ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

নবীপ্রেমের ফল্গুধারা ‘রবিউল আউয়াল’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
নবীপ্রেমের ফল্গুধারা ‘রবিউল আউয়াল’ মসজিদে নববী, মদিনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব

হিজরি রবিউল আউয়ালের মাসের আজ দ্বিতীয় দিন। ‘রবিউল আউয়াল’ শব্দের অর্থ প্রথম বসন্ত। ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, যখন আরবি মাসের নাম রাখা হয়, তখন আরবের ঋতু-প্রকৃতিতে বসন্তের রূপ-শ্যামলিমা বিরাজ করছিল। সে সূত্র ধরে এবং বসন্তের সূচনাপর্ব হওয়ায় হিজরি সালের তৃতীয় মাসের নাম ‘রবিউল আউয়াল’ রাখা হয়।

আবহমানকাল থেকে আরবে রবিউল আউয়াল বসন্তের সূচনাপর্ব হিসেবে স্বীকৃত। কালের পরিক্রমায় এই মাস ও বসন্তের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়।

মূলত চন্দ্র মাস ঘূর্ণায়মান হওয়ায় এমনটা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর রবিউল আউয়াল ঈমানদারের দুয়ারে নবীপ্রেমের বসন্ত-বার্তা নিয়ে আসে। ফলে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ মাসে মুমিন-হৃদয়ে নবীপ্রেমের ফল্গুধারা অধিক পরিমাণে বইতে থাকে।

এ মাসেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আগমন করেছেন। তার আগমনে প্রকৃতি-বিহারে আনন্দের হিল্লোল জেগেছিল। কিন্তু পরম দুঃখের কথা হলো, এ মাসেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহর সান্নিধ্য গ্রহণ করেন। ফলে ফিরে ফিরে রবিউল আউয়াল এলে মুমিনের হৃদয়ে প্রিয় নবীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সামগ্রিক জীবন-বৃত্তান্ত ভেসে ওঠে।

আর প্রসঙ্গতই অন্যান্য মাসের তুলনায় বিশ্বের মুসলমান এ মাসে মহানবী (সা.)-এর স্মরণ একটু বেশিই করেন। তাকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা ও স্তুতিগাথা রচনা হয়। বিভিন্ন প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও সিরাত বা তার জীবনবিষয়ক গ্রন্থ রচনা করা হয়। তার স্বর্ণালি-বর্ণালি জীবনালেখ্য নিয়ে বিভিন্ন পরিসরে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে আয়োজন করা হয়।

১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে বিভিন্ন মুসলিম দেশে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী ও সিরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে আরবদেশ ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য মুসলিম দেশগুলোতে মিলাদুন্নবীর চেয়ে সিরাতুন্নবীর আলোচনাই বেশি হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশেও ১২ রবিউল আউয়াল সরকারিভাবে ছুটির প্রচলন রয়েছে। এবার বাংলাদেশে পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল হবে ২১ নভেম্বর ২০১৮।

সর্বাধিক প্রণিধানযোগ্য কথা হলো, মহানবী (সা.)-এর আদর্শ, প্রেম-ভালোবাসা কোনো বিশেষ দিনের সঙ্গে নির্দিষ্ট নয়। কোনো একক মাস বা তারিখের চৌহদ্দিতে বন্দি নয়। বরং তার আদর্শ ও ভালোবাসা নিত্য দিনের অপরিহার্য অনুসঙ্গ হওয়া অত্যাবশক।

তার যুগোপযোগী আদর্শের সামনে অন্য যেকোনো ধরনের আদর্শ গৌণ। তার আদর্শ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বোৎকৃষ্ট মানবতা ঘনিষ্ঠ আদর্শ। যার তুলনা শুধুই তার ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ বা সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। পৃথিবীর উদার চিন্তাশীল মহল একবাক্যে তা স্বীকার করে। মার্কিন লেখক মাইকেল এইচ হার্ট যুক্তিসঙ্গত কারণেই মহানবী (সা.)-কে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের স্থান দিয়েছেন।

বস্তুত চিন্তাকর্ম ও অবদানের বিচারে মাইকেল এইচ হার্ট তা দিতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও তার এ দেয়া বা না দেয়া মহানবী (সা.) এর সাফল্যের মানদণ্ড বা মাপকাঠি নয়।  

মহান আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ বিচার দিবসের আশা রাখেন এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করেন, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১)

মৃত্যুর সময় বিশ্বনবী (সা.) কিছু গৃহস্থালি ও যুদ্ধাস্ত্র রেখে গিয়েছিলেন। আরও রেখে গিয়েছিলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত-কালজয়ী আদর্শ। সুতরাং মানবতার প্রতিটি ক্ষণে, স্মরণে-মননে এবং জীবন পরিক্রমার প্রতিটি পর্ব ও অঙ্গনে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ্। রয়েছে তার জ্যোতিময় ও দীপ্তি ছড়ানো সুমহান আদর্শ-নীতি। তাই তার সতত ও ধ্রুপদী আদর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করেই কেবল একজন মুমিন নবীপ্রেমের ষোলকলা পূর্ণতা পেতে পারে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮
এমএমইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।