ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদে হারামে বিশ্বের বৃহৎ জুমার জামাত আদায়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭
মসজিদে হারামে বিশ্বের বৃহৎ জুমার জামাত আদায় মসজিদে হারামে বিশ্বের বৃহৎ জুমার জামাত- বাংলানিউজ

পবিত্র মক্কা থেকে: সৌদি আরবের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪০ মিনিট। অন্য শুক্রবারের তুলনায় আজকের জুমার নামাজে ভিড় কিছুটা বেশি হবে, এ বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল।

সে অনুযায়ী রাস্তায় বের হয়ে বেশ অবাক। মিসফালা দিয়ে কাবা শরিফের দিকে যাওয়ার প্রধান রাস্তা ইবরাহিম খলিল রোডটি দুই লেনের হলেও শুক্রবার (২৫ আগস্ট) জুমার জন্য একমুখি করে দেওয়া হছে।

এ পথে মানুষ শুধু যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা জরুরি কাজে বের হওয়া ছাড়া কেউ আর ওই পথে আসছে না।

সৌদি আরবে আজ জিলহজ মাসের ৩ তারিখ। যেহেতু জিলহজ মাসের ৮ তারিখ থেকে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, তাই আজকের জুমা ছিল হজপালনকারীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এর অনেকগুলো কারণ আছে। যেমন-অনেকে আজই জীবনে প্রথমবারের মতো মসজিদে হারামের জুমায় অংশ নিয়েছেন।  

এছাড়া আজকের জুমার জামাতটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুমার জামাত। কারণ হজপালনকারীরা এর পরের জুমায় হজের আনুষ্ঠানিকতার জন্য মক্কার বাইরে মিনায় অবস্থান করবেন। তাই আজকের জুমার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

স্থানীয় পুলিশ হাবিব আল হামেদের মতে, আজকের জুমায় হজপালনকারী প্রায় ২৮ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।

আর তিউনিসিয়ার রহমান খালিদের মতে, আমি অবাক। এতো বড় জামাতে অংশ নেবো, কখনও ভাবিনি।

বাংলাদেশ থেকে (কুমিল্লা, মুরাদনগর) তৃতীয়বারের মতো হজপালনে এসেছেন আবদুল হাই। তিনি মুসল্লিদের মসজিদে হারামে যাওয়ার দৃশ্য দেখে বলেন, এমন কয়েকটি রাস্তা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে হারামে প্রবেশ করেন।  

মসজিদে হারামে প্রবেশের অনেকগুলো রাস্তা। তার একটি ইবরাহিম খলিল রোড। রোডটি লোকে লোকারণ্য। নানা বর্ণ, নানা ভাষার লোকজন চলছেন নিজ নিজ গতিতে। বিচিত্র পোশাক, ভাষার ফারাক আর গায়ের রংয়ের ভিন্নতা ভুলে নারী-পুরুষ পাশাপাশি পথ চলছেন আপন মনে। কারো কোনো কিছুর দিকে দেখার ফুরসৎ নেই। সবার ব্যস্ততা দ্রুতপায়ে পথ চলার। গন্তব্য মসজিদের হারাম।

মসজিদে হারামে বিশ্বের বৃহৎ জুমার জামাত- বাংলানিউজইবরাহিম খলিল রোড দিয়ে মসজিদের হারামের অন্যতম প্রবেশ পথ বাদশাহ ফাহাদ গেটের রাস্তাটি ততক্ষণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জমজম টাওয়ারের সামনেই।

পুলিশ মুসুল্লিদের হাতে ইশারা দিয়ে ভিন্ন রাস্তায় যেতে বলছে। ওই রাস্তার শেষে সুক আল খলিল ভবনের সামনে দিয়ে বাদশাহ আবদুল আজিজ গেট হয়ে মসজিদে হারামে প্রবেশ করা যায়। কিন্তু তুলনামূলক একটু দূরে হওয়া এদিকটায় মসুল্লিদের ভিড় কিছু কম।

এই পথ ১০২ নম্বর গেট দিয়ে আমরা যখন মসজিদে হারামে প্রবেশ করি তখন ঘড়ির কাঁটা ১০টা বিশের ঘরে। তারপরও জায়গা মেলে ৪ তলায়। সেখান থেকে কাবা চত্বরের শুধু খোলা অংশটাই দেখা যায়। তবে সামনে গেলে কাবা দেখা যাবে। কিন্তু যাওয়ার সুযোগ নেই, পাছে এই জায়গাটুকুও হারাতে হয়! 

প্রচণ্ড রোদ আর মানুষের ভিড় ঠেলে মসজিদে হারামে প্রবেশ করেই যে যার মতো কাজে মশগুল। কেউ নামাজে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, কেউ কোরআন তেলাওয়াত করছেন। কেউ হয়তো একটু জমজম পান করে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে অনেকেই অশ্রুঝরিয়ে মনের আকুতি মিশিয়ে কেঁদে-কেঁদে দোয়া করছেন মহান রবের দরবারে। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য।

পাশাপাশি বসে আছে কসোভা, নাইজেরিয়া, ভারত কিংবা চীনের একজন। কেউ কারো ভাষা বুঝে না, গায়ের রং, পোষাক কিংবা শরীরের গড়নের সঙ্গেও মিল নেই। তবুও কোনো সমস্যা নেই। একসঙ্গে পথ চলছেন, এক ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করছেন। এক রীতিতে তাওয়াফ ও সায়ি করছে। এক কাবাকে কেন্দ্র করে এমনসব ইবাদত-বন্দেগির মাঝে সবার লক্ষ্য একটাই- একটু বেশি সময় মসজিদে হারামে কাটানো, কাবা চত্বরে সময় অতিবাহিত করা।

স্থানীয় সময় ১১টা ৫৫ মিনিটে মসজিদের হারামের মোয়াজ্জিনের দরাজকণ্ঠে জুমার আজান ভেসে আসে। আজানের পরই মুসল্লিরা সুন্নত আদায় করে নেন। বেলা ১২টা ২২ মিনিটে জুমার ২য় আজানের পর ইমাম সমবেতদের উদ্দেশ্যে খুতবা দেন।

২৫ মিনিটের খুতবায় ইমাম তাকওয়া অজর্নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এর পর হাজিদের উদ্দেশ্যে ইমাম বলেন, এই কাবা হলো বিশ্ব মুসলিমের সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। এটা মুসলমানদের কেবলা। কাবা একত্ববাদের প্রতীক। এই শহরে আরাফা অবস্থিত। এখানে বহু নবীদের আগমন ঘটেছে। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.) এই শহরের গোড়াপত্তন করেছেন। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের শহর এটা। এখানে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল (আ.) অহি নিয়ে এসেছেন। এই বরকতময় শহরে আপনারা এসেছেন। আপনাদের স্বাগতম। এই শহরের সম্মান আপনারা রক্ষা করে চলবেন।  

এরপর ইমাম সাহেব হজপালনকারীদের জন্য করণীয়, হজের বিধান, আরাফার দিনের ফজিলত ও মিনা-মুজদালিফার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আপনার সৌভাগ্যবান। আপনারা এ শহরে এসেছেন। যতক্ষণ এখানে থাকবেন বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করবেন। বেশি করে দোয়া করবেন। এই শহরে দোয়া কবুলের অনেক জায়গা রয়েছে সেগুলোতেও দোয়া করবেন।  

খুতবার শেষ অংশে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়ার পাশাপাশি হজপালনকারীদের জন্যও দোয়া করেন ইমাম সাহেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭
এমএইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।