ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদে গৃহহীনদের আশ্রয় দেন ইমাম!

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৯
মসজিদে গৃহহীনদের আশ্রয় দেন ইমাম! ঐতিহাসিক সেলিমে হাতুন জামে মসজিদ। এ মসজিদের ইমাম অসহায়দের সেবায় অনবদ্য অবদান রাখেন। ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের ইস্তানবুলের বেয়োগলু জেলার ঐতিহাসিক সেলিমে হাতুন জামে মসজিদ। মসজিদটির নির্মাণ করা হয় সপ্তদশ শতাব্দীতে। ২০১৭ সাল মসজিদটি থেকে গৃহহীনদের বিনামূল্যে খাবার-পোশাক ও গোসল-পরিচ্ছন্নতার সুযোগ দিয়ে আসছে। বর্তমানে মসজিদটি ইস্তানবুলের অসংখ্য গৃহহারা ও অসহায় মানুষের আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। খবর তুরস্কের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনাদুলু নিউজ এজেন্সির।

মূলত মসজিদের ইমাম ওসমান গোরকেম ব্যবস্থাপনায় গৃহহীনরা বিভিন্ন রকম সহযোগিতা ও মৌলিক অধিকার পূরণের সুযোগ পাচ্ছে। ওসমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এটিই দেশের একমাত্র মসজিদ; যেখানে প্রতিদিন কমপক্ষে  ৫০ জন গৃহহীন গোসল-পরিচ্ছন্নতা ও পানাহারের সুযোগ পেয়ে থাকেন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে গোসলের জন্য পানি গরম করার একটি হিটার মসজিদে স্থাপন করা হয়। তখন থেকেই মসজিদে গৃহহীনদের গোসলের ব্যবস্থার সূচনা হয়। আর গৃহহীনরাও মসজিদকে নিজেদের আশ্রয় বানিয়ে নিতে শুরু করেন।

ইমাম গোরকেম বলেন, সবসময়ই আমার চিন্তা ছিল- এই লোকগুলো কোথায় গোসল করবে, কোথায় খাবে, কীভাবে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনবে ইত্যাদি। কারণ গৃহহীনদের অনেকেই পছন্দ করেনা। তারা যখন কোনো সেলুনে যায়, নাপিত তখন তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়না। তাদের কাছে টাকা না থাকার কারণে এমন করে না, বরং তাদের শরীর নোংরা ও দুর্গন্ধ হওয়ার কারণে অবহেলা করে। সরকারি গোসলখানাগুলোতেও একই ধরনের আচরণের মুখোমুখি হয়ে থাকে তারা।

গৃহহীনদের সঙ্গে কথা বলছেন মসজিদের ইমাম ওসমান গোরকেম।  ছবি: সংগৃহীত

গোরকেম বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদানের সাহায্যে গৃহহীনদের সেবা করেন। প্রতিদিন তাদের বিনামূল্যে খাবার দেন। পাশাপাশি মসজিদের পক্ষ থেকে প্রতি শনিবার তাদের জন্য নতুন পোশাক-পরিচ্ছদেরও ব্যবস্থা করেন।

মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করার কারণে ওসমান গোরকেমের ব্যস্ততার শেষ নেই। কিন্তু শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি প্রতি শনিবার বিনামূল্যে গৃহহীনদের চুল-দাড়ি কেটে দেন। সমাজের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করার জন্য তিনি এই কাজ করেন বলে জানান তিনি।

ওসমান গোরকেমের হৃদয় গৃহহীনদের ভালোবাসায় আপ্লুত। তাদের প্রতি ভীষণ আন্তরিকতা নিয়ে তিনি বলেন, সাপ্তাহিক শনিবারে আমি বিশ থেকে পঁচিশ জনের চুল কেটে দেই। যদি চিন্তা করি, তাদের চুল কাটা আমাদের কাজ নয়; তবে আমরা তাদের হারাতে পারি।

এসব অবহেলিত মানুষের জন্য কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ইমাম গোরকেমের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত প্রকল্প রয়েছে। গৃহহীনরা যখন কোনো কাজের সুযোগ পান, তখন এক মাস মসজিদে থাকার জন্য তিনি তাদের ব্যবস্থা করে দেন। এতে তারা নিজেদের আবাসের ব্যবস্থা করে নেওয়ার সময় পেয়ে থাকেন।

আবার কেউ কোনো কাজ পেলে অথবা কারো কোনো চাকরি জুটলে, গোরকেম নিজেই সরাসরি কাজের বা চাকরির জায়গাটা দেখে আসেন। বর্তমানে মসজিদটিতে চাকরি পেয়ে বাসস্থানের ব্যবস্থা করার উদ্দেশে পাঁচ জন লোক অবস্থান করছেন।

গৃহহীনদের চুল চোট করে দিচ্ছেন মসজিদের ইমাম ওসমান গোরকেম।  ছবি: সংগৃহীত

গোরকেম প্রত্যেককে নিজেদের সামর্থ্য অনুাযায়ী দুস্থ ও গৃহহীনদের সাহায্যের জন্য যেন সবাই এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান। সবার উদ্দেশে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, নিজে থেকে মানুষের জন্য কিছু করুন। মনে শান্তি পাবেন, বিপুল সওয়াব লাভে ধন্য হবেন। কেউ যখন ব্যাংক-চেকের মাধ্যমে সাহায্য করতে চাইলে আমি নিষেধ করি। কারণ বিত্তবানদের উচিত দরিদ্রের চোখে চোখ রাখা। তাদের দুঃখ-কষ্টের ভাষা বোঝার চেষ্টা করা। অসহায়দের নিজেদের ঘরে নিয়ে তাদের দুরাবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া। এতে ধনাঢ্যরা মনে অনেক শক্তি পাবেন। নিজেদের চিন্তা-ভাবনায়ও পরিবর্তন আসবে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে কারো জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার নবীগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছেন। বস্তুত এরপরও তাদের অনেকে পৃথিবীতে সীমাতিক্রম করে। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩২)

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।