ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

কাবার গিলাফে আঁকা ‘ভালোবাসার রূপ-মাধুর্য’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৯
কাবার গিলাফে আঁকা ‘ভালোবাসার রূপ-মাধুর্য’ আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফ। ছবি: সংগৃহীত

মুমিন মাত্রই কালো গিলাফের আঁচল ও সবুজ গম্বুজের ছায়ার স্বপ্ন দেখেন। কাবা শরিফের প্রাসঙ্গিকতা আসলেই দু’ চোখে ভেসে ওঠে ‘বাইতুল্লাহ’র হৃদয়লোভন দৃশ্য। মুসলিম উম্মাহর অগণিত সদস্যের আশৈশব বাসনা—কাবার পবিত্র গিলাফ একবারের জন্য হলেও ছুঁয়ে দেখা।

সাধারণত পবিত্র কাবাঘরের চারপাশ—আদ্যোপান্ত কালো গিলাফে জড়ানো থাকে। স্বর্ণখচিত কোরআনের আয়াত ও বিভিন্ন পবিত্র শব্দ দিয়ে গিলাফে আঁকা থাকে আলপনা।

কাবার গিলাফ বুনছেন এক শিল্পী।  ছবি: সংগৃহীতকাবার গিলাফ কী দিয়ে তৈরি হয়
সেই কাবার পবিত্র গিলাফ তৈরি করা হয়, প্রায় ৭০০ কেজি প্রাকৃতিক রেশম দিয়ে। মোট পাঁচ টুকরা গিলাফ বানানো হয়। চার টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি কাবাঘরের দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো মজবুতভাবে সেলাইযুক্ত। প্রতিবছর দুইটি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি করা হয়। হাতে তৈরি করতে সময় লাগে আট থেকে নয় মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়। এতে খরচ পড়ে প্রায় ২৫ মিলিয়ন রিয়াল।

কাবার গিলাফ বুনছেন এক শিল্পী।  ছবি: সংগৃহীতকী লেখা থাকে কাবার গিলাফে
১৪ মিটার উঁচু কালো রঙের এই গিলাফ সর্বমোট ১৬টি ছোট টুকরা দিয়ে সুবিন্যস্ত। কাবা শরিফের দরজায় ঝোলানোর জন্য আলাদাভাবে এতে সাড়ে ছয় মিটার উঁচু এবং সাড়ে তিন মিটার প্রস্থ পর্দা রয়েছে। গিলাফের এক-তