ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

কোরআন শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে ৫১ লাখ শিশু

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
কোরআন শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে ৫১ লাখ শিশু কোরআন শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে ৫১ লাখ শিশু

ঢাকা: দেশজুড়ে ৪১ হাজার শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫১ লাখ ১০ হাজার শিশু শিক্ষার্থীকে শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন শরিফ শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সী স্কুলগামী, কর্মজীবী, বস্তিবাসী ও ঝরে পড়া শিশুরা এই সুযোগ পাবে।

এই সুযোগ সৃষ্টিতে ‍বাস্তবায়নাধীন ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিসর বাড়ানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে রয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ মেয়াদে প্রকল্পটি দু’বছর আগেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এসময় প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। তবে ৫১ লাখ ১০ হাজার শিশুকে কোরআন শিক্ষাসহ আরও কিছু শিক্ষা কার্যক্রম যুক্ত করায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয় অতিরিক্ত ১ হাজার ৫৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। এতে এখন মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। তবে বাড়ানো হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬৪টি জেলার নির্বাচিত ৫৫০টি উপজেলা, থানা, জোন এবং সার্কেলে এই কোরআন শিক্ষাদান কার্যক্রম চলবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। কোরআন শিক্ষাদানে ৮০ হাজার ৯৩৩ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বেকার নারীরা।
 
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সকল শিক্ষা কেন্দ্রে কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি আরবি ভাষাও শেখানো হবে। এ কার্যক্রমের আওতায় আরবি উচ্চারণ, বাংলা অর্থ, পুনরায় বাংলা শব্দ, আরবি বাক্য গঠন, আরবি শব্দার্থ ও আরবি বাক্যের অর্থ শেখানো হবে শিশুদের। এ শিক্ষাদান সহজ করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে  ‘ইজি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং বুক ফর প্রি-প্রাইমারি’, ‘ইজি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং বুক ফর সহজ কোরআন শিক্ষা’, ‘ইজি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং বুক ফর অ্যাডাল্ট’, ‘ইজি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং গাইড ফর টিচার’ শিরোনামে চারটি বই। কেবল বই কেনা বাবদই ৪১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় করবে সরকার।
 
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বইয়ের পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণও বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি আরবি ভাষার বিষয়েও প্রাথমিক জ্ঞান দেওয়া হবে। যেন এই শিশুদের কেউ পরবর্তী জীবনে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মের স্বার্থে গেলে আরবি ভাষা শিক্ষা কাজে লাগানো যায়।

এর পাশাপাশি যেসব এলাকায় স্কুল নেই সেখানে ‘দারুল আরকাম ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ শিরোনামে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আরও ২ লাখ ৮২ হাজার ৮০০ জনকে কোরআন শিক্ষা দেওয়া হবে।
 
এই প্রসঙ্গে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ প্রকল্পটি সংশোধন করে এর পরিসর বাড়িয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় ৫১ লাখ ১০ হাজার শিশু শিক্ষার্থীকে শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন শরিফ শিক্ষা দেওয়া হবে।

খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ যতোদিন থাকবে শিক্ষকদের চাকরিও ততোদিন থাকবে। এছাড়া দক্ষতা অর্জনে কয়েদী ও বয়স্কদেরও শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

সচিব আরও জানান, প্রাক-প্রাথমিক অবস্থায় শিশুদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষাও দেওয়া হবে প্রকল্পের আওতায়। এই লক্ষ্যেই প্রকল্পের আরও একটা সংশোধন আসছে।
 
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কোরআন শিক্ষা ছাড়াও জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সারাদেশের মসজিদগুলোতে একটি সুসংগঠিত প্রাক-প্রাথমিক শিশু শিক্ষা ব্যবস্থা করা হবে বাড়তি ব্যয়ের আওতায়। এর আওতায় ৩২ হাজার শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৪ লাখ ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্রাথমিক শিশু শিক্ষা দেওয়া হবে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ানোর লক্ষ্যে এ প্রকল্প থেকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তকারী শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিশুকে সহায়তা করা হবে। দেশের যেসব এলাকায় স্কুল নেই সেখানে এ প্রকল্পের আওতায় মসজিদভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষাও দেওয়া হবে।
 
এ প্রকল্পের আওতায়, শিশুর পাশাপাশি বয়স্ক স্তরের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি ও সচেতনতা বাড়ানো হবে। ৯৬ হাজার বয়স্ক ও নিরক্ষর ব্যক্তিকে শিক্ষাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
 
প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজার ৫০টি রিসোর্স সেন্টার খোলা হবে। জেলখানার কয়েদীদেরও স্বাক্ষরজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হবে। যেন কয়েদীদের মধ্যে ইতিবাচক নিয়ম শৃঙ্খলা, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধভিত্তিক জ্ঞান বাড়ে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৭
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।