ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

শিশুর প্রতি সহিংসতা ঈমানের পরিপন্থী

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৬
শিশুর প্রতি সহিংসতা ঈমানের পরিপন্থী

আজকের শিশুই ভবিষ্যত জাতির কর্ণধার। তাই প্রত্যেকটা শিশুকে যথাযোগ্য পরিচর্যার মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা মা-বাবা, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

মানব শিশুর পরিপূর্ণ মানবিক বিকাশের লক্ষে আইনগতভাবে তার কিছু অধিকার নির্দিষ্ট করা আছে। এ লক্ষে ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘শিশু অধিকার সনদ’ নামে সর্বসম্মতিক্রমে একটি সনদ গৃহীত হয়।

ইতিহাসে এ‍টাই হলো, সবচেয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ হওয়া মানবাধিকার আইন। বিধিবদ্ধ শিশু অধিকারের মধ্যে রয়েছে তার বেঁচে থাকার অধিকার, বিকাশের অধিকার, সুরক্ষার অধিকার এবং অংশগ্রহণের অধিকার।

বলতে দ্বিধা নেই যে, আজ শিশুর কোনো অধিকারই সংরক্ষিত নয়। নৃশংসভাবে শিশু হত্যার ঘটনা আমাদের সমাজে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু নিহত হচ্ছে নিজ বাবা-মায়ের হাতে, বড়দের পাস্পরিক শত্রুতার বলি হয়ে শিশুকে প্রাণ দিতে হচ্ছে, চাঁদাবাজরা শিশুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

অভিজাত শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে বিত্তশালীদের সন্তানদের মাদকাশক্তি, যৌন বিকৃতি ও খুন-খারাবির ঘটনা এখন পুরনো বিষয়। তারা অর্থ-বিত্তের মাঝে বড় হয়েছে কিন্তু মানবিক আচরণ শেখেনি। ফলে তাদের দ্বারা অনেক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ইসলাম মানব সৃষ্টির সূচনা থেকেই শিশুদের অধিকার প্রদান ও সুরক্ষার বিধান দিয়ে এসেছে। বিশেষ করে শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) শিশু অধিকারের বিষয়ে ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। তার সার্বিক প্রচেষ্টার মূলে ছিল মানব শিশুকে মহান আল্লাহর খাঁটি বান্দা তথা খাঁটি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

এ প্রসঙ্গে আবু ওয়ায়েল হজরত আবুদল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যার একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিলো আর সে তার সুন্দর নাম রাখল, উত্তম শিক্ষা দান করল এবং উত্তম শিষ্ঠাচার শিক্ষা দিল, ওই মেয়ে তার জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে বাঁচাবার জন্য ঢাল হবে। -তাবারানি, আল মুজামুল কাবির : ১০৪৪৭

নিজের দায়িত্বভূক্ত শিশুকে সার্বিক পরিচর্যার মাধ্যমে যোগ্যতর করে গড়ে তোলা ঈমানি দায়িত্ব। এ জন্য কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।

এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, প্রত্যেকটা মানব সন্তানই ফিতরাতের (সুস্থ মানবিক যোগ্যতা) ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার বাবা-মা (অভিভাবক) কাউকে ইহুদি বানায়, কাউকে নাসারা বানায় আবার কাউকে বানায় মাজুসি। -সহিহ বোখারি

পবিত্র কোরআন ও রাসূলের হাদিস অধ্যয়ন করলে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, শিশুর প্রতি যে কোনো ধরণের অমানবিক আচরণ এবং শিশু অধিকার পরিপন্থী যে কোনো কাজই ঈমানের পরিপন্থী। সুতরাং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা, শিশু নির্যাতন, শিশু হত্যার মতো ঘটনা- কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শিশু অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব এবং সে ব্যবস্থা কার্যকর করতে সার্বিক সহায়তা দেওয়াও মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।