ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

শান্তি প্রতিষ্ঠায় ধর্ম পালনের বিকল্প নেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
শান্তি প্রতিষ্ঠায় ধর্ম পালনের বিকল্প নেই জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামধর্মে মানুষের প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি

জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামধর্মে মানুষের প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য ধর্মেও ব্যক্তি মানুষকে কিভাবে সামাজিক মানুষে পরিণত করা যায় সে শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে।

ধর্মের অনেক বিধিবিধান রয়েছে যেগুলো ব্যক্তি ইচ্ছে করলেও একা একা পরিপূর্ণ করতে পারে না; অন্যান্য মানুষেরও সংশ্লিষ্টতা সেখানে থাকে। অর্থাৎ ধর্মের বিধিবিধান অধিকাংশ সময় পরস্পরে মিলে সম্পন্ন করতে হয়।

কোনো একজন মানুষ যখন ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস রাখে তখন তাকে মুসলিম বলা হয়। এই মুসলিমকে ধর্মের আদেশ নিষেধ পালন করতে হয়। ইসলাম ধর্মের বিধিবিধানগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে তা সমাজের বাইরে পালন করা যায় না; সমাজের ভেতরেই পালন করতে হয়। ধর্ম পালন করার জন্য ধার্মিককে বনেজঙ্গলে যেতে হয় না এবং সেখানে যাওয়ার কোনো সম্মতিও নেই। সমাজেই ধর্ম পালন করতে হবে এবং সমাজকেই ধর্মের বিধিনিষেধের ভেতরে নিয়ে আসার নির্দেশ রয়েছে।

সমাজের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ম নতুন কোনো তত্ত্ব নয়। মানুষ যখন থেকে পৃথিবীতে এসেছে ধর্মও তখন থেকে পৃথিবীতে। মানুষ সমাজ তৈরি করেছে আর সমাজকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ধর্ম এসেছে। ধর্ম ব্যক্তিগত হলে ধর্ম এতকাল টিকে থাকতে পারত না। সমাজের প্রয়োজনেই ধর্মকে টিকে থাকতে হবে অথবা সমাজই ধর্মকে টিকিয়ে রাখবে। ধর্ম মানুষের জন্য আর মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে বেঁচে জীবন ধারণ করে।

ইসলামধর্মের মৌলিক বিষয় বা স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। যথা- তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা, নামাজ প্রতিষ্ঠিত করা, জাকাত প্রদান করা, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ (হজ) করা এবং রমজান মাসের ফরজ রোজা পালন করা। এগুলোর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে জীবনে বাস্তবায়িত করার নামই ধর্ম।

এ সবে কোনো মানুষ বিশ্বাস করবেন কিনা সেটা সে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু যখনই কোনো মানুষ এসবে বিশ্বাস স্থাপন করবেন তখনই এসব পরিপূর্ণ পালন করার জন্য মানবসমাজকে প্রয়োজন পড়বে। ধর্ম যদি ব্যক্তিগত হয় তাহলে নিজ বাড়িতে ঘরের কোনায় কাবাঘর তৈরি করে হজ পালন করতে হবে। জাকাতের অর্থকে নিজের জামাকাপড় কেনার জন্য ব্যবহার করতে হবে। নামাজ যদি ব্যক্তিগত হয় তাহলে আপনি নামাজ পড়বেন কিনা সেটাও ব্যক্তিগত হয়ে যায়। কিন্তু নামাজকে যখন যেভাবে যে সময়ে পড়ার নির্দেশ রয়েছে সেভাবেই সে সময়ে পড়তে হবে। নামাজ ব্যক্তিগত নয় বলেই ইচ্ছামতো পড়া যায় না।
নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে
ইসলামধর্ম যে সমাজনির্ভর ধর্ম তার উদাহরণ হতে পারে নামাজ। ইসলাম ধর্মের অন্যতম বিধান নামাজ পড়া। মুসলিমকে একা একা নামাজ পড়া থেকে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যাপারে জোরালো তাকিদ দেওয়া হয়েছে।

নামাজের উপকারিতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনি পাঠ করুন কোরআন হতে যা আপনার ওপর নাজিল করা হয়েছে, আর নামাজ কায়েম করুন; নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে; আল্লাহর জিকির সর্বোত্তম, আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা অবগত আছেন। ’ -সূরা আনকাবুত: ৪৫

তাহলে নামাজ পড়া ব্যক্তির খারাপ কাজ না করা মানে সে নিজের এবং সমাজের অন্য মানুষের অনিষ্ট করা থেকে নিজেকে দূরে রাখাকে বুঝায়। অর্থাৎ নামাজ পড়া ব্যক্তির দ্বারা সমাজের অন্য মানুষদের উপকার না হলেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকতে পারে। ধর্মের এই বিধান সম্পূর্ণভাবে সমাজনির্ভর বলা যেতে পারে।

ইসলাম ধর্মের আরেকটি বিধান হলো- বিত্তবান লোকের জন্য সম্পদের জাকাত আদায় করা অত্যাবশ্যক। ধর্মের  নির্দেশিত পন্থায় আদায়কৃত জাকাতের অর্থ সমাজের আট শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বণ্টন করার হুকুম রয়েছে। এই আট শ্রেণীর মানুষ হচ্ছে নিকটাত্মীয়দের মধ্য থেকে যারা- ‘ফকির, মিসকিন, মুসাফির, ঋণগ্রস্ত, ক্রীতদাস, জাকাত আদায়কার্যে নিযুক্ত কর্মচারী, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষে এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। ’ -সূরা তওবা:  ৬০

আদায়কৃত জাকাতের অর্থ গরু ছাগল, পশুপ্রাণীকে দিয়ে দিতে বলা হয়নি কিংবা নদীনালা, খালবিল, সাগর মহাসাগরেও ফেলে দিতে বলা হয়নি। ধর্মের এই হুকুমটি পালন করতে গেলে অবশ্যই সমাজের মানুষকে প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং ধর্ম এখানেও সামাজিক হয়ে ওঠে। আবার আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিকে ধর্ম দান সদকা করতে উৎসাহিত করেছে। যারা দান করেন তারা কোনো পশুপাখি, ছাগলভেড়াকে দানের অর্থকড়ি দিয়ে দেন না। দাতা সমাজের মানুষের মধ্যেই দানের অর্থ বিলিয়ে দেন। এখানেও ধর্ম সামাজিক দায়িত্ব পালন করে।

ধর্মের আরেকটি নির্দেশনা রয়েছে। সেটি হলো- কোরবানি করা। কোরবানির পশু শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে জবাই করা হয়। জবাই করা পশুর গোশত ও চামড়া সমাজের মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার বিধান রয়েছে। কোরবানিও সামাজিক ইবাদত হিসেবে পরিগণিত। পিতা-মাতার হক আদায় করা এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা ধর্মের নির্দেশনা। প্রতিবেশী সমাজেরই মানুষ। সুতরাং ধর্মের অপব্যাখ্যা প্রতিরোধে ঐকবদ্ধ থাকা জরুরি কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।