ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বিয়ের অনুষ্ঠান দাওয়াত আপ্যায়ন ও রীতিপ্রথা প্রসঙ্গে ইসলাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
বিয়ের অনুষ্ঠান দাওয়াত আপ্যায়ন ও রীতিপ্রথা প্রসঙ্গে ইসলাম বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য শরিয়া অনুমোদিত সাজসজ্জা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে

বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনাকে দাওয়াত দেওয়া হলে আপনি তাতে অংশ নেবেন। যদি এ ধরনের অনুষ্ঠানে হারাম কিছু না থাকে তবে সেই দাওয়াত গ্রহণ করা সুন্নত। কেননা ইসলামের স্বীকৃতি মতে বিয়ে একটি ইবাদত ও আনুগত্যের স্মারক।

ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, মসজিদে আকদ করা মুস্তাহাব। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা এই বিবাহের ঘোষণা দাও।

এটা মসজিদে সম্পন্ন করো এবং বিবাহ উপলক্ষে দফ (যার ওপরের অংশ চালুনির মতো, যাতে ঘন্টির মতো আওয়াজ নেই, আর তার একাংশে থাকে চামড়ার পর্দা। যারা সরাসরি আরবে দফ দেখেছেন, তাদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, দফের এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না) বাজাও। ’ –তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ

মানুষের মাঝে বিবাহের কথা প্রচার করা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশংসনীয়। অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘হালাল ও হারামের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী হলো- বিয়ের সময় দফ বাজানো এবং তা জনসম্মুখে প্রচার করা। ’ –তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ

অতএব বুঝা গেলো হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ের অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অনুমতি দিয়েছেন। এই অনুমতি মহিলাদের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে প্রযোজ্য। আর বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, বিয়ে সম্পাদিত হয়েছে, এ কথা মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার করার জন্য পুরুষদের বেলায়ও প্রযোজ্য। বিয়ে সম্পাদিত হয়েছে, এ কথা মানুষের মাঝে ঘোষণা করার দ্বারা শরিয়তের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে, তা হলো- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পবিত্র বন্ধন ও অবৈধ প্রেমের মাঝে পার্থক্যের দাগ টেনে দেয়। মানুষ যেনো তাকে আর অহেতুক সন্দেহ না করতে পারে। তাই হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হালাল ও হারামের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী হলো বিয়ের মধ্যে দফ বাজানো এবং তা জনসম্মুখে প্রচার করা। ’ –তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ

তাই বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনার অংশগ্রহণ মানে কাঙ্ক্ষিত ঘোষণার সফল বাস্তবায়ন এবং বিয়ে সংঘটিত হওয়ার সাক্ষীকে মজবুত করা। তাছাড়া এর মাধ্যমে আপনার মুসলিম ভাই ও বোনের এমন একটি সৎকাজে অংশগ্রহণ করা হচ্ছে, যে সৎকাজটি দ্বারা তারা দ্বীনের অর্ধাংশ অর্জন করেছে। আর এতে করে সহজ হয়ে যাবে দ্বীনের বাকি অংশ লাভ করা। তাই আপনি দাওয়াতে যাওয়ার সময় নিয়ত করে নেবেন যে, আপনি একটি বরকতমণ্ডিত কাজে অংশগ্রহণ করছেন। শরিয়াসিদ্ধ একটি অনুষ্ঠানে আপনি উপস্থিত হচ্ছেন। যেখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ রয়েছে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের।  
আর আমি বানিয়েছি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায়
বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য শরিয়া অনুমোদিত সাজসজ্জা করবেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যখন পরস্পর সাক্ষাত করতেন, তখন এর আগেই তারা পরিপাটি হয়ে থাকতেন। অনুষ্ঠানে গিয়ে আনন্দ ও প্রফুল্লতায় ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী কোনো কর্মকাণ্ড ঘটাবেন না। আর নবদম্পতিকে অভিবাদন জানানোর ক্ষেত্রে তা যেনো হয় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ মতো। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবদম্পতিদের জন্য নবী করিম (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য বরকত দান করুন, তোমাদের ওপর বরকত নাজিল করুন এবং তোমাদেরকে কল্যাণের মধ্যে একত্রিত করুন। ’ –তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ

বিশ্রী বা অভদ্র কোনো ভাষায় অভিবাদন জানাবেন না। কেউ কেউ এমনটি করে থাকে। এটি জাহেলি যুগের প্রথা। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করতে নিষেধ করেছেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, যখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিবাহ করেন তখন আমার মা আমার কাছে এলেন এবং আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করালেন, আমি সেখানে কয়েকজন আনসারি মহিলাকে দেখলাম। তারা মঙ্গল, বরকত ও সৌভাগ্য কামনা করে দোয়া করছিলেন। -সহিহ বোখারি

ইসলামি শরিয়ত নারীদেরকে বাসর ঘরে বৈধ সংগীত পরিবেশন, দফ বাজিয়ে কবিতা আবৃত্তি ও সুন্দর সুন্দর কথা বলার অনুমতি দিয়েছে। তবে শর্ত হলো- তাতে অবৈধ ও অশালীন কিছু থাকতে পারবে না। এসব হতে হবে সব ধরনের পাপাচার ও অশ্লীলতা মুক্ত। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একজন নববধুকে জনৈক আনসারি বরের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এমতাবস্থায় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আয়েশা! তোমাদের কাছে কি আনন্দ বিনোদনের কিছু নেই? মদিনার আনসারিরা বিনোদনে বিমুগ্ধ হয়। ’ –সহিহ বোখারি

দফ বাজানো এবং শরিয়তসম্মত সংগীত দ্বারা আনন্দ উপভোগ এখানে উদ্দেশ্য। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, বিয়ে উপলক্ষে বালিকারা সুস্থ বিনোদনমূলক এ ধরনের গীত গাইতে পারবে। তবে অবৈধ প্রেম-প্রীতির সঙ্গে সম্পর্কিত ও অনর্থক গান পরিত্যাজ্য ও হারাম। -তাবারানি

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।