সম্মেলনে জামিয়ার প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন স্মারক প্রদান করা হয়। ব্যাপক আলোচিত এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের শতাধিক ইসলামি স্কলার ও শীর্ষ আলেম অংশগ্রহণ করেন।
দাওরায়ে হাদিস শিক্ষা সমাপনকারীদের পাগড়ি প্রদান উপলক্ষে কওমি মাদরাসাগুলো দস্তারবন্দি সম্মেলন করলেও এবারই প্রথম ‘কওমি গ্র্যাজুয়েশন’ নামে ব্যতিক্রমী আয়োজন। মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন স্মারকের আদলে তিনি সুন্নতি পোশাক ‘আবা’ দিয়েছেন শিক্ষা সমাপনকারীদের। সঙ্গে ছিলো পাগড়িসহ প্রায় ১৫ ধরনের উপহার সামগ্রী।
গহরপুর জামিয়া থেকে শিক্ষা সমাপনকারী তরুণ আলেম ও হাফেজরা ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগে দারুণ খুশি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি শেয়ার করে ব্যাপক প্রশংসাসূচক বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
তারা জানান, শিক্ষা সমাপনের স্মারক হিসেবে যা পেয়েছেন তা তাদের ভাবনায়ও ছিল না। বাংলাদেশের কোনো মাদরাসা এমন ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেনি। সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রায় প্রত্যেক শীর্ষ আলেমই এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আল্লামা গহরপুরী (রহ.)-এর উত্তরসূরি প্রিন্সিপাল মুসলেহ উদ্দীন রাজুর উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।
সম্মেলনে ভারতের জমিয়তে উলামার সভাপতি আল্লামা সৈয়দ আরশাদ মাদানি, দারুল উলুম দেওবন্দের আল্লামা কমর উদ্দিন, আল্লামা আবদুল্লাহ মারুফি, আল্লামা সালমান বিজনুরি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন।
ভারতের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী এহসান মুহসিন ছিলেন সম্মেলনের বিশেষ আকর্ষণ।
প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন স্মারক প্রদান করা হয়
দেশের শীর্ষ আলেমদের মধ্যে অংশ নেন জামিয়া শারইয়্যা মালিবাগের প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস মাওলানা আশরাফ আলী, জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জের প্রিন্সিপাল মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, সিলেটের জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজারের প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, বরিশাল জামিয়া মাহমুদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, ময়মনসিংহের মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী, বেফাকের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাওলানা জুবায়ের আহমদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জের মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুখলিছুর রহমান কিয়ামপুরী, মাওলানা মাসউদ আহমদ, মাওলানা আব্দুছ ছাত্তার, মাওলানা সাদ উদ্দীন, মাওলানা নুরুল ইসলাম চাটগামী, মাওলানা আবদুল বাসিত বরকতপুরী, মাওলানা নুরুল আমীন, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর, মাওলানা নুরুল ইসলাম বিশ্বনাথী ও দারুল উলুম কাকরাইলের প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল গাফফার খান রানা প্রমুখ। এছাড়া সিলেটের বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এহিয়া চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা কওমি গ্র্যাজুয়েশনে যোগদান করেন।
জামিয়া গহরপুরের ৬০ বছর পূর্তির এই সম্মেলনে লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আল্লামা গহরপুরীর ভক্ত-মুরিদরা ছুটে আসেন মাহফিলে। এ উপলক্ষে পুরো এলাকায় বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
প্রসঙ্গত, শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ নূর উদ্দিন আহমদ গহরপুরী (রহ.) ছিলেন কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের আমৃত্যু সভাপতি। তিনি দেশের আলেমদের অভিভাবক ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি নিজ গ্রাম বালাগঞ্জের গহরপুরে বিখ্যাত এই দীনি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।
২০০৫ সালে তার ইন্তেকালের পর এলাকাবাসী তারই সুযোগ্য সন্তান মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজুকে এই প্রতিষ্ঠানটি চালানোর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অগ্রসর চিন্তার তরুণ এই আলেম ভিন্নধর্মী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ইতোমধ্যে কওমি অঙ্গনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। কওমি গ্র্যাজুয়েশনও তারই চিন্তার ফসল। নানাবিধ সামাজিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭
এমএইউ/