ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বিকৃত তথ্য ও গুজব প্রচার পাপের কাজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
বিকৃত তথ্য ও গুজব প্রচার পাপের কাজ বিকৃত তথ্য ও গুজব প্রচার পাপের কাজ

বর্তমান যুগ অবাধ, তথ্যপ্রবাহের যুগ। ইন্টারনেটের কল্যাণে পৃথিবীর সব তথ্যভাণ্ডার আমাদের সামনে উন্মুক্ত। তদুপরি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য তথ্যের প্রবাহকে আরও সহজ করে দিয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে তা পৌঁছে যাচ্ছে।

তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন ও এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অর্থনীতি, গ্রামীণ ও নগর কৃষিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মানুষ সুফল পাচ্ছে ঠিকই- তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। এটা গভীর চিন্তার কথা।

 

অন্যদিকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহজলভ্য হওয়ায় প্রতিনিয়ত নামে-বেনামে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। ফেসবুকের সহায়ক হিসেবে রয়েছে- ম্যাসেঞ্জার, ইউটিউব চ্যানেল, ইমো, হোয়াটস অ্যাপ এবং আরও অনেক কিছু।  

এসব কিছু মাঝে কিছু অনলাইন পোর্টাল মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ, রাজনৈতিক মতভেদ এবং ব্যক্তি, পারিবার ও সামাজিক সম্পর্কের টানাপোড়েনকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ভুয়া, চটকদার, রসালো, উস্কানিমূলক ও বিকৃত নিউজ, ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ করছে। আর নেটিজেন দুনিয়ার সৈনিকরা এসব নিউজের সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করে লাইক, শেয়ার, কপি ও ট্যাগের মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মহান দায়িত্ব পালন করছে! অনেকে প্রতিপেক্ষর চরিত্র হনন, কলঙ্ক লেপন, ধর্মের অপব্যাখা, ধর্মানুভূতিতে আঘাত, তথ্য বিকৃতি এবং গুজব রটানোর জন্য এসবকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।  

কারও কারও ভাবখানা এমন, যেন এর মাধ্যমে দুনিয়া-আখেরাতের অশেষ নেকি হাসিল করছেন। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা এটা বিবেচ্য বিষয় নয়। স্বার্থ হাসিল, মত-পথ কিংবা দর্শনের সঙ্গে মিলে গেলেই কেল্লাফতে। শুরু হয় স্ট্যাটাস, লাইক, শেয়ার, কপি, ট্যাগ, সেন্ড আর আমিন ঝড়!

অথচ প্রত্যেকটা নিউজ লাইক, শেয়ার, কপি ও ট্যাগের মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পূর্বে এর সত্যতা যাচাই করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। ফলে নষ্ট হচ্ছে- সম্পর্কের সুদৃঢ় বন্ধন। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে জাতীয় রাজনীতিতেও।  

অথচ প্রত্যাশা ছিলো, সব বিতর্কের বেড়াজাল ছিন্নকরে নেটিজেন দুনিয়ায় কল্যাণকর ও নিরাপদ তথ্যের অবাধ বিচরণ থাকবে, তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হবে না মানুষ- এটাই সবার প্রত্যাশা।  

তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রসার ও প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে নেটিজেন ও সিটিজেন ওয়ার্ল্ডের গর্বিত সদস্য হিসেবে সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য বাড়ছে। কোনো নিউজের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে প্রচার থেকে বিরত থাকা উচিত। অনলাইনে যথাযথ সত্যতা অনুসন্ধান ছাড়া তথ্য প্রচার পূর্বেও জন্ম দিয়েছিল অসংখ্য সহিংসতার এবং এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন না করলে অদূর ভবিষ্যতে ঘটতে পারে আরও অঘটন। তথ্য প্রচারে একটু অসতর্কতা বহু নির্দোষ মানুষের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অমূল্য বন্ধন এবং রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক ও সচেতন হওয়া সময়ের দাবি।

দুই.
নেটিজেন দুনিয়ায় ধর্ম ও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা, বিকৃত ও উস্কানিমূলক তথ্য এবং গুজব প্রচার হয় সবচেয়ে বেশি। এই ডটকমের যুগে কথিত ধার্মিকদের যেমন মসজিদে খুঁজে পাওয়া যায় না, তেমনি রাজনীতিবিদের রাজনীতির মাঠে-ময়দানে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অথচ তুলনামূলক নিরাপদ নেটিজেন দুনিয়ায় তাদের সরব উপস্থিতি ও অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।

একটি মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটানো শুধু ব্যক্তি বা সামাজিক বন্ধনের জন্য হুমকি নয়, বরং একটি জাতি বা রাষ্ট্রের সম্প্রীতি ও স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। মিথ্যা প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাকো। ’ –সূরা হজ্জ: ৩০

এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত) মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে (বিনা বিচারে) তা-ই বর্ণনা বা প্রচার করে। ’ –সহিহ মুসলিম

অসত্য, বিকৃত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত তথ্যের মাধ্যমে কারো চরিত্র হনন ও কলঙ্ক লেপন, ধর্মের অপব্যাখা ও ধর্মানুভূতিতে আঘাত এবং গুজব রটিয়ে সমাজ বা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা ও হাঙ্গা-দাঙ্গামা সৃষ্টি করা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক ও বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ এমন সমাজ ও রাষ্ট্র বিধ্বংসী কাজ করতে পারে না।  

আমাদের কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ কোনোক্রমেই যেনো অন্যদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত না করে বা মনোকষ্টের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পরধর্মে নিন্দা করার নাম যেমন ধার্মিকতা নয়, ঠিক তেমন প্রগতিশীলতা বা বাক স্বাধীনতা নয়। ররং এগুলো নিছক ভণ্ডামি বা কপটতা ছাড়া আর কিছু নয়। এমনকি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বা আবেগ-অনুভূতি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য যাতে হুমকি না হয়, সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখা ও সচেতন হওয়া দরকার।  

তিন.
রাষ্ট্রের কাছে সব ধর্ম ও দলের মানুষ সমান। দেশের নাগরিক হিসেবে সবাই সমান অধিকার পাওয়ার যোগ্য। এটা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত অধিকার।  

তাই আসুন, নিজে সচেতন হই; অন্যকে সচেতন করি। মিথ্যা, বিকৃত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ষড়যন্ত্র ও উস্কানিমূলক তথ্য এবং গুজব প্রচার থেকে বিরত থেকে প্রকৃত সত্য প্রকাশে সচেষ্ট হই। জীবনের সর্বক্ষেত্রে মূল্যবোধবর্জিত আবেগ পরিহার করি এবং সহানুভূতিসম্পন্ন বিবেকবোধ জাগ্রত করি। নেটিজেন ও ডটকম দুনিয়ার তথ্য বিকৃতি ও গুজবকে না বলি এবং সত্যসন্ধান ও সত্য প্রচারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি।  

লেখক: কলেজ শিক্ষক

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।