হজরত আলী (রা.)-এর বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন শাবানের পঞ্চদশ রজনীর আগমন ঘটে, তখন তাতে কিয়াম অর্থাৎ ইবাদত করো, আর দিনে রোজা রাখো। নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা সূর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ জ্যোতি বর্ষণ করেন এবং বলেন, আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেউ আছো কি? তাকে ক্ষমা করে দেবো।
কোনো কোনো আলেমের অভিমত, কোরআনে কারিমে বরকতময় রজনী বা ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ হিসেবে শবে বরাতের উল্লেখ রয়েছে।
হাদিস শরিফে শবে বরাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যরজনী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সূরা দুখানে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘আমরা এই কোরআনকে এক মহিমাময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আমরা অবশ্যই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে ওই রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে ফয়সালা করা হয়। আর নিশ্চিতভাবেই আমিই প্রেরণকারী। ’
এই আয়াতকে সাধারণত শবে কদর সংশ্লিষ্ট মনে করা হয়। তবে যারা আয়াতটির অর্থকে সম্প্রসারিত করে শবে বরাতকে বুঝিয়ে থাকেন, তাদের বক্তব্য হলো, ‘মধ্য শাবানের এই রাতে পুরো কোরআনে কারিম বাইতুল মামুর থেকে দুনিয়ার আসমানে এসেছিল। তারপর লাইলাতুল কদরের রাতে এর প্রথমাংশ নাজিল হয়েছিল। শবে কদর বা লাইলাতুল কদরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে প্রত্যেক প্রজ্ঞাময় বিষয় নির্ধারিত হয়। ’
এভাবে এই দু’টি পবিত্র রজনীকে সম্পর্কিত ও সমন্বিত করা হয়েছে।
শবে বরাতের উল্লেখ দেখা যায় ইমাম তিরমিজি বর্ণিত হাদিসেও। এতে বলা হয়েছে, ‘এক রাতে মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা.) ঘুম থেকে জেগে গেলেন। কিন্তু নবী করিমকে (সা.) বিছানায় দেখতে পেলেন না। হজরত আয়েশা (রা.) তাই তাকে খুঁজতে বের হলেন। তিনি নবী করিমকে (সা.) দেখতে পান কবরস্থানে। মুহাম্মদ (সা.) বললেন, ১৫ শাবান রাতে সর্বনিম্ন আকাশে আল্লাহতায়ালা অবতরণ করেন এবং (আরবের) কালব গোত্রের ছাগলের গায়ের পশমের চেয়েও অধিকসংখ্যক মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য মাফ করে দেন। ’
উল্লেখ্য, তখন কালব গোত্রটি ছাগল পালনের জন্য সুপরিচিত ছিল এবং তাদের মালিকানায় থাকত অসংখ্য ছাগল। ইমাম তিরমিজি জানিয়েছেন, হজরত আবু বকর (রা.)ও একই ধরনের হাদিস বর্ণনা করেছেন।
যা হোক, শবে বরাত সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে, কিছু ভুল আমলও অনেকে করে থাকেন এ উপলক্ষে। এসব থেকে বিরত থেকে সহিহ নিয়তে ও নিয়মে ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে শবে বরাত অতিবাহিত করাই মুমিন হিসেবে আমাদের সবার কর্তব্য।
অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, আতশবাজি, গোরস্থানে আগরবাতি, বিশেষ আইটেমের খাবার উপভোগ, ইত্যাদি অর্থহীন ও অপচয়মূলক কাজ বর্জন করাই কল্যাণকর। শবে বরাত উপলক্ষে নামাজ-রোজার পাশাপাশি, কায়মনোবাক্যে আল্লাহ দয়াময়ের কাছে নিজ নিজ গোনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। দেশ ও সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির দোয়াও করতে হবে।
পরিশেষে বলতে হয়, বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যে, শিরক, পরশ্রীকাতরতা, মাতাপিতার অবাধ্যতা, আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ, ব্যভিচার, মদ্যপান বা নেশা করা, প্রভৃতি কাজ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দোয়া কবুল হবে না। তাই বিশেষ করে, এসব অপকর্ম সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে। আর এটা শুধু আজ রাতের জন্য নয়, সব সময়ের জন্য। তবেই শবে বরাত হবে আমাদের জীবনের জন্য কল্যাণবাহী। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুন:
**শবে বরাতে বায়তুল মোকাররমে ইসলামি অনুষ্ঠান
** শবে বরাতে নবী করিম সা. যেসব আমল করেছেন
** শাবান মাসের রোজাকে ভালোবাসা ফজিলতের কাজ
** পবিত্র শবে বরাত: মুক্তির রাত মুক্তির নিশ্চয়তা
** ক্ষমার রাত শবে বরাতেও যারা ক্ষমা পাবে না
** শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি কোনোটাই কাম্য নয়
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
এমএইউ/