ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বৃক্ষ রোপনে অপরিসীম সওয়াব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
বৃক্ষ রোপনে অপরিসীম সওয়াব ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছে

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা অপরিসীম। গাছপালা ও বনভূমি যেমনিভাবে আমাদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে ঠিক তেমনিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকেও পরিবেশকে রক্ষা করে।

গাছপালা ও বনভূমি ছাড়া মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণ অসম্ভব। যথেষ্ট পরিমাণে গাছপালা ও বনভূমি না থাকলে পরিবেশ হবে উষ্ণ, পৃথিবী হবে মরুভূমি- ধূলিকাময়।

এতে পরিবেশ হবে বিপন্ন। মানুষ পতিত হবে বহুল বিপর্যয়ে।  

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশের মোট বনভূমির আয়তন হচ্ছে- ১৭.৪ ভাগ। এদেশের ভারি জনসংখ্যার তুলনায় বনভূমি খুবই কম। দিন দিন কমে যাচ্ছে বনভূমির আয়তন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু কিছু কেটে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে। মানুষের কাঠ ও জ্বালানী কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে বনভূমি। নগরায়ন ও শহরায়নের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলেও ধ্বংস হচ্ছে বনভূমি। বিলুপ্ত হচ্ছে জীবজন্ত ও বন্যপ্রাণী। এতে হুমকির মুখে পড়ছে দেশ ও দেশের মানুষ। শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবী থেকেও বনভূমি দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে বেশি বেশি বৃক্ষ রোপন করে বাংলাদেশের বনভূমিকে মোট আয়তনের ২৫ ভাগে নিয়ে যাওয়ার।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ইসলাম বৃক্ষ রোপনের তাগাদা দিয়েছে। এমনকি বৃ্ক্ষ রোপনকে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে। বৃক্ষ রোপনের পর যতদিন পর্যন্ত মানুষ ও জীবজন্তু ওই বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত ফল ভোগ করবে, ছায়া পাবে, ততদিন পর্যন্ত রোপনকারীর আমলনামায় সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব লেখা হতে থাকবে।

সহিহ বোখারির হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি বৃক্ষ রোপন করে কিংবা ফসল উৎপন্ন করে আর তা থেকে মানুষ ও পশু-পাখি ভক্ষণ করে, তাহলে উৎপন্নকারীর আমলনামায় তা সদকার সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে। ’

পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকার জন্যে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও ফসলাদি উৎপন্ন করার জন্যে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে পরিমিত বৃষ্টি বর্ষণ করেন। যাতে মাটি রসালো হয় এবং গাছপালা, তরুলতা সতেজ হয়ে ফুল-ফল উৎপন্ন ও ছায়াদান করে পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্যে উৎপন্ন করি ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্ব প্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। ’ –সূরা নাহল: ১১

কোরআনে কারিমের অন্যত্র আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি ঊষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদগত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা এবং তারা। তারা কি দেখে না। ’ -সূরা সেজদাহ: ২৭

এ সমস্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা পরিবেশের ভারসাম্যকে সতেজ করেন। তাই এটাকে রক্ষা করার, পরিচর্চা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আরেকটি হাদিস দ্বারা পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের তাগাদা সম্পর্কে বুঝা যায়। বৃক্ষ রোপনের গুরুত্ব বুঝাতে তিনি বলেন, ‘যদি নিশ্চতভাবে জানো যে, কিয়ামত এসে গেছে এবং ওই মুহূর্তে গাছের চাড়া হাতে থাকে আর তা রোপন করা সম্ভব হয় তাহলে তা রোপন করে দিবে। ’

বর্ণিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) অযথা কোনো গাছের পাতা ছিড়তেও নিষেধ করেছেন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।