ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা রুখতে করণীয়

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা রুখতে করণীয় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোর অপরাধ একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। যা রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক। শিশু-কিশোররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। তাদের উন্নতি ও অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে দেশ ও জাতির উন্নতি।

কিশোর অপরাধ একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। যা রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক।

শিশু-কিশোররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। তাদের উন্নতি ও অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে দেশ ও জাতির উন্নতি। সেই শিশু-কিশোরদের একটি অংশ কোনো কারণে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চরম হুমকি ও সুস্থ সমাজ জীবনের প্রতিবন্ধক হোক- তা কারও কাম্য নয়। এজন্যই ইসলাম শিশু-কিশোরদের সুস্থ, স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে এবং অপরাধমুক্ত জীবন-যাপনের জন্য উপস্থাপন করেছে সর্বজনীন ও কল্যাণকর নীতিমালা।

কিশোর অপরাধের পরিচয়ে বলা যায় যে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে কর্তৃক সংঘটিত দেশীয় আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডসমূহ। বস্তুত কিশোর অপরাধের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন বিষয়। তথাপি অপরাধবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিশোর অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের প্রয়াস চালিয়েছেন।  

কিশোর অপরাধ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সবসময় পরিবারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেননা পরিবার মানুষের আদি সংগঠন এবং সমাজ জীবনের মূল ভিত্তি। পরিবারের সূচনা হয় স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে। আর পারিবারিক পরিমন্ডলে সন্তানের জন্ম হয় এবং বিকাশ লাভ করে। সন্তানের স্বাভাবিক ও সুস্থ বিকাশের জন্য পিতামাতার মধ্যে সম্প্রীতিময় দাম্পত্য জীবন একান্ত অপরিহার্য। পিতা-মাতার মধ্যে মনোমালিন্য ও কলহ বিবাদ থাকলে সন্তানের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা পরিণামে শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণ হতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

অর্থনৈতিক অবস্থাও কিশোর অপরাধের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। দারিদ্র্যতা ও সম্পদের প্রাচুর্য উভয়ই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কিশোর অপরাধ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দরিদ্রতার কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে কিশোররা বিভিন্ন প্রকারের অপরাধে লিপ্ত হয়। এ জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কুফরির পাশাপাশি দারিদ্র্যতা থেকেও আল্লাহতায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরি ও দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ’ 

কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে সঙ্গদলের প্রভাব বিশেষে গুরুত্ব রাখে। সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে কেউ অসৎ প্রকৃতির বা অপরাধপ্রবণ থাকলে তাদের প্রভাবে অনেক সময় কিশোর-কিশোরীরা অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে। এ সময় তারা স্কুল পালিয়ে রাস্তায় ঘোরাফিরা করে এবং ইভটিজিং, আত্মহত্যা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও বিপণনসহ নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। শখের বশে ধূমপান করে ধীরে ধীরে নেশাগ্রস্ত হয়ে উঠে। মানবতা ও শান্তির ধর্ম ইসলামে মাদকদ্রব্যকে বলা হয়েছে, সকল প্রকার খারাপ কাজের সূতিকাগার।

সম্প্রতি সহযোগী এক দৈনিকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভয়াল নেশায় জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। স্কুল শিক্ষার্থী, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান বাদ নেই কোনো শ্রেণিই। তবে নেশাসক্ত শিশু-কিশোরদের মধ্যে পথশিশুদের সংখ্যাই বেশি। যাদের অধিকাংশের বাস আবার বস্তিতে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। তার মধ্যে শিশু ও কিশোর মাদকাসক্ত রয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে এই সংখ্যা আরও বেশি।

মাদকাসক্ত শিশু আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং তার মানসিক ও শারীরিক বিপর্যয় ঘটে। ফলে সে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, নারী-শিশু নির্যাতন, সহিংসতা, চাঁদাবাজি, আত্মহত্যা, পকেটমারা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

কিশোর অপরাধ প্রতিকারে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমন্ডিত। ইসলাম মনে করে, সঠিক পন্থায় শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ না হওয়ার কারণেই মূলত কিশোর অপরাধ সংঘটিত হয়। এ ছাড়া যে সব কারণে এই ব্যাধির সৃষ্টি হয়, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কিশোর অপরাধ প্রতিকার করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ইসলাম সর্বজনস্বীকৃত প্রতিরোধমূলক ও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে তা প্রতিকার করেছে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় ইসলাম বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্যই ইসলাম শৈশবকাল থেকে ঈমানের শিক্ষা, ‘ইবাদতের অনুশীলন, ইসলামের যথার্থ জ্ঞানার্জন ও নৈতিকতা উন্নয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে পরিবারের ওপর। যাতে করে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ শিশু-কিশোররা অপরাধমুক্ত থাকতে পারে। ’

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মুমিনদেরকে এবং তাদের পরিজনদের অপরাধমুক্ত জীবনযাপন করার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। -সূরা আত তাহরিম: ৬

চরিত্র মানুষের উত্তম ভূষণ। আর মানুষের আচার-আচরণ ও কাজ-কর্ম সুনির্দিষ্ট আদর্শের আলোকে গড়ে উঠলে তাকে বলা হয় নৈতিকতা। শিশু-কিশোরের নৈতিকতার উন্নয়নে পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাব অনস্বীকার্য। তবে পরিবারের ভূমিকাই মুখ্য। মা-বাবা নৈতিকতা মেনে চললে এবং শিক্ষা দিলে শিশু-কিশোররা তা অনুকরণ করে মেনে চলতে শিখবে। এভাবে তারা চরিত্র গঠনের নৈতিক গুণাবলী অর্জন করতে পারলে কিশোর অপরাধ প্রবণতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সক্ষম হবে।

কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত চরিত্র গঠনের উত্তম গুণাবলী যেমন তাকওয়া, লজ্জাশীলতা, সত্যবাদিতা, ওয়াদাপালন, আমানতদারিতা, সবর, ইহসান, বিনয়, নম্রতা, উদারতা ও দানশীলতা প্রভৃতি গুণাবলী পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তানকে শিক্ষা দানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।