ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

তাসবিহ তৈরিতে রেকর্ড গড়তে চান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হায়দার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৯
তাসবিহ তৈরিতে রেকর্ড গড়তে চান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হায়দার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুল্লাহ আল হায়দারের তৈরি প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুট লম্বা তাসবিহ। ছবি: বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আল্লাহ তাআলার জিকির-বন্দনা করতে তাসবিহ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ‘তাসবিহ’ মূলত আরবি শব্দ। তাসবিহের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার গুণকীর্তন ও মহিমা প্রকাশ করা হয়।  সাধরণত একটা সুতার মধ্যে অনেকগুলো বোতাম বা গোটা গেঁথে তাসবিহ তৈরি হয়। অতীতে প্রাকৃতিক উপাদান বা বিভিন্ন গাছের ফল বা বীজ দিয়ে তাসবিহ তৈরি করা হলেও বর্তমানে প্লাস্টিক, পিতল, ধাতু ইত্যাদির সমন্বয়েও তাসবিহ-মালা তৈরি হতে দেখা যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামের যুবক আব্দুল্লাহ আল হায়দার (৩০) সুদীর্ঘ তাসবিহ তৈরি করে এবার বিশ্বরেকর্ড গড়তে চাচ্ছেন। দুইজন সহযোগী নিয়ে দুই মাস কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুট লম্বা তাসবিহ তৈরি করে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম ওঠানোর আবেদন করেছেন তিনি।

সাদা, কালো, সোনালি, সবুজ  চার রঙের মিশ্রণে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০টি পুঁথি দিয়ে তাসবিহটি তৈরি করেছেন হায়দার। এটি তৈরিতে তার ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকা। তাসবিহটির ওজন ৬৭টি কেজিরও বেশি। হায়দারের বড় ভাই ফ্রান্স প্রবাসী আব্দুল্লাহ আল-হাসান তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুল্লাহ আল হায়দার (৩০) বিশাল আকৃতির তাসবিহ তৈরি করে এবার বিশ্বরেকর্ড গড়তে চাচ্ছেন।  ছবি: বাংলানিউজ

এ বছরের জানুয়ারির দুই তারিখ থেকে তাসবিহ তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। মো. আরিফুল ইসলাম ও আল-মামুন নামে তার  দুই বন্ধু একাজে তাকে সহযোগিতা করেন।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হায়দার বলেন, পুঁথি দিয়ে তৈরি তার এই তাসবিহটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্ববৃহৎ তাসবিহ। ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি বিশ্বরেকর্ড গড়ার লক্ষে এ তাসবিহ তৈরি করেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেছি পাকিস্তানে ৬০ কেজি ওজনের একটি তাসবিহ রয়েছে। সে হিসেবে আমার তাসবিহটি লম্বা এবং ওজনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হবে। সুযোগ পেলে তাসবিহটি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে আমি উপহার দিতে চাই। যেহেতু তিনি তুরস্কের সবচেয়ে বড় মসজিদ নির্মাণ করেছেন, তাই তাসবিহটি তাকে দিতে চাই।

প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুট লম্বা তাসবিহটি গুটিয়ে রাখা হয়েছে।  ছবি: বাংলানিউজ

জালশুকা গ্রামের শরীফ আবাদুল্লাহ্ হারুন ও খোশ নাহার বেগম দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট হায়দার। পড়ালেখা শেষ করে এখন বাড়িতেই অলস সময় কাটছে তাঁর। তাই এই অলস সময়টাকে কাজে লাগাতে এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে রেকর্ড গড়া যায়। তাই মা খোশ নাহার বেগমের অনুমতি নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই তাসবিহ তৈরির কাজ শুরু করেন। তার মা তাকে এই কাজে সময় দিচ্ছেন।

হায়দারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির একটি কক্ষের মেঝেতে কাপড়ের উপর তাসবিহটি রাখা হয়েছে। এটি রাখার জন্য কাঠ ও কাঁচ দিয়ে একটি বাক্স বানিয়েছেন। দিনের আলোতে বিভিন্ন রংয়ের আবরণে তাসবিহটি ঝিলিমিল করছে। বিশাল আকৃতির এ তাসবিহ দেখতে গ্রামের বিভিন্ন মানুষজন হায়দারের বাড়িতে আসছেন।

রংবেরঙের দীপ্তি চঢ়াচ্ছে হায়দারের তাসবিহ।  ছবি: বাংলানিউজ

বাংলানিউজকে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা  বলেন, তাসবিহ’র মাধ্যমে আমরা খতম দিয়ে থাকি। এত বড় তাসবিহ আমরা কোথাও দেখিনি। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। ধর্মীয় ব্যাপারে একটি ভাল কাজ। তাসবিহটির মাধ্যমে আল্লাহক তাআলার জিকির করা গণনা করা যাবে।

এ বিষয়ে জামিয়া দারুল আরকাম ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি মাজহারুল হক কাসেমীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মূলত তাসবিহ বিভিন্ন জিকিরের হিসাব রাখার জন্য বানানো হয়। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, সুবাহানআল্লাহ, ইসতেগফার, দরুস শরিফ ও এ জাতীয় বিভিন্ন জিকির রয়েছে হাদিসে। এ সব জিকির-আজকারের সংখ্যা হিসাব রাখার জন্য সে যদি নেক নিয়তে বানিয়ে থাকে, তাহলে সে সওয়াব পাবে। সমস্ত ভাল কাজের সওয়াব নির্ভর করে নিয়ত সঠিক ও বিশুদ্ধ হওয়ার ওপর।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।