ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

গোনাহ মাফের উপায়

মাহমুদা খাতুন মুন্নী, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
গোনাহ মাফের উপায়

মানুষ দৈনন্দিন জীবনে রিপুর তাড়নায় শয়তানের ধোঁকায় কম-বেশি গোনাহ করে থাকে। এটা নতুন কিছু নয়।

কিন্তু এতে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। ’ তাই গোনাহ করে নিরাশ হলে চলবে না।

কেউ জেনে বা না বুঝে কোনো অন্যায় করার পর যদি অনুতপ্ত হয়, মনে অনুশোচনা জন্ম নেয়- তখন অপরাধীর মতো একান্ত সংকুচিতভাবে ভয় ও বিনয়ের সঙ্গে এবং খালেস নিয়তে আল্লাহর দরবারে তওবা-ইস্তেগফার করে; তবে আশা করা যায় অবশ্যই আল্লাহতায়ালা তার বান্দার প্রতি সদয় হবেন। বান্দার অন্যায় যত বড়ই হোক না কেন- করুণাময় তার অশেষ করুণা গুণে তাকে ক্ষমা করে দেবেন।

আল্লাহর কাছে বান্দা তওবা-ইস্তেগফার করলে আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত খুশি হন। গোনাহ থাকুক বা না-ই থাকুক প্রত্যহ তওবা-ইস্তেগফার পড়া উচিত। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পূর্ণভাবে বেগুনাহ ও নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যহ তওবা-ইস্তেগফার করতেন।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) প্রত্যহ আল্লাহর কাছে একশতবার তওবা-ইস্তেগফার পাঠ করতেন। মানুষের গোনাহ যদি আসমান সমানও হয় এবং সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে তিনি নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দেবেন।

অন্য এক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি যেরকম আশা করে কেয়ামতের দিবসে তার আমলনামা তাকে খুশি করবে সে যেন অধিক মাত্রায় তওবা-ইস্তেগফার করে। কোনো মুসলিম কোনো একটি গোনাহ করে ফেললে ফেরেশতারা সঙ্গে সঙ্গে আমলনামায় না লিখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে থাকে। ওই সময়ের মধ্যে যদি ওই গোনাহগার তওবা-ইস্তেগফার করে ফেলে তবে তার আমলনামায় ওই গোনাহটি লিপিবদ্ধ হয় না এবং এ জন্য কিয়ামতের দিবসে তার কোনো শাস্তিও পেতে হবে না।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ইবলিশ আল্লাহর কাছে বলেছিল, যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে আদম সন্তান জীবিত থাকবে, ততদিন আমি তাদের গোমরা করতে থাকব। তখন আল্লাহ বললেন, আমিও যতদিন পর্যন্ত মানুষ তওবা-ইস্তেগফার করতে থাকবে ততদিন ধরে তাদের ক্ষমা করতে থাকব।

যে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করে, আল্লাহর কাছে পানাহ চায়- আল্লাহতায়ালা তাকে বেশি বেশি নেক আমল নসিব করেন। আল্লাহতায়ালা মানুষকে উদ্দেশ্যে করে আরও শিখিয়েছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ আর আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো তোমার প্রতিশ্রুতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করি। আমার প্রতি তোমার নেয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি, আর আমি আমার গোনাহর খাতা স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি ছাড়া আর কেউই গোনাহগুলোর মার্জনাকারী নেই।

মানুষ যদি আল্লাহকে অনুসরণ করে, রাসূলের সুন্নত মেনে চলে, তবে ইনশাআল্লাহ সব বালা-মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট, দুনিয়াবি ফেতনা, কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে, মৃত্যু পর জান্নাতবাসী হবে। তাই মুমিন-মুসলমানদের কর্তব্য হলো- বিবেক-বুদ্ধি ও ন্যায়পরায়ণ জীবন অবলম্বন করা। শয়নে স্বপনে জাগরণে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার তওফিক কামনা করা। সেই সঙ্গে আসতাগফিরুল্লাহ দিনে অন্তত একশতবার পাঠ করা। এর দ্বারা মানুষের জীবনের সব গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।

বর্তমান সমাজের মানুষ হাজারও ব্যস্ততার মাছে থাকে। বুঝে না বুঝে গোনাহর কাজ করে। অথচ দিনের কিছুটা সময় যদি মহান অাল্লাহতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞচিত্তে শোকর আদায় করে- ভয়ে-শ্রদ্ধায় যাবতীয় পাপাচারের জন্য তওবা-ইস্তেগফার করে; তবে আল্লাহ মেহেরবান আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।



বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।