ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

জটিল পথে হজ ব্যবস্থাপনা: এখনই সমাধান জরুরি

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৭
জটিল পথে হজ ব্যবস্থাপনা: এখনই সমাধান জরুরি হজ ক্যাম্পে অপেক্ষমান হজযাত্রীদের একাংশ। ছবি: দীপু মালাকার-বাংলানিউজ

দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে হজযাত্রা। প্রতিবারই হজ মৌসুমে কোনো না কোনো জটিলতা ও সঙ্কট দেখা দেবে- এটা একটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হজ মৌসুমে হজযাত্রীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠামিশ্রিত মুখগুলো দেখে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। ক্ষোভ আর দহনকে আরও বাড়িয়ে দেয় এমন অবস্থায় বিমান কর্তৃপক্ষ, হজ ক্যাম্প, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও এজেন্সির মালিকদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য।

তাদের অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতা পরিস্থিতি আরও জটিল করে- যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে হজ ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা থাকা দরকার। সেটা সরকারি হোক বা বেসরকারি।

আসন্ন হজ মৌসুমে সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দার হজ অফিসে হজ বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সহযোহিতা, হজ ব্যবস্থাপনার সাবির্ক কার্যক্রম দেখাশুনা, সমন্বয়, হজযাত্রীদের সেবা, প্রয়োজনীয় সহায়তা ও চিকিৎসা সেবাসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য বেশ কয়েকটি দলকে সৌদি আরব প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়। এসব দলের সদস্য নির্বাচন নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও এলাকাপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।  

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, চলতি বছর রাষ্ট্রীয় খরচে হজ পালনের জন্য নির্বাচিত হওয়া ৩২০ জনের প্রকাশিত তালিকা নিয়ে। তালিকায় শুধু ধর্মমন্ত্রীর আপনজনরা জায়গা পাননি, প্রাধান্য পেয়েছে তার নিজ এলাকাও। তালিকায় অনেক জেলার একজনও নেই। এটা নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা।  

এবার বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক হজযাত্রী হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০১৭ সনের ১ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব যাত্রার শেষ ফ্লাইট ২৮ আগস্ট। সে হিসেবে বলা চলে, পবিত্র হজের আরও প্রায় ২২ দিন সময় হাতে আছে। এরই মাঝে সারাবিশ্ব থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ থেকেও হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে নানা সঙ্কট ও জটিলতা নিয়ে।  

পত্রিকা মারফত আমরা জেনে আসছি, চলতি বছর হজ ব্যবস্থাপনায় কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন সূচিত হওয়ায় পুরো বিষয়গুলোকে সুচারুভাবে করতে হজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। তার পরও ভজঘট লেগেই গেলো। যার দায় ঘুরেফিরে সরকারে ঘাড়ে চাপে। অবস্থাটা এমন- খায়দায় রহিমুদ্দিন, ফেঁসে যায় আলাউদ্দিন।

এমনিতেই হজ ব্যবস্থাপনার ত্রুটি, হজ এজেন্সির অবহেলা, দুর্নীতির কারণে প্রতি বছর শত শত হজযাত্রীকে শেষ পর্যন্ত বিড়ম্বনা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটাতে হয়। পাসপোর্ট, ভিসা, বাড়িভাড়া, মোয়াল্লেম ফিসহ লাখ লাখ টাকা খরচ করেও হজ গমনেচ্ছু শত শত ধর্মপ্রাণ মানুষ শেষ মুহূর্তে বঞ্চনার শিকার হওয়ার উদাহরণও দেখা যায়।  

সেসব এড়াতে অনলাইনে হজ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালুর পাশাপাশি এবার  সৌদি সরকার অনেক আগে থেকেই হজের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করলেও নতুন নতুন সঙ্কট দেখা দেয়। এর দায় কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো এড়াতে পারেন না। হজযাত্রা নিয়ে এমন অনিয়ম ও ভোগান্তির প্রেক্ষিতে সরকারের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। হজযাত্রার মতো পবিত্র ধর্মীয় বিধান ও আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে অবৈধ বাণিজ্যে লিপ্ত হওয়া হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান নমনীয় হওয়ায় আশ্বাস প্রতিবারই কর্তাদের কাছ থেকে পাই। কিন্তু কাজেকর্মে এর কোনো প্রভাব দেখা যায় না।

আমরা মনে করি, সরকার ও দেশের ভাবমর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি হজের ধর্মীয় তাৎপর্য ও পবিত্রতা বজায় রাখার স্বার্থে হজ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, গতিশীল ও জনবান্ধব করা আবশ্যক। ভয়-ভীতি, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে হজযাত্রা সাবলীল ও সহজ রাখার প্রক্রিয়া খুব কঠিন কিছু নয়।  

অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কতিপয় মতলববাজ মোয়াল্লিম আর লোভী হজ এজেন্সিগুলোর দুরভিসন্ধির কারণে হজযাত্রীরা সমস্যার মুখে পড়েছেন। এরা মিলিতভাবে একটা পক্ষ, যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য কিছু টাকা বেশি আয় করা। যেমন, হজ এজেন্সিগুলো বেশি লাভ করার লোভে সৌদি আরবে হাজিদের জন্য ঘরভাড়া করতে সময়ক্ষেপণ করেছে, এদিকে ফ্লাইটের সময় এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ঘরভাড়ার প্রমাণপত্র ছাড়া সৌদি দূতাবাস হাজিদের ভিসা দেয় না।  

দ্বিতীয়ত, মোয়াল্লেম বা হাজিদের গাইড ছাড়া সৌদি আরবে ঘরভাড়ার চুক্তি করা যায় না। সুযোগ বুঝে মোয়াল্লিমরা হজ এজেন্সিগুলোর কাছে বর্ধিত হারে ফি দাবি করে বসেছেন। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি একধরনের লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে- মোয়াল্লিম ঠিক না হওয়ায় ঘরভাড়ার চুক্তি হয়নি, আর ঘরভাড়ার চুক্তির প্রমাণপত্র বা বারকোড ছাড়া সৌদি দূতাবাস হাজিদের ভিসা দিতে রাজি নয়।

এদিকে সারাজীবনের সঞ্চয় এজেন্সি মালিকের হাতে দিয়ে, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হজযাত্রীরা উড়োজাহাজে উঠে বসতে উদগ্রীব, তাদের জন্য উড়োজাহাজও প্রস্তুত; কিন্তু হজযাত্রীর অভাবে সেই ফ্লাইট বাতিল- কী অদ্ভুভ পরিস্থিত! 

বলি, সততার সঙ্গে টাকা আয় করা দোষের কিছু নয়, কিন্তু হজযাত্রীদের জিম্মিদশায় ফেলে বাড়তি লাভের চেষ্টা করা অত্যন্ত অন্যায় ও হীন মানসিকতার পরিচায়ক।  

দুঃখজনক হলো- হজযাত্রা নির্বিঘ্ন করার দাবি দীর্ঘদিনের হলেও দেশের হাজী ও হজ গমনেচ্ছুরা বিড়ম্বনা থেকে কিছুতেই মুক্তি পাচ্ছেন না। হজ সাংবাৎসরিক ফরজ ইবাদত। এর সঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি ও বিশ্বাসের প্রশ্ন জড়িত। অথচ দেখা যায়, প্রতিবছর হজ পালনেচ্ছুদের নানারকম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতারণা ছাড়াও হজযাত্রীরা বিভিন্ন ধরনের অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছেন, যা মোটেই কাম্য নয়। হজযাত্রীদের কাঙ্খিত মানের সেবা প্রদানের পাশাপাশি এ বছর সবার হজযাত্রা নিশ্চিত করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।