নিজের প্রথম হজযাত্রা সম্পর্কে দলটির সদস্য জাইন লাম্বাত বলেন, বিভিন্ন কারণে এই যাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের ঈমান ও বিশ্বাসের পথে বেরিয়েছি।
জাইন বলেন, যদি সত্যিকার অর্থে ও মনে-প্রাণে আপনি হজ করার ইচ্ছে করেন, তাহলে আল্লাহ আপনার জন্য পথ সহজ করে দেবেন।
ব্রিটিশ গ্রুপটি ০৭ জুন পবিত্র ভূমির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। তারা সফরের নাম দিয়েছে ‘ট্যুর দে হজ’। যাত্রার দিন থেকে ৬০ দিনের ভেতর সৌদিতে গিয়ে পৌঁছবেন বলে আশা তাদের। এ যাত্রায় ১৭টি দেশ অতিক্রম করবেন। তবে সিরিয়া ও ইরাক বিমানে পাড়ি দিয়ে মিসরে পৌঁছাবেন।
সৌদিতে পৌঁছে প্রথমে তারা মদিনা যাবেন। মদিনা অভিমুখী এই যাত্রায় বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিবিধ সমস্যা নিয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে জনসাধারনের মাঝে সচেতনতা তৈরির কাজ করছেন। দরিদ্র মুসলমানদের সাহায্য এবং মসজিদ ও শিক্ষাঙ্গন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন রকমের তহবিলও সংগ্রহ করছেন।
দলের সদস্য জুনায়েদ আফজাল এক সাক্ষাৎকারে ইস্তাম্বুলকে ‘সভ্যতা ও ইতিহাসের দোলনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ইস্তাম্বুলে পৌঁছতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। উচ্ছ্বসিত জুনায়েদ বলেন, ৭ই জুন লন্ডন থেকে আমরা নিজেদের বাইসাইকেলে যাত্রা শুরু করি। ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৬০ দিনের ভেতর আমরা মদিনায় পৌঁছার পরিকল্পনা করছি।
আশা করছি, যাত্রাপথে বিশ্বের মুসলমানদের সহায়তার জন্য পাঁচ লক্ষ পাউন্ড সমপরিমানের (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা পাঁচ কোটি এগারো লাখ চৌদ্দ হাজার টাকা সমপরিমাণ প্রায়) তহবিল সংগ্রহ করতে পারবো।
ইস্তাম্বুলের দোলমাবাহচের প্রেসিডেন্ট দপ্তরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান তাদের স্বাগত জানিয়েছেন। তারা জানান, ইস্তাম্বুল ভ্রমণের জন্য দলের সবাই বেশ উদগ্রীব ছিল। তাই ঐতিহ্যের এ শহরে তারা যাত্রাবিরতি করেন।
লাম্বাত বলেন, দীর্ঘ এ পথে আমরা যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই ঐতিহ্যবাহী তুর্কি মসজিদ পেয়েছি এবং আমাদের তুর্কি ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারা আমাদের দারুণ আতিথেয়তায় ঋদ্ধ করেছেন।
সাইকেলে হজযাত্রা এবারই প্রথম নয়। বরং সাইকেল চালিয়ে হজে যাওয়ার চেষ্টা ইদানিং বাড়ছে। গত মাসে চার কেনিয়ান সাইক্লিস্ট এবং দুই সদস্যের একটি দল নাইজেরবি থেকে মক্কার উদ্দেশে দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেছেন। (বিস্তারিত পড়ুন: সাইকেল চালিয়ে হজযাত্রায় চার কেনিয়ান)
তাদের সফরের সার্বিক তথ্য জানাতে তারা ‘পেডল টু হজ’ নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেছেন। সেখানে তারা তাদের কর্মপরিধি, যাত্রালক্ষ্য ও আনুসাঙ্গিক অন্যান্য তথ্য সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘পেডল টু হজ’ গ্রুপে চারজন সাইক্লিস্ট রয়েছেন। কেনিয়াতে মৌলিক শিক্ষায় সামর্থ্যহীন শিশুদের শিক্ষার জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে তারা সাইকেলে হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের পাঁচ সদস্যের এক পরিবার বাইসাইকেল চালিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন হজ পালনের জন্য। এই পুণ্যের যাত্রায় রয়েছেন মুসলিস আবদুল্লাহ (৪৭), তার স্ত্রী জুলিয়ান্তি হুসিন (৪৭), তাদের সন্তান মির্জা হাকিম (১৫), আহমদ জাকি হাফিজ (১১) এবং ছয় বছর বয়সী অলিভিয়া ইয়ুমনা রয়েছেন। তাদের দিক-নির্দেশনায় সঙ্গে আছেন মুসলিসের বন্ধু মোহামেদ দামাহুরি মুতালিব (৬২)।
জাভার মধ্যাঞ্চলের শহর যুগজাকার্তায় নিজেদের বাড়ি থেকে মক্কায় গিয়ে পৌঁছাতে তাদের পাড়ি দিতে হবে ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ। (বিস্তারিত পড়ুন: সাইকেলে হজযাত্রায় ইন্দোনেশীয় পরিবার, পেরোবে বাংলাদেশও)
এর আগে ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়ান এক যুবক হজ পালন করতে ৯ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি হাঁটে মক্কায় পৌঁছে। এছাড়াও একই বছর সাইকেল চালিয়ে হজের উদ্দেশে সৌদি আরবের মদিনায় যান যুক্তরাজ্যের আট যুবক। সেই যাত্রায় সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন তারা। সেই আটজনের দলে তিন বাংলাদেশিও ছিলেন।
২০১৬ সালে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সাইকেল চালিয়ে সৌদি আরবের তায়েফ পৌঁছেছেন এক চীনা মুসলিম। চীনের জিংজিয়াংয়ের অধিবাসী ওই মুসলিমের নাম মুহাম্মদ। চীন থেকে সাইকেল চালিয়ে সৌদি পৌঁছতে তাকে ৮ হাজার ১৫০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। (বিস্তারিত পড়ুন: চীন থেকে সাইকেল চালিয়ে হজে)
২০১২ সালে ৪৭ বছর বয়সী বসনিয়ান মুসলিম সেনাদ হাদজিক হজ পালনের জন্য পায়ে হেঁটে পবিত্র মক্কায় পৌঁছেন।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এমএমইউ