ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

কওমি সনদের স্বীকৃতির উদ্যোগ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
কওমি সনদের স্বীকৃতির উদ্যোগ কওমি মাদরাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

কওমি মাদরাসার শিক্ষাসনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও উন্নয়ন) সভাপতিত্বে ২৮ মার্চ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের নিয়ে বৈঠক আহবান করা হয়েছে।

বৈঠকে দেশের ৬টি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সভাপতি ও মহাসচিবদের আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।  

বৈঠকে কওমি সনদের স্বীকৃতির রূপরেখা ও কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার হবে কিনা এমন প্রশ্নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও উন্নয়ন) এফ. এম. এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বৈঠকে আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।

’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা সম্মানিত আলেমদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে বসব। আলোচনা হবে, আশা করি এর মধ্য দিয়ে কল্যাণকর কিছু বের হয়ে আসবে। ’

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘কওমি মাদরাসার তরুণরা তো আমাদেরই সন্তান। তাদের উন্নয়নে আলেমরা কাজ করছেন।  সরকারও তাদের নিয়ে ভাবছে। ’

বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী, গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন, জামিয়া ইকরার মহাপরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, বসুন্ধরা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আরশাদ রহমানী, চট্টগ্রাম জামেয়া দারুল মাআরিফের প্রিন্সিপাল মাওলানা সুলতান যওক নদভী, সিলেট বারকুটি মাদরাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা হোসাইন আহমদ বারকুটি, আফতাবনগর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মুহাম্মদ আলী, ফরিদাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, গোপালগঞ্জ গওহরডাঙ্গা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা শামসুল হক, পটিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল হালিম বোখারি, দিনাজপুর বাংলা হিলি মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হারুনুর রশিদ ও সিলেট দক্ষিণকাছ ইসলামিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল বাসেত বরকতপুরি।  

বেসরকারিভাবে পরিচালিত কওমি মাদরাসা মূলত ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে থাকে। অন্যসব মাদরাসার শিক্ষাসনদের স্বীকৃতি থাকায় এবং তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ পেলেও বঞ্চিত হয়ে আসছে কওমির লাখ লাখ শিক্ষার্থী।

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় থেকে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা তাদের সনদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) সভাপতি ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামীর আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশন নামে ১৭ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করে।

২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আহবানে হাটহাজারীতে ৬ বোর্ডের নেতাদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়
ওই কমিশনের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন জামিয়া ইকরার মহাপরিচালক ও শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। সদস্য সচিব করা হয় গোপালগঞ্জের গওহরডাঙা মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি রূহুল আমীনকে।

আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করে বৈঠকও করেন আল্লামা আহমদ শফী। বৈঠকে কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিব পদে পরিবর্তন এবং বেফাকের নামে কওমি সনদের স্বীকৃতি, বেফাককে অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় করা, সরকারি অনুদান গ্রহণ না করা ও কওমি মাদরাসার পাঠপদ্ধতি পরিবর্তন না করাসহ আটটি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
 
কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে আল্লামা শফীর দাবি পূরণ না হওয়ায় কাউকে কিছু না জানিয়ে কমিশন থেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েন তিনি ও বেফাকের সদস্যরা। পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়া হয়। সুপারিশে কারিকুলাম, শ্রেণিবিন্যাস থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগবিধি, পরীক্ষাপদ্ধতি ও সনদের সমমান প্রদানের পক্ষে  বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।  

ওই সুপারিশের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন -২০১৩’ নামে একটি খসড়া আইন তৈরি করা হয়।  

এমতাবস্থায় ২০১৩ সালে শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম। নানা ঘটনার পর ওই বছরের শেষ দিকে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।  

এমতাবস্থায় কওমি সনদের বিষয়কে হেফাজতে ইসলাম ভিন্ন চোখে দেখে সরকারের উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে। এমনকি এ নিয়ে হেফাজতে ইসলাম দেশে গৃহযুদ্ধেরও হুমকি দেয়। ফলে পিছু হটে সরকার। এরপর বেশ কিছুদিন থেমে থাকে কওমির স্বীকৃতির বিষয়।  

পরে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে সুপারিশ পেশ করার জন্য আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুরু হয় আবার বিতর্ক।

কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের নেতৃবৃন্দ ও দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেমরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আহবানে হাটহাজারী মাদরাসায় ৬টি বোর্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) ৭ জন ও বাকি পাঁচ বোর্ডের ১৫ জনকে নিয়ে ২২ সদস্যের ‘দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করা হয়।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও মহাসচিবদের নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বৈঠকটি আহবান করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্তমূলক কিছু বের হয়ে আসবে।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭/আপডেট ২০১৬ ঘণ্টা
এমএইউ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।