ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

পরকালের জবাবদিহিতার প্রস্তুতি দুনিয়া থেকেই নিতে হবে

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৬ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
পরকালের জবাবদিহিতার প্রস্তুতি দুনিয়া থেকেই নিতে হবে কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে পাচঁটি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে- (ছবি: প্রতীকী)

কিয়ামত একটি ভয়াল দিনের নাম। এটা কখন কিভাবে শুরু হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কারও জানা নেই। কিয়ামতের দিন সকল সৃষ্টিকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে পাচঁটি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। 

এ সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, (কিয়ামতের মাঠে) পাঁচটি বিষয়ে জবাব না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানব সন্তানের পা উঠাতে দেওয়া হবে না। ক. জীবন কীভাবে শেষ করেছ? খ. যৌবন কিভাবে অতিবাহিত করেছ? গ. ধনসম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছ? ঘ. কোন পথে ধনসম্পদ তা ব্যয় করেছ? এবং ঙ. অর্জিত জ্ঞানের কতটুকু আমল করেছ?

আমরা জানি, জীবন মূলত কতগুলো মুহূর্তের সমষ্টি।

জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর একক নিয়ন্ত্রণে। এর মাধ্যমে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। কে সৎ কাজ করে আরকে অসৎ পথে জীবন ব্যয় করে। পরীক্ষার জন্যে যে জীবন নির্দিষ্ট, তা যেনতেনভাবে ব্যয় করার সুযোগ নেই। আর আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে না পারার পরিণতি যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন যৌবনের শক্তি ও যোগ্যতা কোথায় ব্যয় করা হয়েছে- এ প্রসঙ্গে। বলা চলে, যৌবন হচ্ছে জীবনের বসন্ত কাল। যে কেউ যৌবনের শক্তি ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে মানবতার কল্যাণে অনেক কিছু করতে পারে। আবার এই শক্তিকে জুলুম অত্যাচার-অনাচার সৃষ্টিতে লাগাতে পারে। অনেকে ধারণা করে জীবন ও যৌবনে অনাচার করলেও বুড়ো বয়সে নেক কাজে আত্ম নিয়োগ করব। এমন আশা পোষণের কোনো মূল্য নেই। কারণ, আগামীকাল বেঁচে থাকার কোনো গ্যারান্টি কারও নেই। পক্ষান্তরে যৌবনকাল বিষয়ে যেহেতু প্রশ্ন হবে, তাই তা চলে যাওয়ার আগেই সবাইকে সর্তক হতে হবে।

এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচটি বিষয়কে অপর পাঁচটি বিয়ষের পূর্বে গুরুত্ব প্রদান করো- ক. যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে। খ. সুস্থতাকে রোগাক্রান্ত হওয়ার আগে। গ. সচ্ছলতাকে দরিদ্র হওয়ার আগে। ঘ. অবসরকে ব্যস্ত হওয়ার আগে। ঙ. হায়াতকে মৃত্যু আসার আগে। -তিরমিজি শরীফ

তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্নে বলা হয়েছে, মালসম্পদ কোথায় হতে উপার্জন করেছ এবং কোথায় ও কিভাবে তা ব্যয় করেছে?

জ্ঞানীরা বলেছেন, দুনিয়ার মোহ মানুষের স্বভাব জাত। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘অব্যশই মানব হৃদয়ে সম্পদের মোহ অতি প্রবল। ’ -সূরা আদিয়াত: ৮
এটা কখন কিভাবে শুরু হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কারও জানা নেই।  কিয়ামতের দিন সকল সৃষ্টিকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে
সম্পদ মানুষের জীবনের অপরিহার্য এক বিষয়। এটা ছাড়া জীবনের এক দিনও অতিবাহিত করা যায় না। কিন্তু এর একটি সীমা আছে। আল্লাহতায়ালা ধনসম্পদ উপার্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-বিধান বর্ণনা বলে দিয়েছেন। যেমন ব্যবসাকে হালাল করেছেন আবার সুদকে হারাম করেছেন। ইসলামের এ বিধানগুলো রক্ষা করে চলতে হবে। হালাল পথে উপার্জন করে হালাল পন্থায় খরচ করতে হবে।

শেষ প্রশ্ন করা হবে- অর্জিত জ্ঞানের কতটুকু আমল করা হয়েছে এ বিষয়ে। বলা হয়, যে জ্ঞানী তার অর্জিত জ্ঞানের ওপর আমল করে না সে জ্ঞানকে অসম্মানিত করে। এখানে ইলম বলতে অহির জ্ঞানকে বুঝানো হয়েছে। সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে আজ যে অবক্ষয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর মূলে রয়েছে মানুষের অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করা। হাদিসে এ সম্পর্কেই বলা হয়েছে। বস্তুত শুধু জানাটাই মুক্তি নয় বরং মানায় মুক্তি। কিয়ামতেও প্রশ্ন হবে জানার কতটুকু মানা হয়েছে এ বিষয়ে। আমলকে মিজানের পাল্লায় তোলা হবে এবং এর ওপর জান্নাত-জাহান্নামের ফায়সালা হবে।

হাদিসের শিক্ষা 
১.
কিয়ামত একটি কঠিন ও ভয়াবহ দিন। সমগ্র সৃষ্টি ওই দিন আল্লাহর কাছে হাজির হবে। ন্যায় ও অন্যায়ের বিষয়ে বিচার করে আর জান্নাতি ও জাহান্নামি কারা তা ঘোষণা হবে।

২. যে প্রশ্ন হাশরের মাঠে হবে। এর প্রস্তুতি দুনিয়ার জীবন থেকে মৃত্যুর আগেই শেষ করতে হবে। নতুবা তখন আফসোস করে কোনো লাভ হবে না।

৩. জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান ও আল্লাহর দান। একে অপচয় করা যাবে না, জীবনকে সঠিক পথে ব্যয় করতে হবে।

৪. যৌবনকে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। যাবতীয় সীমা লঙ্ঘন ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে।

৫. জীবন পরিচালনায় হালাল রুজি অন্বেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। হারামের রাজপথ ছেড়ে দিয়ে হালালের কণ্টকাকীর্ণ গলিপথে চলিতে হবে।  

৬. কোনো অবস্থায় হারামের পথে মাল-সম্পদের এক কণাও ব্যয় করা যাবে না।

৭. জ্ঞান শুধু অর্জন করাই সার্থকতা নয় বরং অর্জিত জ্ঞানকে আমলে রূপান্তর করাই সফলতা। সফলতার ফায়সালা হবে আমলের ওপর।

বর্ণিত প্রশ্নের আলোকে সবার জীবন গড়ে তোলা দরকার। কারণ, এক একটি প্রশ্নের মধ্যে সমগ্র জীবন রয়েছে।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে কিয়ামতের কঠিন সংকট উত্তরণে প্রস্তুত হওয়ার তওফিক দিন। আমিন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।