ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামধর্মে আগ্রহ বাড়ছে সুইডিশদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
ইসলামধর্মে আগ্রহ বাড়ছে সুইডিশদের ইসলামধর্ম গ্রহণের পর এক সুইডিশ পরিবার। ছবি : সংগৃহীত

সুইডেন ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সুইডেনেরে সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী স্টকহোম। রাষ্ট্রভাষা সুয়েডীয়। দেশের উত্তর-পূর্বদিকে রয়েছে ফিনল্যান্ড, পশ্চিমে নরওয়ে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ওরেসুন্দ ব্রিজ, যেটা দিয়ে ডেনমার্কে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশেগুলোর মধ্যে সুইডেন বৃহত্তম এবং ইউরোপের তৃতীয় সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র।

মাথাপিছু আয়ের দিকে থেকে এটি বিশ্বের অষ্টম এবং মানব-উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের তৃতীয়। সুইডেনের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি সবসময় মনোমুগ্ধকর।

দেশের আয়তন ৪ লাখ ৫০ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার। মাত্র ৯৫ লক্ষ জনসংখ্যার কারণে সুইডেন ইউরোপের অন্যতম কম জনসংখ্যার ঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ২১ জন মানুষ বসবাস করে। সুইডেনের জনসংখ্যার প্রায় ৮৫% শহরকেন্দ্রিক এবং দেশের দক্ষিণপ্রান্তের শহরগুলোতে বসবাস করে।

ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই সুইডেন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান বজিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি কোনো প্রকার যুদ্ধে জড়ানো থেকেও বিরত থেকেছে। কিন্তু ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, অদৃশ্য কোনো কারণে শান্তিপূর্ণ এ দেশে মসজিদের ওপর হামলার হার ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসলামধর্ম গ্রহণের পর এক সুইডিশ পরিবার।  ছবি : সংগৃহীত

সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ও ধর্মীয় ইতিহাসের শিক্ষক ম্যাটিয়াস গার্ডেল এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেন, ইসলামফোবিয়ার ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, সুইডেনে ২০১৮ সালে ইসলামফোবিয়া নজিরহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি জানান, গবেষণায় দেখা গেছে মুসলমান ও তাদের মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলছে। প্রতি বছরই আগের বছরের তুলনায় মুসলিমরা বেশি পরিমাণে হামলার শিকার হচ্ছে। এ বর্ণবাদী হামলা এখন সুইডেনের সামাজিক জীবনে দুর্নামের তিলকে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সংবাদমাধ্যম মুসলমানদের সম্পর্কে যেসব সংবাদ প্রকাশ করে, তার অধিকাংশই ‘নেতিবাচক’। তাই দ্রুতগতিতে ইসলামফোবিয়া বিস্তার লাভ করছে। তবে তিনি খুবই আশাবাদী যে, তাদের শান্তিময় দেশে শিগগির এ অবস্থার অবসান ঘটবে।

সুইডেনের একটি মসজিদ।  ছবি : সংগৃহীত

অন্যদিকে সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির ২০১১ সালের পরিসংখ্যা অনুসারে সুইডেনের মোট জনসংখ্যার সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ মুসলিম। আনন্দের বিষয় হলো, ইসলামফোবিয়া বাড়লেও সুইডেনে ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থা দিন দিন ভালোর দিকে যাচ্ছে। এখন সুইডিশ পার্লামেন্টে ৭ জন মুসলিম পার্লামেন্ট সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন নারী সদস্য। সাতজনের ছয়জন কুর্দি মুসলিম, অন্যজন সোমালিয়ান বংশোদ্ভুত লায়লা আলি আলমি। ২০১৮ সালের ০৯ সেপ্টেম্বরের দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা বিজয়ী হন। যথাক্রমে তারা হলেন- সুইডেন ডেমোক্র্যাটসের সারা সেপ্পালা, লিবারেল পার্টির গুলান আফগি, লেফটিস্ট পার্টির আমিনাহ কাকাবাভে, রোজা গোকলো হেইদেইন, সোস্যাল ডেমোক্র্যাটসের সারকান কোসা, লাওয়েন রিদর ও কাদির কাসিরকা। পার্লামেন্টের মুসলিম সদস্যরা আশা করছেন, স্থানীয় মুসলিম কাউন্সিল ও পৌরসভা নির্বাচনেও মুসলিম প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৮ সালের জুনে সুইডেনের স্টেট স্ট্যাটিস্টিকস অর্গানাইজেশন পরিচালিত এক জরিপ অনুসারে দেখা যায়, দেশের প্রায় ১ কোটি জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ অভিবাসী। এদের কারণেও সুইডেনে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতে (২০১১ সালের) সুইডেনে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলমান বসবাস করে।

সুইডেনে ১৯৯৮ সালে ৩.২১ শতাংশ মুসলিম ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের মধ্যেই এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণে এসে দাঁড়ায়। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য ধর্মাবলম্বীরা যে হারে ইসলামের প্রতি ধাবিত হচ্ছে, সে ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যেই সুইডেনে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ হবে মুসলিম। আরো অন্যান্য তথ্যে দেখা গেছে, ইসলামফোবিয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মুসলিমদের মুগ্ধকর আচার-আচরণে অন্যরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।

-আনাতোলিয়া এরাবিক ও আরব৪৮ অবলম্বনে

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।