ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

পরকালীন সফলতা-ব্যর্থতার মাপকাঠি

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৮
পরকালীন সফলতা-ব্যর্থতার মাপকাঠি পরকালীন সফলতা-ব্যর্থতার মাপকাঠি

নিঃসন্দেহে মানবসম্পদ উন্নয়নে ইসলামের সবচেয়ে বড় প্রেরণা এর পরকালবিষয়ক মূল্যবোধ ও নীতিমালা। দুনিয়াতে একজন লোক যদি আর্থিক, শারীরিক কিংবা সামাজিক দিক থেকে গ্রহণীয় হয় অথবা কেউ যদি সব দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য হয় তাহলে দুনিয়ার বিচারে লোকটির জীবন সফল হয়েছে বা ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।

কিন্তু আখেরাতে ব্যক্তির সফলতা নির্ভর করে একান্তভাবে ব্যক্তির সঠিক বিশ্বাস, সৎকর্ম, সৎচিন্তা ও সৎ জীবনযাপনের ওপর। এর অর্থ হলো ব্যক্তি যদি সমাজের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য বা সমাজে সম্মানিত হওয়ার জন্য এমন কোনো কাজ করে ইসলামের দৃষ্টিতে যা সম্মানজনক নয় তাহলে আখেরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না।

আবার বাহ্যত অসম্মানজনক বা নিপীড়নমূলক প্রমাণ হলেও আখেরাতে হয়তো কাজটি অত্যন্ত সম্মানের হতে পারে। এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দুনিয়ায় লাভ-লোকসানের বিবেচনা ছাড়া একজন মানুষ আখেরাতে সফল হওয়ার জন্য ভেতরে-বাইরে সৎ জীবন-যাপন করার চেষ্টা করে। কাউকে দেখানোর জন্য কিংবা কারও মনোতুষ্টির আকাঙ্ক্ষা সে পোষণ করে না। সে দুনিয়াকে ততটুকুই গুরুত্ব প্রদান করে, যতটুকু গুরুত্ব প্রদানের নির্দেশ আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন, তোমরা কি আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অত্যন্ত কম। -সূরা তওবা: ৩৮

অন্যত্র তিনি বলেন, আখেরাত তো নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠতম পর্যায় এবং মর্যাদায় মহত্তম। -সূরা বনী-ইসরাঈল: ২১

দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার্থে আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে আখেরাতের আবাস অনুসন্ধান করো, তবে তোমার দুনিয়ার অংশ ভুলে যেয়ো না। ’ –সূরা আল কাসাস: ৭৭

আখেরাতের বিশ্বাস মানুষকে কেবল সৎকাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে না; বরং কাজটি একান্তভাবে আল্লাহতায়ালার জন্য করতে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে সৎকাজ করা হলে তা পুরস্কারযোগ্য হয় না। তাও শাস্তিযোগ্য আমলে পরিণত হয়। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথম যার বিচার হবে সে হবে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর দরবারে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাকে তার নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও তা স্মরণ করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি দুনিয়াতে এর বিনিময়ে কী কাজ করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি তোমার পথে যুদ্ধ করেছি; এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমি এ জন্য যুদ্ধ করেছো যেনো তোমাকে বীরপুরুষ বলা হয়। আর তা তোমাকে বলা হয়েছে। এরপর তার ব্যাপারে ফেরেশতাদের আদেশ করা হবে। তারা তাকে উপুড় করে টেনে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।  

দ্বিতীয়ত যার বিচার হবে সে হবে একজন আলেম। সে নিজে শিক্ষা লাভ করেছে, অপরকে তা শিখিয়েছে এবং কোরআন পড়েছে। তাকে আল্লাহর দরবারে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাকে তার নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও তা স্মরণ করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি দুনিয়াতে এর বিনিময় কী কাজ করেছো? সে উত্তর দেবে, দুনিয়াতে আমি শিক্ষা লাভ করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমি এ জন্য জ্ঞান অর্জন করেছিলে যেনো তোমাকে জ্ঞানী বলা হয়। কোরআন এ জন্য তেলাওয়াত করেছ যেনো তোমাকে কারি বলা হয়। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে। এরপর তার ব্যাপারে ফেরেশতাদের আদেশ করা হবে। তারা তাকে উপুড় করে টেনে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।  

তৃতীয়ত যার বিচার হবে সে হবে একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। আল্লাহ তাকে সচ্ছল করেছেন এবং বিপুল সম্পদ দিয়েছেন। তাকে আল্লাহর দরবারে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাকে তার নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও তা স্মরণ করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি দুনিয়াতে এর বিনিময়ে কী কাজ করেছো? সে উত্তর দেবে, যে পথে খরচ করলে তুমি খুশি হও, সে সব পথে তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। বরং তুমিতো এগুলো এ জন্য করেছো, যেনো তোমাকে দানবীর বলা হয়। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে। এরপর তার ব্যাপারে ফেরেশতাদের আদেশ করা হবে। তারা তাকে উপুড় করে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১৯০৫

আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত সংক্ষেপে কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, কাজেই ধ্বংস সেই সব নামাজ আদায়কারীর; যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে। -সূরা আল মাউন: ৪-৬

বস্তুত আখেরাতে সফলতা লাভই মুমিনের মূল লক্ষ্য। এ কারণে ইসলামে বিশ্বাসী একজন লোক দুনিয়ার সব কাজই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেন। যে কারণে তার মধ্যে লোক দেখানোর বিষয়টি একেবারেই থাকে না। ফলে মানসিক দিক থেকে তিনি পরম উৎকর্ষ লাভ করতে সক্ষম হন। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ বা প্রেম তাকে কোনোক্রমেই মন্দ কাজে নিয়োজিত করতে পারে না।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।