ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মেয়েটিকে তাহলে কে দেখবে?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৮
মেয়েটিকে তাহলে কে দেখবে?

উহুদ যুদ্ধে হামজা ইবনু আবদিল মুত্তালিব শাহাদত বরণ করেন। তার স্ত্রীর নাম ছিল সালমা বিনতে উমাইস। তার গর্ভে হামজার আম্মারা নামে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। সালমা বিনতে উমাইসের ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে পুনরায় তার বিয়ে হয় শাদ্দাদ ইবনুল হাদ আল লাইসির সঙ্গে।

শাদ্দাদ তখন মক্কায় বসবাস করতেন। আম্মারা তখনও ছোট ছিলেন।

সেজন্য তিনি মায়ের সঙ্গে মদিনা থেকে মক্কায় স্থানান্তরিত হয়ে যান। মক্কা থেকে কোনো না কোনোভাবে মুসলমানরা হিজরত করে মদিনা অথবা হাবশায় চলে গিয়েছিলেন। তারপরও কিছু মুসলিম-পরিবার মক্কায় ছিলেন, যারা কোনো অপরাগতার দরুন হিজরত করতে পারেননি। তাদের মধ্যে সালমা বিনতে উমাইস ও তার মেয়ে আম্মারা বিনতে হামজাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

সালমার এক বোনের নাম ছিল আসমা, যার বিয়ে হয়েছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচাত ভাই জাফর তায়্যার (রা.) এর সঙ্গে। তিনি প্রথমযুগের মুসলমান ছিলেন। এ বোনদের সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘আল-আখাওয়াত আল-মুমিনাত’ অর্থাৎ ‘মুমিন বোনেরা’। এভাবে রাসুল (সা.) তাদের মুমিন নারী হবার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

হুদায়বিয়া সন্ধির শর্ত অনুযায়ী আল্লাহর রাসুল (সা.) ওমরা না করেই মদিনা ফিরে গিয়েছিলেন। সপ্তম হিজরির জিলকদ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘ওমরা কাজা’র জন্যে ফের মক্কায় আসেন। ওমরার পর তিনি মক্কায় তিনদিন অবস্থান করেন।

যখন মদিনায় ফিরে আসার ইচ্ছা করেন, হামজা (রা.) এর মেয়ে আম্মারা ‘চাচা! চাচা!’ বলে ডাকতে ডাকতে কাছে এলেন। আলী ইবনে আবি তালেব (রা.) তাকে ধরে ফেললেন এবং ফাতেমা (রা.)-কে বললেন, তোমার চাচাতো বোনকে সামলাও।

আম্মারার তত্ত্বাবধান নিয়ে আলী (রা.) জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) ও জাফর তায়্যার (রা.)-এর মধ্যে মতবিরোধ হয়। তিনজনের মধ্যে প্রত্যেকের কথা হচ্ছে, ‘আম্মারার উপর আমার অধিকার রয়েছে। তাই সে আমার ঘরেই থাকবে। আমিই তাকে সঙ্গে করে মদিনা নিয়ে যাবো এবং ভরণপোষণ করবো। ’

আলী (রা.)-এর অবস্থান ছিল, সে আমার চাচার মেয়ে। অতএব আমার কাছে থাকবে সে।

জাফর তায়্যার (রা.) এর কথা ছিল, আমারও চাচার মেয়ে সে এবং তার খালা আসমা বিনতে উমাইস আমার স্ত্রী। তাই সে আমার সঙ্গেই যাবে।

জায়েদ ইবনে হারেসা ও হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)-এর মধ্যে রাসুল (সা.) ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিয়েছিলেন। সেজন্য তার কথা হচ্ছে, সে আমার ভাতিজী।

প্রকৃতপক্ষে, তিনজনের অবস্থানই সঠিক ছিল। প্রত্যেকের যুক্তি-প্রমাণে উজন ছিল। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উন্নত চরিত্র দেখুন, তিনি সিদ্ধান্ত দিলেন জাফর তায়্যার (রা.)-এর পক্ষে এবং বললেন, ‘আল-খালাতু বিমানজালাতিল উম্ম’ অর্থাৎ ‘খালা মায়ের মত। ’ কারণ জাফরের স্ত্রী আসমা ছিলেন আম্মারার খালা। তাই তার লালন-পালন ও দেখাশোনার অধিকার আসমা (রা.)-এর বেশি।

সম্মানিত পাঠক! এবার একটু দেখুন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কীভাবে তার সঙ্গীদের মনরক্ষা করলেন। তাদের উপলব্ধিও করতে দিলেন না যে, তাদের উৎসাহ ও সাহস ভেঙে দেওয়া হয়েছে অথবা তারা তাদের লক্ষ্যে সফল হতে পারেননি।

রাসুল (সা.) আলী (রা.)-কে বললেন, ‘আনতা মিন্নি ওয়া আনা মিনকা’ অর্থাৎ ‘তুমি আমার থেকে আর আমি তোমার থেকে। ’

বংশপরম্পরা, শ্বশুরালয় সম্পর্ক, ইসলামগ্রহণে অগ্রগামিতা এবং পারস্পরিক মায়া-মহব্বতের বিবেচনায় আলী (রা.)-এর উচ্চ মর্যাদার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

জাফর তায়্যার ইবনে আবি তালেব (রা.)-এর প্রশংসা করলেন এভাবে, ‘আশবাহতা খালকি ওয়া খুলুকি’ অর্থাৎ ‘চরিত্র ও আকৃতিতে তুমি তো আমার মতই। ’

জায়েদ ইবন হারেসা (রা.)-কে বললেন, ‘আনতা আখু-না ওয়া মাওলানা’ ‘তুমি আমাদের ভাই এবং আমাদের বন্ধু। ’

পাঠক! ভেবে দেখেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কী সুন্দরভাবে সেই তিনজনের মান-মর্যাদা স্পষ্ট করলেন। এক্ষেত্রে সন্দেহে নেই যে, আম্মারা (রা.)-এর লালন-পালনের ব্যবস্থা তিনি একজনকেই সোপর্দ করতে পারতেন। দুই অথাব তিনজনকে দেয়া যায় না। আর তা তিনি চমৎকারভাবে করে দিয়েছেন।

পরবর্তীতে আল্লাহর রাসুল (সা.) তার দুধভাই আবু সালমা ও উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা (রা.)-এর ছেলে সালামা (রা.)-এর সঙ্গে আম্মারা (রা.)-কে বিয়ে দেন। এ বিয়েতে রাসুল (সা.) অত্যন্ত খুশি ও নিশ্চিন্ত ছিলেন। তিনি আনন্দিত চিত্তে উম্মে সালমা (রা.)-কে বলেন, ‘দেখ! আমি সালমার জন্য কেমন সমমানের সম্পর্ক খুঁজে বের করেছি। ’

লেখক,
আলেম, লেখক এবং অনুবাদক
বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ, সৌদি আরব

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৮
এমএমইউ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।