ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

রেডিও-টিভির আজান শুনে ইফতার নয়

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৭
রেডিও-টিভির আজান শুনে ইফতার নয় মসজিদে আজান (প্রতীকী)

ইফতার রোজার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। রোজা রেখে কখন ইফতার করতে হবে তা কোরআনে কারিমে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘অত:পর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো। ’

যেহেতু সূর্যাস্তের পর থেকে রাত শুরু হয় সেহেতু সূর্যাস্তের পর ইফতার করতে হবে।

সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে কোনো অবস্থায়ই রোজা শুদ্ধ হবে না। সূর্যাস্ত হয়নি জানার পরেও কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতার করে তবে তার রোজা ভেঙে যাবে এবং অবশ্যই তাকে কাফফারাস্বরূপ একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে।

আর যদি কেউ সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করে এবং পরে জানা যায় যে, তার ধারণা ভুল ছিল। সে যখন ইফতার করেছে তখন সূর্যাস্ত হয়নি। তাহলে তাকে পরবর্তীতে একটি কাজা রোজা রাখতে হবে।

আমাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো যথাসময়ে আজান সম্প্রচার করতে আইনত: বাধ্য নয়। এমনকি যথাসময়ে আজান সম্প্রচার করার ব্যাপারে তারা দর্শকদের কাছেও কোনো প্রতিশ্রুতি কখনও ব্যক্ত করে না। তারা তাদের নিজেদের সুবিধামতো সময়ে আজান সম্প্রচার করে থাকে।

এখানে সুবিধামতো সময় বলতে, বুঝানো হচ্ছে- অনেক টেলিভিশন শুধু রমজানের সময় আজান সম্প্রচার করে, অনেকে আবার শুধু রমজানের মাগরিব ও ফজরের আজান সম্প্রচার করে।

গত ৩ জুন শনিবার বিটিভিতে মাগরিবের আজান সম্প্রচারিত হয় ৬টা ৩৫ মিনিটে। অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী সেদিন মাগরিবের আজান হওয়ার সময় ছিল ৬টা ৪৬ মিনিটে। নির্ধারিত সময়ের ১১ মিনিট পূর্বে আজান সম্প্রচার করার পরেও দর্শকদের কাছে দু:খ প্রকাশের কোনো প্রয়োজন বিটিভি কর্তৃপক্ষ অনুভব করেনি।

এ ঘটনায় ইফতার নিয়ে বিভ্রান্তির শিকার হওয়ায় এক আইনজীবী ড. এনামুল হক খান শিশির রোববার (০৪ জুন) সিএমএম বিচারক মো. আবু সাঈদের আদালতে বিটিভির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত মামলার শুনানি শেষে সেটি আমলে না নিয়ে খারিজ করে দিয়েছেন।

সময় হওয়ার আগে আজান সম্প্রচার করার পর বিটিভি কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ না করা এবং বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক মামলা খারিজ করে দেওয়ার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, আমাদের দেশের রেডিও-টিভি চ্যানেলগুলো রমজান মাসের মাগরিব ও ফজরের আজান নির্ধারিত সময়ে সম্প্রচার করতে আইনত: বাধ্য নয়, এমনকি পেশাগত দায়িত্বের বিবেচনায়ও বাধ্য নয়।

অতএব এ দেশের সরকারি-বেসরকারি রেডিও-টিভির কোনো চ্যানেলের সম্প্রচারিত আজানের ওপর আস্থা রেখে ইফতার করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ।

একজন মুসলমান তার সারাদিনের অনেক কষ্টের রোজাকে শেষ সময়ে এসে এমন দায়িত্বহীন ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারেন না। তাই সকল রোজাদারের উচিৎ, সঠিক সময় জেনে, নিজের ঘড়ি ঠিক রেখে নিজ দায়িত্বে ঘড়ি দেখে সময় মিলিয়ে ইফতার করা। অথবা পার্শ্ববর্তী দু’তিনটি মসজিদের আজান শোনে ইফতার করা।

যে সব দর্শক শনিবার (০৩ জুন) বিটিভির আজান শোনে ইফতার করেছেন তাদের রোজা হয়নি। পরবর্তীতে এ দিনের রোজার কাজা অবশ্যই তাদের আদায় করতে হবে। আর তারা যেহেতু বিটিভির আজান শোনে বিভ্রান্ত হয়েছেন, তাই তাদের সবার রোজা নষ্ট হওয়ার গোনাহ বিটিভি কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে। কাজা রোজা আদায় করে নেওয়ার দ্বারা দর্শকরা মাফ পেয়ে যাবেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ইফতারের সময়ে ভিন্নতা রয়েছে। স্থানভেদে ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ইফতারের সময় ১ মিনিট থেকে ৭ মিনিট পর্যন্ত কম-বেশি হয়ে থাকে। এ পরিস্থিতিতে যদি ঢাকার সময় অনুযায়ী আজান সম্প্রচার করা হয় তবে দেশের যে সব অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ইফতারের সময়ের তারতম্য রয়েছে ওইসব অঞ্চলের রোজাদাররা বিভ্রান্ত হবেন। সেক্ষেত্রে আজানের সময় শুধুমাত্র ডিসপ্লেতে লেখে অন্যান্য অঞ্চলের সময় লিখে দেওয়া যথেষ্ট নয়।

কেননা, অনেকেই এ লেখা দেখার ফুরসৎ পান না। তাই, রেডিও-টিভি চ্যানেলগুলোর উচিৎ সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে এবং নির্ধারিত সময় রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হলে রমজানের মাগরিব ও ফজরের আজান সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া।

আর যদি আজান সম্প্রচার করতেই চায় তাহলে সময়ের ব্যাপারে দর্শকদের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা।

ঢাকার আজান অনুযায়ী আজান দেওয়া হলে শুধুমাত্র ডিসপ্লেতে অন্যান্য অঞ্চলের সময় লিখে না রেখে বরং আজান সম্প্রচারের পূর্বে মৌখিকভাবে এ ঘোষণা দেয়া উচিৎ, ‘এ আজান ঢাকা অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। তাই অন্য অঞ্চলে যারা আছেন তারা এখন ইফতার করবেন না। বরং নিজেদের স্থানীয় সময়সূচি অনুসরণ করে ইফতার করবেন। ’

শনিবার মাগরিবের আজান সম্প্রচার নিয়ে বিটিভি যে ধরনের ব্যার্থতা ও সীমাহীন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তারা অগণিত দর্শকদের বিভ্রান্ত করেছে ও তাদের কষ্টের রোজা নষ্ট করেছে। এমন ভুলের জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর দায় থেকে বাঁচার জন্য বিটিভির উচিৎ অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে দর্শকদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দর্শকদের জানিয়ে দেওয়া যে, ‘যারা শনিবার আমাদের মাগরিবের আজান শোনে ইফতার করেছেন, তারা দয়া করে এ দিনের রোজার কাজা করে নেবেন। ’

আশাকরি দেশের একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে অহমিকার পরিচয় না দিয়ে, নমনীয় হবে এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করে দর্শকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।

মনে রাখতে হবে, জনসাধারণকে সঠিক তথ্য জানানো গণমাধ্যমের দায়িত্ব। ভুল প্রচার করে জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়ানো দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের পরিচয় নয়।

রমজান মাসের মাগরিবের আজান দেশের কোটি কোটি রোজাদারের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য। একে হাল্কা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।