ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদ-স্থাপত্য

সৌন্দর্যে দীপ্তিমান ইস্পাহান জামে মসজিদ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
সৌন্দর্যে দীপ্তিমান ইস্পাহান জামে মসজিদ সৌন্দর্যে দীপ্তিমান ইস্পাহান জামে মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

ইসফাহানের জামে মসজিদ হলো ইরানের দীর্ঘ প্রাচীন মসজিদ-স্থাপত্য। ইতিহাসের কোন ক্ষণে ঐতিহাসিক মসজিদটির প্রতিষ্ঠা—সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কিছু তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়, এ মসজিদের অস্তিত্ব পঞ্চম হিজরির আগে থেকে।

ঐতিহাসিক মসজিদটি ইসফাহান শহরের পুরানো অংশে অবস্থিত। যেটি ‘সাবজে ময়দান’ (সবুজ ময়দান) নামে পরিচিত।

মসজিদটির প্রত্নতাত্ত্বিক খননকালে বেশ কিছু প্রাচীন দলিল ও দস্তাবেজের সন্ধান পাওয়া যায়। জানা গেছে, এসব দলিল দায়লামি, সেলজুক, মোঙ্গল এবং সাফাভি আমলের।

ইরানের দীর্ঘ প্রাচীন মসজিদ-স্থাপত্য ইসফাহানের জামে মসজিদ।  ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের বিভিন্ন যুগের স্থাপত্যরীতির সমন্বিত এক অপরূপ নিদর্শন এ মসজিদ। মসজিদে আগত দর্শকের মুগ্ধকর দৃষ্টিতে ইসলামী ঐতিহ্যের বিভিন্ন স্মৃতি ও যুগ-পরম্পরা ভেসে উঠবে নিমিষেই।  

মসজিদের আটটি প্রবেশ পথ রয়েছে। সবেচেয়ে পুরানো প্রবেশ পথটি হাতেফ সড়ক অভিমুখি। এ পথটির স্থাপত্য-শৈলীর সুনিপুণ কারুকাজে দর্শক মাত্রই মুগ্ধ হবেন। প্রবেশ পথের ডান পাশে ছোট ছোট প্লাটফর্ম রয়েছে। এগুলো চতুর্থ হিজরিতে দায়লামি যুগে তৈরি। বাম পাশের স্তম্ভ শ্রেণি সেলজুক আমলের স্থাপত্য রীতিতে তৈরি।

ইসফাহানের জামে মসজিদের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য।  ছবি: সংগৃহীত

মসজিদের উঠানের দক্ষিণ একটি সুদৃশ্য গম্বুজ রয়েছে। নাম ‘খাজা নিজামুল মুল্‌ক গম্বুজ’। সেলজুক সুলতান মালিক শাহের উজির নিজামুল মুল্‌ক এটি নির্মাণ করেন। পঞ্চম হিজরিতে নির্মিত এ গম্বুজের পার্শ্ববর্তী স্থানে সেলজুক আমলের আরো কিছু স্তম্ভ রয়েছে। তবে দক্ষিণ পশ্চিম পাশের স্তম্ভটি শাহ আব্বাস সাফাভির আমলে তৈরি।

মসজিদের দক্ষিণ সিঁড়ির নাম ‘সুফফেহ সাহেব’। সিঁড়িটি ৬ষ্ঠ হিজরির বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত। তবে ভেতরে ও বাইরের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজগুলো সাফাভি আমলে করা হয়েছে। সিঁড়িসংলগ্ন সুদৃশ্য মিনারগুলো সংযোজন করা হয়েছে ‘হাসান বেগের সময়ে’। উঠানের চারপাশে মসজিদের দেয়ালের শৈল্পিক কাজগুলো করেন হাসান বেগ তুর্কমান।

ইসফাহানের জামে মসজিদের দরজার কারুকাজ।  ছবি: সংগৃহীত

মসজিদের পূর্ব সিঁড়ির নাম ‘সুফফেহ শাগেরদ’। ৬ষ্ঠ হিজরিতে সেলজুক আমলে এটি তৈরি করা হয়েছে। আরেকটি সিঁড়ি রয়েছে ‘সুফফেহ ওমর’। এটি কুতুবউদ্দিন মাহমুদ শাহের আমলে তৈরি করা হয়েছে। তিনি আল-মোজাফফর বংশের নৃপতি ছিলেন। আশরাফ আফগানের শাসনামলে এই সিঁড়িটির সংস্কার করা হয়।

মসজিদের পশ্চিম সিঁড়ির নাম ‘সুফফেহ ওসতাদ’। এটিও ৬ষ্ঠ হিজরিতে নির্মিত। এর সিরামিক টাইলের কাজগুলো সাফাভি বংশের শাহ সুলতান হোসাইনের আমলে সম্পন্ন হয়। পশ্চিম সিঁড়ির উত্তর পাশে একটি ছোট মসজিদ রয়েছে। এটি তৈরি করেছিলেন মোঙ্গল শাসক ওলজাইতু। এ মসজিদের মিম্বর ও কারুকাজ ৭১০ হিজরিতে সম্পন্ন হয়।

ইসফাহান জামে মসজিদের ভেতরের অপূর্ব কারুকাজ।  ছবি: সংগৃহীত

মসজিদের উত্তর পাশের সিঁড়ি ‘সুফফেহ দরবেশ’। এটিও অবশ্য ৬ষ্ঠ হিজরিতে তৈরি। এর অভ্যন্তরে প্লাস্টারের কাজ ও নকশা সাফাভি সুলতান শাহ সুলায়মানের আমলে সম্পন্ন করা হয়। এর বাইরের টাইলে অলংকরণ হয় অনেক পরে ১৩৩৬/১৩৩৭ হিজরিতে। অন্যদিকে উত্তর সিঁড়ির পার্শ্ববর্তী এবং এর উত্তরাংশে যে স্তম্ভগুলো রয়েছে সেগুলোও ৬ষ্ঠ হিজরিতে তৈরি করা হয়েছে।

অসাধারণ কারুকাজে শোভামণ্ডিত ইস্পাহান জামে মসজিদ।  ছবি: সংগৃহীত

ইসফাহান জামে মসজিদের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন তা হলো, সুদৃশ্য তাজউল মূল্‌ক গম্বুজ। সেলজুক আমলের স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন বয়ে আছে এ গম্বুজ। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ইসফাহানের এ মসজিদটি পরিদর্শনে আসেন। সহস্রাব্দের বিবর্তনে মসজিদটি যেমন ঐতিহাসিক ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, তেমনি ইরানের পর্যটন শিল্পের জন্যও হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। ইরানে এ ধরনের আরো প্রচুর অপূর্ব ও মুগ্ধকর স্থাপত্যকলার নিদর্শন রয়েছে।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।