ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মিথ্যা সাক্ষ্য ভয়াবহ পাপের কাজ

মাওলানা শওকত হোসাইন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
মিথ্যা সাক্ষ্য ভয়াবহ পাপের কাজ

সহিহ বোখারি শরিফের এক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, মহানবী (সা.) সাহাবাদের বলেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের কথা বলব না? সাহাবারা বললেন, নিশ্চয়ই, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। অতঃপর তিনি হেলান দেওয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসলেন (পরবর্তী কথার প্রতি গুরুত্বারোপ করার জন্য) এবং বললেন, মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।

এ কথাটি তিনি এত বেশিবার বলতে লাগলেন যে, সাহাবারা মনে মনে বলতে লাগলেন, এবার যদি তিনি থামতেন!

অন্য আরেক হাদিসে আছে, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, হে মানুষ! জেনে রেখো, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার মতো গণ্য করা হয়েছে। অতঃপর তিনি কোরআনের এ আয়াতেন অংশটি পড়েন, ‘তোমরা মূর্তিপূজার মতো গর্হিত কাজ এবং মিথ্যা বলা পরিহার কর। ’ –তিরমিজি

যার মধ্যে সামান্য পরিমাণ মানবতাবোধ আছে, সে কখনও মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে না। এ ধরনের ব্যক্তি দুনিয়ার লোভে নিজেদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব বিক্রি করে দেয়। এজন্য মহান আল্লাহ এদের নিজের বান্দা হিসেবে গণ্য করেননি। পবিত্র কোরআনের সূরা ফোরকানে আল্লাহর বান্দাদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘...আর যারা মিথ্যা সাক্ষ দেয় না...। ’

মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া যেমন অপরাধ, প্রয়োজনে সত্য সাক্ষ্য গোপন করাও তেমন অপরাধ। এজন্য পবিত্র কোরআনে সত্য সাক্ষ্য গোপন না করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে ব্যক্তি তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপী সাব্যস্ত হবে। তোমরা যা করো, আল্লাহ তার খবর রাখেন। ’ –সূরা আল বাকারা : ২৮৩

সত্য সাক্ষ্য গোপন করা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ারই নামান্তর। যেহেতু উভয়টিই নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে। যখন কোনো ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্যের কারণে অন্যায়ভাবে ফেঁসে যায়, তখন সত্য সাক্ষ্য দিয়ে তাকে উদ্ধার করা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য পবিত্র কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে নিজেদের সত্যের সাক্ষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করো- যদিও তা তোমাদের নিজেদের, তোমাদের মা-বাবার কিংবা তোমাদের নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়- চাই সে ধনী হোক কিংবা গরিব হোক (তা দেখার বিষয় নয়)। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি তাদের চেয়ে বড় বিষয়। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচারের সময় নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। যদি তোমরা পেঁচানো কথা বল কিংবা (সত্য সাক্ষ্য দেওয়া থেকে) বিরত থাকো- তাহলে জেনে রেখো, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহর তার খবর রাখেন। ’ –সূরা আন নিসা: ১৩৫

উপরোক্ত আলোচনা থেকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার পরিণাম জানা গেল। মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে দুনিয়াতে কিছু সুযোগ-সুবিধা হয়তো লাভ করা যাবে, কিন্তু আখিরাতে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। ‘যারা সামান্য মূল্যের বিনিময়ে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে বিক্রি করে দেয়, আখেরাতে তাদের কোনো অংশ থাকবে না। আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকবেন না। তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদের গোনাহ থেকে পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ’ -সূরা আল ইমরান: ৭৭

মহান আল্লাহ আমাদের মিথ্যা সাক্ষ্য পরিহার করে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।



বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।