অংশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচর্চার বিষয়টি একমাত্র বিষয়। সেখানেও দেখা যায় নবীকে জানার আগ্রহ খুবই কম। আলেম-উলামাদের মাঝেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানার আগ্রহ ও প্রয়াস কম। এবার আপনারাই সাধারণের অবস্থা এখান থেকে বুঝে নিতে পারেন।

দ্বিতীয় সঙ্কট হলো, পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব। বাংলা ভাষায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন সম্পর্কে ব্যাপক ও বিস্তৃত তথ্যবহুল গ্রন্থ এখনো রচিত হয়েছে বলে মনে হয় না। এটা আমি আমার ক্ষুদ্র পড়াশোনা থেকে বলছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানার প্রাচীন ও প্রাথমিক সোর্সগুলো আমাদের দেশের গ্রন্থাগারগুলোতে পাওয়া যায় না। আমাদের সংগ্রহেও নেই। এমনকি ইসলামিক ফাউন্ডেশন লাইব্রেরি যেটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি, সেখানে মৌলিক সোর্সের সংখ্যা খুবই কম।

তৃতীয়ত সঙ্কট গবেষণা কর্মের অভাব। জাতি হিসেবেই বোধহয় আমরা গবেষণা কর্মের প্রতি উদাসীন। খেলাধুলা বা খেলোয়াড়দের জন্য স্পন্সর পাওয়া যায়, কিন্তু উন্নয়নের মূলমন্ত্র- কোনো গবেষণা কাজের জন্য স্পন্সর পাওয়া যায় না। আর সিরাত গবেষণার ক্ষেত্রে এটা তো প্রায় শূণ্যের কোটায়। গবেষণার জন্য একজন গবেষককে মেধা, সময় ও শ্রম সবকিছুই ব্যয় করতে হয়। তাকে যদি আবার পেছনে ফেরা লাগে, তাহলে সে কীভাবে গবেষণা করবে? অামার দৃষ্টিতে সিরাতচর্চায় এটি একটি বড় বাঁধা।

বাংলানিউজ: বিশ্ব সাহিত্যে বিশেষত আরবি ও বাংলা সাহিত্যে সিরাত সাহিত্যের অবদান কতোটুকু?
মাওলানা মাসউদ: আমার ক্ষুদ্র পড়াশোনা ও জানা মতে, প্রাচীন ও আধুনিক আরবিতে সাহিত্যে মানসম্পন্ন সিরাত বিষয়ক বিপুল ও সমৃদ্ধ সম্ভার রয়েছে। এক্ষেত্রে আমি আবারও ক্ষমা চেয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশ আলেম-উলামাদের জন্য সবচেয়ে উর্বর ক্ষেত্র হওয়ার পরও বাংলা ভাষায় রচিত সিরাত গ্রন্থ বা সিরাত বিষয়ক গ্রন্থগুলোকে সাহিত্য মানে বিচার করলে হাতেগোনা দুই একটির বেশি কাজ মানের দিক দিয়ে উৎরাবে কি-না সন্দেহ।

বাংলানিউজ: সিরাত সাহিত্যের অন্যতম দিক নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কবিতা ও সঙ্গীতে নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবহ ও অবদানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মাওলানা মাসউদ: নাত সিরাত সাহিত্যের প্রাচীনতম একটি দিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আবু তালেব। যার ঈমানের সৌভাগ্য হয়নি। নবীর শানে তিনি যে নাত লিখেছেন, তার সমতুল্য নাত খুব কম মুসলিমই লিখতে পেরেছেন। তিনি এটা রচনা করেছেন, তার স্বভাবার্য ও রক্তের ভালোবাসার জন্য। আর মৌলিকভাবে নাতের উৎস ভালোবাসা। ভালোবাসার অভিব্যক্তিগুলোকে ছন্দময় তুলে ধরা হয় নাতের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে ফার্সি সাহিত্য তুলনাহীন। ফার্সি সাহিত্যে নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অমর সব সৃষ্টি রয়েছে। হাফিজ, জামি, রুমি ও সাদির নাম উল্লেখযোগ্য। আর বাংলা ভাষায় আধুনিক নাতের পথিকৃৎ কাজী নজরুল ইসলাম। এর পর ফররুখ আহমদের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। গোলাম মোস্তফা ও বন্দে আলী মিয়ার নাত উল্লেখ করার মতো। এ ক্ষেত্রে নজরুলের নাতের সংখ্যা ও বৈচিত্র দুটোই বেশি।

