ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

‘অধীনদের সঙ্গে অসদাচরণকারী বেহেশতে যেতে পারবে না’

মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
‘অধীনদের সঙ্গে অসদাচরণকারী বেহেশতে যেতে পারবে না’ অধীনদের সঙ্গে অসদাচরণকারী বেহেশতে যেতে পারবে না

ইসলাম ধর্মের বিধান হলো- শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি প্রত্যেক শ্রমিকের প্রয়োজন ও কর্মানুসারে নির্ধারিত হবে। আর শ্রমিককে কমপক্ষে এমন মজুরি দিতে হবে, যাতে সে এর দ্বারা তার ন্যায়ানুগ ও দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে।

শ্রমে নিযুক্ত প্রতিটি শ্রমিকেরই ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে। এ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না।

শ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্য মজুরি পরিশোধের বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। ’ -ইবনে মাজাহ

কাজ সম্পাদন করামাত্রই শ্রমিককে তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক প্রদান করা মালিকের সর্বপ্রধান দায়িত্ব। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হলো- শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে। যেমনটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিকের পারিশ্রমিক নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিযুক্ত করবে না। -সহিহ বোখারি

শ্রমিকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। কারণ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ উত্থাপন করবেন। তন্মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছে, যে ব্যক্তি কাউকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করে, তার দ্বারা পূর্ণ কাজ আদায় করা সত্ত্বেও তাকে পারিশ্রমিক প্রদান করে না। ’ –সহিহ বোখারি

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘অধীনদের সঙ্গে অসদাচরণকারী বেহেশতে যেতে পারবে না। ’ –তিরমিজি

জীবিকা অর্জনের অন্যতম উপায় শ্রম। এ কারণে নবী করিম (সা.) শ্রম বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘শ্রমজীবীর উপার্জনই উৎকৃষ্টতর, যদি সে হয় সৎ উপার্জনশীল। ’ -মুসনাদে আহমদ

যুগে যুগে প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ শ্রমলব্ধ উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল পথে শ্রম বিনিয়োগ বিন্দুমাত্রও লজ্জার ব্যাপার নয়। বরং এ হচ্ছে নবীদের সুন্নত। মুসতাদরাকে হাকিমে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, হজরত দাউদ (আ.) লোহার বর্ম তৈরি করতেন। হজরত আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন। হজরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। হজরত ইদরিস (আ.) সেলাইয়ের কাজ করতেন এবং হজরত মূসা (আ.) রাখালের কাজ করতেন।  

প্রিয় নবীর সাহাবারা নিজেরা যেমন শ্রমদানে অভ্যস্ত ছিলেন, তেমনি অন্যদেরও শ্রমদানের প্রতি উৎসাহিত করতেন। নবী কন্যা হজরত ফাতেমার (রা.) বিষয়ে উল্লেখ আছে, পানি টানতে গিয়ে তার বুকেপিঠে দাগ পড়ে যেত, যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে হাতে ফোসকা পড়ে যেত, তবুও তিনি শ্রম-বিমুখ হননি।

এমনকি মানবসেবার মূর্ত প্রতীক মহানবী (সা.) খন্দক যুদ্ধের প্রাক্কালে নিজ হাতে পরিখা (দূর্গ) খনন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখে বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের মহান পেশাকে সম্মানিত করেছেন।

শ্রমের এমন গুরুত্বের কারণেই ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তিকে নিষেধ করেছে। বর্তমান বিশ্বে দেশে-বিদেশে ভিক্ষাবৃত্তি একটি ব্যাধিতে রূপ নিয়ে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদের দেশে অগণিত ভিক্ষুককে কর্ম ও শ্রমের প্রতি নিদারুণ অনীহা পেয়ে বসেছে। ফলে তারা ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে উপার্জনে নেমে যাচ্ছে। এটা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তিকে পছন্দ করে না। তাই তো নবী করিম (সা.) ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহের প্রতি জনৈক ভিক্ষুককে শিক্ষা দিয়েছিলেন।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।