ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, হাজিরা যাচ্ছেন মিনায়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭
হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, হাজিরা যাচ্ছেন মিনায় হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, হাজিরা যাচ্ছেন মিনায়

পবিত্র মক্কা নগরী থেকে: মঙ্গলবার (৭ জিলহজ) সন্ধ্যা থেকে মক্কায় অবস্থানরত হজযাত্রীরা নিজ নিজ কামরা কিংবা মসজিদে হারাম থেকে হজের ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। মিনায় যাত্রার মধ্য দিয়ে হজের মূল কাজ শুরু হয়, যা শেষ হবে ১২ জিলহজ তারিখে।

মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। হজপালনকারীদের জন্য মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।

মিনায় হাজিরা ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করবেন। মিনাতে হাজিদের রাত কাটানোর জন্য আলাদা আলাদা তাঁবু রয়েছে।

মিনাকে তাবুর শহর বলা হয়। এটা মক্কা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ও মক্কার পার্শ্ববর্তী একটি এলাকা। মক্কা থেকে আরাফাতের ময়দানের দিকে যাওয়ার মহাসড়কের পাশে মিনার অবস্থান। মিনার আয়তন প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার।

হজপালনের অংশ হিসেবে হজপালনকারীদের মিনায় অবস্থান করতে হয়। হজপালনকারীদের জন্য মিনায় প্রায় ১ লাখ অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। এসব তাঁবুতে হজযাত্রীরা অবস্থান করে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেক তাঁবুর আলাদা নম্বর দেওয়া রয়েছে।

হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, হাজিরা যাচ্ছেন মিনায়স্থাপিত তাঁবুর সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মিনায় হজপালনকারীরা ৮ জিলহজ রাত থেকে আরাফাতের ময়দানে চলে যাবেন ৯ জিলহজ। ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে মুজদালিফায় যেয়ে রাতযাপন করবেন। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন শেষে ১০ জিলহজ তারিখে এখান থেকে ছোট ছোট কঙ্কর সংগ্রহ করে পুনরায় মিনায় যেয়ে বড় শয়তানকে (জামারায়ে উকবা) কঙ্কর নিক্ষেপ করে কোরবানি শেষে মাথা মুণ্ডিয়ে হালাল (ইহরাম খুলবেন) হবেন।

এর পর মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারত (তাওয়াফ ও সায়ি) শেষে আবার মিনায় যেয়ে (ছোট, মধ্যম ও বড়) শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে হাজিদের। এটা হজের ওয়াজিব আমল।

মিনায় অবস্থান, কোরবানি, শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য মিনায় এই কয়দিন খুব ভিড় থাকে। মিনায় বাদশাহর বাড়ি, রয়েল গেষ্ট হাউজ, মসজিদ, হাসপাতাল ও বিভিন্ন অফিস রযেছে। মিনায় রেলস্টেশন আছে ৩টি।

মিনার সীমানা হলো- পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে মুহাসসার উপত্যকা ও জামরা ‘আকাবা ও মধ্যবর্তী’ স্থান। আর উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে দু’পাশের সুউচ্চ দু’টি পাহাড়।

হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, হাজিরা যাচ্ছেন মিনায়সাধারণত হাজিরা মক্কা থেকে মিনায় সড়কপথে যান। তবে ট্রেনে যাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এ জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখতে হয়।

হজের প্রধান প্রধান হুকুম-আহ্কামের অধিকাংশই মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে পালিত হয়। এই তিনটি স্থানেরই ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। মিনার ঐতিহাসিক ঘটনা হলো-

হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কোরবানি করার আদিষ্ট হয়ে প্রিয়তম পুত্র নবী হজরত ইসমাঈল (আ.)কে কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নেন। ছেলেকে তিনি স্বপ্নের কথা বললে হজরত ইসমাঈল (আ.) বলেন, আব্বা! আপনি আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করুন, আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি ধৈর্যশীল পাবেন।

ছেলেকে তিনি সঙ্গে নিয়ে মক্কার অদূরে এই মিনাতে পৌঁছলে শয়তান তিন স্থানে তাদেরকে আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে নিবৃত্ত হওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। এমতাবস্থায় তারা পাথর তুলে শয়তানকে মেরে তাড়িয়ে দেন। তারপর মিনারই একস্থানে পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.) কে কাত করে শুইয়ে দিয়ে তার গলায় ছুরি চালালে আল্লাহর তরফ থেকে তা করতে নিষেধ করা হয় এবং এটা যে পরীক্ষা ছিল হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য, তা ঘোষিত হয়। এর পর ছেলের বদলে একটি বেহেশতি দুম্বা কোরবানি দেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। পিতা-পুত্রের সেই ত্যাগের ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর হাজিরা মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ ও কোরবানি করে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭
এমএইউ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।