ইদানিং আমাদের তরুণদের নাতের প্রতি ঝোঁক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যে নকল ও অনুকরণের প্রবণতা প্রকট। এটা হতাশাজনক। তবে আমি আশাবাদী, নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজ পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। আমি আবেগি তরুণদের সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিবো।

বাংলানিউজ: সিরাতচর্চায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিৎ?
মাওলানা মাসউদ: সিরাতচর্চায় আমাদের প্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে, তাহলো-  সিরাতচর্চাটি শুধু প্রেম ও ভালোবাসার স্তরে সীমাবদ্ধ না রাখা। আবু তালেব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতেন, কিন্তু তার আদর্শ ধারণ করেননি। একইভাবে হজরত আব্বাস ও হামজা রাজিয়াল্লাহু আনহুমা তাকে ভালোবেসেছেন এবং তার আদর্শ ধারণ করেছেন। উভয়ের মর্যাদা ও পরিণতিতে কতো পার্থক্য!
 
দ্বিতীয়ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শকে খণ্ডিত আকারে উপস্থিত না করা। সামগ্রিকতার মধ্যে খণ্ডিত উপস্থাপন ঠিক আছে। ধরুন, কারো নাক খুব সুন্দর। এখন যদি তার নাকটি কেটে আলাদা করা হয়, তবে বিভৎসতা ছাড়া আর কিছু কি পাওয়া যাবে? তাই আমার কথা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খণ্ডিত আকারে উপস্থাপন করার কারণে নানা ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বাংলানিউজ: কওমি ধারার আলেমদের মধ্যে আপনিই সর্বপ্রথম জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম রচনার কাঝে বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং অংশগ্রহণটাও ছিলো ব্যাপক। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে সিরাতের অংশটা কেমন হওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
মাওলানা মাসউদ: আমি মনে করি, শিক্ষার প্রতি স্তরেই সিরাতের উপস্থিতি আবশ্যক। প্রতিটি স্তরের উপযুক্ত মান ও সহনশীলতার আদলেই এটা রাখতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শচর্চা ব্যতীত একজন মানুষ সুনাগরিক হবে, এটা সম্ভব নয়। আজকে আমাদের শিশুদের সামনে কোনো মডেল নেই। ফলে তারা বিপথে যাচ্ছে।

সে হিসেবে আমার পরামর্শ হলো, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক স্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শৈশবকাল এবং জীবন থেকে সার্বজনীন মানবিক গুণাগুণগুলো আলোচনা করা যেতে পারে। মাধ্যমিক স্তরে কৈশোর অবস্থা, মাতা-পিতা ও পরিবারের প্রতি তার শিক্ষা আলোচনা করা যেতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিকে যুবক বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক গুণাবলী ও সমাজের প্রতি দায়িত্বপালনের বিষয়গুলো আসতে পারে। উচ্চ শিক্ষায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা হতে পারে।

বাংলানিউজ: মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে সিরাত পড়ানো হয় এবং সিরাতের ওপর মাস্টার্স করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেটাকে কতোটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?
মাওলানা মাসউদ: আমি সম্পূর্ণ যৌক্তিক মনে করি। আমি মনে করি, শুধু অনার্স বা মাস্টার্স নয়। সিরাতের ওপর স্বতন্ত্র অনুষদ হতে পারে।

বাংলানিউজ: পাঠকের উদ্দেশ্যে বিশেষ কিছু বলতে চান?
মাওলানা মাসউদ: দেখুন, বর্তমান সময়ে নানা দুর্যোগ চলছে। নানাদিক থেকে আত্মিক, বৈশ্বিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সর্বোচ্চ সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা সময় পার করছি। এ সঙ্কট মোকাবেলার একমাত্র উপায় হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাতের সার্বজনীন চর্চা।

বাংলানিউজ: বাংলানিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মাওলানা মাসউদ: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ। আমাকে এতোক্ষণ সিরাতচর্চার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।



বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এমএ/

** শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা
** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে

** সিরাত কাকে বলে?
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
**  ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।