মিসরের যেসব স্থান পর্যটকদের আকর্ষণ করে এর অন্যতম হলো- তুরে সাইনা বা তুর পাহাড়।
কায়রো থেকে তুরে সাইনা যাওয়ার দু’টি পথ।
কোরআনে কারিমে হজরত মুসা (আ.) সম্পর্কে অনেক আলোচনা রয়েছে। প্রচুর উপমা ও বিভিন্ন আঙ্গিকে তার ঘটনা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে মানুষ এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
যেমন কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করল এবং নিজ স্ত্রীকে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল, তখন সে তুর পাহাড়ের দিকে এক আগুন দেখতে পেল। সে নিজ পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি এক আগুন দেখেছি, হয়ত আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে আনতে পারব কোনো সংবাদ অথবা আগুনের একটা জ্বলন্ত কাঠ, যাতে তোমরা উত্তাপ গ্রহণ করতে পার। সুতরাং সে যখন আগুনের কাছে পৌঁছল, তখন ডান উপত্যকার কিনারায় অবস্থিত বরকতপূর্ণ ভূমির একটি বৃক্ষ থেকে ডাকা হলো- হে মুসা! আমিই আল্লাহ, জগৎসমূহের প্রতিপালক। ’ -সূরা কাসাস: ২৯-৩০
তুর পাহাড়ে হজরত মুসা (আ.) আসমানি কিতাব তাওরাত লাভ করেছিলেন। আল্লাহতায়ালা সূরা আরাফে তা উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মুসার জন্য ত্রিশ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম (এ রাতসমূহে তুর পাহাড়ে এসে ইতিকাফ করবে)। তারপর আরও দশ রাত বৃদ্ধি করে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত মেয়াদ চল্লিশ দিন হয়ে গেল এবং মুসা তার ভাই হারুনকে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে তুমি সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সবকিছু ঠিকঠাক রাখবে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না। মুসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে এসে পৌঁছল এবং তার প্রতিপালক তার সঙ্গে কথা বললেন, তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দিন আমি আপনাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কিছুতেই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। তা যদি আপন স্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। অতপর যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে তাজাল্লি ফেললেন ( জ্যোতি প্রকাশ করলেন) তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলল এবং মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল। পরে যখন তার সংজ্ঞা ফিরে আসল, তখন সে বলল, আপনার সত্তা পবিত্র। আমি আপনার দরবারে তওবা করছি এবং (দুনিয়ায় কেউ আপনাকে দেখতে সক্ষম নয়- এ বিষয়ের প্রতি) আমি সবার আগে ঈমান আনছি। ’ -সূরা আরাফ: ১৪২-১৪৩
তুর পাহাড় মিসরের দক্ষিণ সাইনা জেলায় অবস্থিত। সাইনার মূল শহরের নাম ‘আত তুর’। বড় শহরের নাম- শারমুশ শাইখ। পাহাড়টির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২৮৫ মিটার। এই পাহাড়কে জাবালে মুসা নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই পাহাড়ের পাদদেশে হজরত মুসা (আ.)-এর ভাই হজরত হারুন (আ.)-এর কবর রয়েছে। তুর পাহাড়ের কথা কোরআনে কারিমের কয়েক জায়গায় এসেছে।
তুর পাহাড়ের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি পাহাড়। তন্মধ্যে একটি পাহাড়ের নাম ‘সানত কার্তিন। ’ এই পাহাড়টি দক্ষিণ সাইনা জেলায় অবস্থিত এবং মিসরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। পাহাড়টি হজরত মুসা (আ.)-এর পাহাড়ের সঙ্গে একেবারে লাগানো। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০ মিটার। পাহাড়টি দেখতে বেশ সুন্দর, সোনালি রংয়ের।
সাইনা এলাকার নামও কোরআনে কারিমে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পাহাড়ি এলাকায় এক প্রকার গাছ হয়, যা থেকে তেল তৈরি হয়। সাইনা নবীদের বরকতময় ভূমি। এ অঞ্চলে অনেক নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে। এখানে রয়েছে অনেক নবীদের কবর, বনী ইসরাঈলের তিহ নামক ময়দান। আরও অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে এই মাটি ও পাহাড় সম্পৃক্ত।
এলাকাটি মুসলিম উম্মাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুর পাহাড়ের পাদদেশে গোলাকার আকৃতির একটি গাছ রয়েছে। যে গাছের কাছে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে হজরত মুসা (আ.) কথা বলেছিলেন এবং যে গাছের কথা কোরআনে উল্লেখ রয়েছে।
গাছটি দেখতে অনেক সুন্দর। হাজার হাজার বছর ধরে এভাবে গাছটা বেঁচে আছে। এটা আল্লাহর অনেক বড় কুদরত। মিসরের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক ড. আবদুর রহিম রায়হান এই গাছ সম্পর্কে বলেন, এই বরকতপূর্ণ গাছ দুনিয়ার অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না এবং এর পাতা কখনো মরে না। সেখানে লেখা আছে এই গাছের পাতা ছেঁড়া নিষেধ। গাছটা আমাদের দেশের লতা গাছের মতো। এ জন্যই তো এই গাছটার নাম আশ শাজারাতুল উল্লিকা অর্থাৎ ঝুলন্ত গাছ।
তুর পাহাড়ের চূড়ায় উঠার জন্য পাথর কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে। এই রাস্তা ছাড়া বেয়ে ওপরে ওঠা খুব কঠিন। তুর পাহাড়ের চূড়ায় বসে হজরত মুসা (আ.) ইবাদত করতেন। এখনও সেই স্থানটি চিহ্নিত করা আছে।
তবে যে পাহাড়টি আল্লাহর নূরের তাজাল্লিতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছিলো তা তুর পাহাড় থেকে উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। ব্যাপক অনুসন্ধান এবং অনেক গবেষণার পর এটা প্রমাণিত হয়েছে। এই স্থানেই আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) কে তার নূরের তাজাল্লি দেখিয়েছিলেন। ফলে তৎক্ষণাৎ হজরত মুসা (আ.) জ্ঞান হারিয়েছিলেন। যা কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এমএইউ/