ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

নবীদের কাছে মাতৃভাষায় আল্লাহর বিধান এসেছে

ফিরোজ আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
নবীদের কাছে মাতৃভাষায় আল্লাহর বিধান এসেছে

আরবের লোকেরা আরবি ভাষায় কথা বলেন। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবে জন্মেছেন।

তার মাতৃভাষা ছিল আরবি। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর প্রথম ওহি নাজিল হয়- ‘ইকরা’ শব্দে।

ইকরা আরবি ভাষা, যার অর্থ পড়ো। হজরত রাসূল (সা.) সহজে যেন তার মনের ভাব মানুষের কাছে প্রকাশ করতে পারেন, আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত ওহিগুলো বর্ণনা করতে পারেন, মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে যেন রাসূল (সা.)-এর কোনো কষ্ট না হয় এবং আরবের লোকজনও যেন সহজে রাসূল (সা.)-এর ভাষা বুঝতে পারে সেজন্যে আল্লাহ আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছেন।

পৃথিবীর জমিনে এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল এসেছেন। তারা নিজ নিজ ভাষায় দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন এবং উম্মতদের বুঝিয়েছেন। আল্লাহ প্রত্যেক নবীর কাছে নবীর নিজস্ব ভাষায় ওহি পাঠিয়েছেন। যেন ওহির ভাষা বুঝতে নবীর কষ্ট না হয়।

এ প্রসঙ্গে সূরা ইবরাহিমের চার নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো নবীই এমন পাঠাইনি, যে (নবী) তার জাতির (মাতৃ) ভাষায় (আমার বাণী তাদের কাছে পৌঁছায়নি), যাতে করে সে তাদের কাছে (আমার আয়াত) পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলতে পারে। ’

সূরা হা-মীম আস সাজদাহর ৪৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি যদি এ কোরআন (আরবি ভাষার বদলে) আজমি (অনারব ভাষায়) বানাতাম, তাহলে এরা বলত, কেন এর আয়াতগুলো (আমাদের ভাষায়) পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হলো না; কোরআন আজমি ভাষায় অথচ এর বাহক আরবি ভাষার লোক। ’

সূরা আশ শুরার সাত নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এভাবেই (হে নবী!) আরবি কোরআন আমি আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে আপনি (এর দ্বারা) মক্কাবাসীর ও তার আশপাশে যারা বসবাস করে তাদের সতর্ক করে দিতে পারেন। ’
ভাষার ওপর অনেক আয়াত আল্লাহ কোরআনে ওহি আকারে পাঠিয়েছেন। কোরআনে মাতৃভাষা ব্যবহারের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া ভাষা একটি জাতির পৃথক পরিচয় ও মর্যাদা বহন করে। যার একটি ভাষা আছে সে জাতি হিসেবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র।

আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক জাতিকে একটি নিজস্ব ভাষা উপহার দিয়েছেন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। এই ভাষাতে আমরা কথা বলতে স্বাছন্দ্যবোধ করি। বাংলা ভাষার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। আল্লাহতায়ালা কোরআনে মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

আমাদের প্রিয় ভাষার ওপর পাকিস্তানিরা আঘাত হেনেছিল। আমার মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। সেদিন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানিদের অন্যায় আচরণ রুখে দিয়েছিল। বাংলার তরুণ ছাত্র জনতার লড়াই সংগ্রামে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাশাপাশি সেদিনের লড়াই সংগ্রাম কোরআনে মাতৃভাষার চর্চার গুরুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল।

ভাষা সংস্কৃতির বাহন। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার সংস্কৃতিকে আগে ধ্বংস করতে হয়। এই বিবেচনা সামনে রেখে পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানে। বাঙালিদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজ সংস্কৃতি। কোরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ভিন্ন ভাষায় যতটা বুঝতে পারব, এর চেয়ে শত ভাগ বেশি বুঝতে পারব বাংলা ভাষায়। অর্থাৎ আমাদের নিজস্ব ভাষায়। আল্লাহতায়ালা নিজেই তার ওহি বোঝার জন্য মাতৃভাষাকে নির্বাচন করেছেন। প্রত্যেক নবী ও রাসূলের কাছে স্বজাতির ভাষায় ওহি পাঠিয়ে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নিজ নিজ জাতিকে সম্মানিত করা হয়েছে। কোরআনের আয়াতগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, মাতৃভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আজকাল আমরা ভিন্ন ভাষার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী। অন্য ভাষায় কথা বলতে পারাকে আধুনিকতা বলি। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়াতে চাই না। বাংলা ভাষার চেয়ে শিশুরা কতটা ইংরেজি পড়তে বলতে লিখতে পারে; এসব নিয়ে অভিভাবকেরা ব্যস্ত।

মা শব্দ কতটা মধুর। যে মায়েরা মা ডাক শুনেছেন তারা শুধু বলতে পারবেন। মা ডাকের সাথে কত আবেগ কত মমতা কত ভালোবাসা জড়িত। এটা কলমে লিখে বুঝানো সম্ভব হবে না। কোরআনে মাতৃভাষা চর্চার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলা ভাষার প্রতিও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার চর্চা বৃদ্ধি পাবে। বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হবে। জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। কোরআনের প্রতিও যথাযথ সম্মান জানানো হবে।



বাংলাদেশ সময়: ০৪২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।