ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

সিঙ্গাপুরে ২০০ বছরের পুরনো মসজিদে

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৭
সিঙ্গাপুরে ২০০ বছরের পুরনো মসজিদে সিঙ্গাপুরে ২০০ বছরের পুরনো মসজিদে-বাংলানিউজ

সিঙ্গাপুর থেকে: থাই নিউজ নেটওয়ার্কের রিপোর্টার কানলেওই ওয়েকলেহং তার সহজ নাম রেখেছে পু পে। পে নামেই তাকে ডাকে সবাই। লাওসবাসীও থাই ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাই লাওসের ভিয়েনতিয়ান পত্রিকার রিপোর্টার পাতিথিন ফেতমেউয়াংফুয়ানের সঙ্গে তার খাতিরও বেশি। পাতিথিনের আরেক নাম কং। এ নামেই তাকে ডাকা সহজ বেশি।

সুলতান মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলাম আমি এবং মুম্বাই মিররের চৈতণ্য। হায় কাণ্ড! পে স্কার্ট পরে আর কং হাফপ্যান্ট পড়ে মসজিদের ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছে।

দূর থেকে এক মুসল্লি মানা করলেও তাদের কানে আসছিল না। আমি আর চৈতণ্য বাধা দিলাম।  

কেন তারা দু’জন এ পোষাকে মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না, সেটা বোঝাতে অনেক সময় লাগলো। মসজিদের ভেতরের অনেক ছবি তুলেছিলাম আমি আর চৈতণ্য। দুইজনকে সেগুলো দেখিয়ে ক্ষ্যান্ত করলাম।

সিঙ্গাপুরের ২০০ বছরের পুরনো মসজিদেশনিবার ছুটির দিন হওয়ায় দল বেঁধে সবাই ঘুরতে গিয়েছিলাম আরব স্ট্রিটে। থাইল্যান্ডের আরব স্ট্রিটের মতোই সিঙ্গাপুরের আরব স্ট্রিটে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের খাবারের আয়োজন। দামও যথারীতি বেশি। আর বারের জন্যও পরিচিত আরব স্ট্রিট। সেখানে লাইভ মিউজিকের ব্যবস্থাও রয়েছে।  

বুগিস বাস স্টেশনে নেমে পূর্বে রাস্তা পার হলেই আরব স্ট্রিট। এই স্থান কামপোং গ্লাং নামেও পরিচিত। দূর থেকেই দৃষ্টি কেড়ে নেবে মসজিদের সোনালী গম্বুজ। আর গম্বুজ ঘিরে চারটি মিনার।

সিঙ্গাপুরের ২০০ বছরের পুরনো মসজিদেমসজিদের গঠনাকৃতি অসাধারণ। এর চাকচিক্য আর আভিজাত্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাই সিঙ্গাপুরে আসলে ২০০ বছরের পুরনো এ মসজিদ দেখতে ভোলেন না পর্যটকরা।  

এখানে আমি আর চৈতণ্য ছাড়া অন্য পুরুষ ফেলোরা সবাই হাফপ্যান্ট পড়া। আর নারী ফেলোদের মধ্যে কেউই মুসলিম নন এবং কারো পোশাকই মসজিদে ঢুকতে অনুমতি দেয় না। যদিও এখানে নারীদেরও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের সামনে যেতেই দেখা যায় পর্যটকরা মসজিদকে পেছনে রেখে ছবি তুলতে ব্যস্ত।

সিঙ্গাপুরে ২০০ বছরের পুরনো মসজিদে-বাংলানিউজআমি আর চৈতণ্য মসজিদে প্রবেশ করলাম। বিকেলে মাত্র অসরের নামাজের জামাত শেষ হয়েছে। মুসল্লিরা অনেকে সুন্নত নামাজ পড়তে ব্যস্ত। আমরা মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করি। এটা এতোই অভিজাত যেনো মনে হলো কোনো রাজদরবারে প্রবেশ করছি। চকচকে টাইলস করা মসজিদ, ভেতরে ঝাড়বাতিতে ঝলমলে।  

দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় ৫০ বর্গমিটারের মসজিদ এটি। দ্বিতীয়তলায় ওঠার সিঁড়িও রজকীয়। নিচতলার উচ্চতা ১৫ মিটারেরও বেশি হবে। খুতবা দেওয়ার জন্য কাঠের সিঁড়ির ওপর আসন করা হয়েছে, যে কারণে আরো বেশি দরবার মনে হচ্ছে।  

মসজিদের মূল নামাজ ঘরের চারিদিক ঘিরে বারান্দা। প্রবেশ মুখের বারান্দায় রয়েছে গ্যালারি। সেখানে ইসলামের মূল্যবোধ, ইমলামে নারীর মর্যাদা, ইসলামের গৌরবের কিছু তথ্য উপাত্ত সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মসজিদে যেনো প্রবীণ এবং চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিরাও প্রবেশ করতে পারেন শুধু তাদের জন্য লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে।

সিঙ্গাপুরের ২০০ বছরের পুরনো মসজিদেএখানে জুতা চোরের ভয় নেই। প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা তাক থেকে জুতা বের করে পড়ে নিলাম। পে আর কংয়ের আশা ভঙ্গ করে যখন তাদের নিয়ে ফিরছি, দেখলাম অন্যরা ছবি তুলতে ব্যস্ত।  

ওওওওওও...। হঠাৎ শুভাকাঙ্ক্ষী বা বন্ধুবৎসল কাউকে দেখলে এ অঞ্চলে এ শব্দ করা হয়। সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইট টাইমসের ডকুমেন্টরি প্রডিউসার সে সুয়েনচু'র সঙ্গে দেখা। সেও এবারের এজেএফ ফেলো। তবে সিঙ্গাপুরবাসী বলে কেন্ট ভেলে যেমন থাকে তেমনি নিজের বাসাতেও থাকেন। এখানে এসেছেন ওয়াইনের টানে। বলেন, আরব স্ট্রিটের হাজি লেনে লাইভ মিউজিকের সঙ্গে ওয়াইন পান লোভনীয়।  

মসজিদটি দেখিয়ে গাইডের কাজ করলেন তিনি। বলেন, এটা সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে পুরনো মসজিদ। এখন জাতীয় ঐতিহ্য। ধনী-গরিব সবার সহযোগিতায় মসজিদটি তৈরি হয়েছে। গম্বুজের নিচের অংশটি করা হয়েছে ক্যাচাপের বোতল দিয়ে। মসজিদটি করার সময় বলা হয়, যারা টাকা দিতে পারবেন না, তারা ব্যবহার শেষে ক্যাচাপের বোতলটি দান করে যাবেন।

সিঙ্গাপুরের ২০০ বছরের পুরনো মসজিদে১৮১৯ সালে সিঙ্গাপুর ব্রিটিশ শাসনের অধীনে যায়। মালয়েশিয়ার জোহর প্রদেশের সুলতান হুসেইন শাহ এবং দ্বীপ সিঙ্গাপুরের প্রধান আবদুল রহমানকে কিছু ক্ষমতা দেন ব্রিটিশ গভর্নর স্যার স্টামফোর্ড রাফেলসালসে। কামপোং গ্লাংয়ের এ এলাকা মালয় জাতিগোষ্ঠীর এবং মুসলিমদের বাস বেশি ছিল। জোহর থেকে সুলতান শাহ কামপোং গ্লাংয়ে এসে বসবাস শুরু করেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণে উদ্যাগ নেন।  

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে অনুদান নিয়ে ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সালের মধ্যে এ মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এমএন/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।