ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বিশ্ব ইজতেমা

আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব উম্মাহর শান্তি কামনা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব উম্মাহর শান্তি কামনা ছবি: রানা/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দান (টঙ্গী) থেকে:  দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, আখেরাত ও দুনিয়ার শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

রোববার (১০ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতে মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা করা হয়।

মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরুব্বি ভারতের মাওলানা সা’দ।

আরবি ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে হাত তুলে কাতর ও বিনম্র শ্রদ্ধায় দোয়া করেন লাখ লাখ  ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।

মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন তারা।

এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে তুরাগ তীর মুখরিত করে দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় আকুতি জানান মুসল্লিরা।

এদিকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন।

আর রোববার ভোরে কুয়াশ-শীত উপেক্ষা করে কোনো যানবাহন না পেয়ে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে পায়ে হেঁটেই ইজতেমা স্থলে রওনা দেন লাখো মুসল্লি।

যেন সব পথ গিয়ে থেমেছে তুরাগ তীরে। তবে সকাল ৮টার আগেই ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকার সড়ক-মহাসড়ক, অলি-গলি ও খালি জায়গা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে অনেক মুসল্লি আখেরি মোনাজাতের জন্য খবরের কাগজ, পাটি, বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে কামাড়পাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং অলি-গলিসহ বিভিন্নস্থানে অবস্থান নেন।

নানা বয়সী বিভিন্ন পেশার মানুষের পাশাপাশি নারীদেরও মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়। এমনকি বাসা-বাড়ি ও কারখানার ছাদ, নৌকা, বাসের ছাদ, ফুটওভার ব্রিজ-যে যেখানে পারছেন সেখানে বসেই দু’হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীনের দাওয়াতের কর্মধারায় ১৯৪৬ সালে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছিল। ঢাকার রমনা উদ্যান সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে প্রথম ইজতেমার আয়োজন করা হয়।

দিনদিন মুসল্লির সংখ্যা বাড়ায় ১৯৪৮ সালে ইজতেমা হয় বর্তমানে যেখানে হাজিক্যাম্প, সেই ময়দানে। ১৯৫৮ সালে ইজতেমা হয় সিদ্ধিরগঞ্জে।

ক্রমবর্ধমান মুসল্লির সংখ্যায় স্থানসংকুলানের জন্য ১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের মাঠে ইজতেমা শুরু হয়। সারা বিশ্ব থেকে ইজতেমায় মুসল্লিদের আগমন ঘটতে থাকে। দেশের সব অঞ্চল থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ আল্লাহর রহমত লাভে ধন্য হওয়ার আশায় ছুটে আসেন ইজতেমায়।

টঙ্গীর বিশাল ময়দানও নেহাত ছোট হয়ে পড়ে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলানের জন্য। এ পরিস্থিতিতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন তাবলিগের মুরুব্বিরা।

পাশাপাশি বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ৮ হাজার বিদেশি মেহমান অংশ নিয়েছেন এবারের ৫১তম বিশ্ব ইজতেমায়।

০৮ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয় রোববার। মাঝে চারদিন বিরতি দিয়ে ৩২ জেলা নিয়ে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি।

আর ১৭ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

এদিকে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে বিশ্ব ইজতেমায় ধর্মপ্রাণ মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে যানবাহন পার্কিংয়ের জন্যও স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

এছাড়া প্রথম দফায় আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশ-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না হলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না।

বিশেষ বাস-ট্রেন:
এদিকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আখাউড়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। এ ছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।

এদিকে  ইজতেমা শেষে ঘরমুখী মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিশেষ বাসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিদেশি মেহমানসহ ৮ মুসল্লির মৃত্যু:
মুসলিম উম্মাহের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে আসা এক বিদেশিসহ ৮ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

তারা সবাই বার্ধক্যজনিত রোগে মারা গেছেন বলে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন।

এবার জমেনি বিয়ের আসর:
দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে বিশ্ব ইজতেমাকে ৩২ জেলায় নামিয়ে আনা হয়েছে। খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার বিশ্ব ইজতেমায় এবার ভাঙা হলো আরেক রীতি। প্রতিবছর ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হলেও এবার সে আসর বসেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইজতেমায় বিয়ের আয়োজন করা হলে শুধু তাবলিগের মুসল্লিরা জানতে পারেন। বর-কনের পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতে পারেন না।

এতে পরিবারে বিয়ের আনন্দটা কমে যায়। তাই এবার ইজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন কর‍া হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬/আপডেট : ১২১৮ ঘন্টা
এমএ/

** তুরাগ পাড়ে আখেরি মোনাজাতের অপেক্ষা

** ডায়রিয়া-সর্দিজ্বর-কাশি-হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মুসল্লিরা
** ইন্দোনেশীয় নাগরিকের মৃত্যু, দাফন সম্পন্ন
** দাওয়াতের কাজে কখনও শিথিলতা দেখানো যাবে না
** বিশ্ব ইজতেমায় শতাধিক দেশের ৮ হাজার মুসল্লি
** ইজতেমায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।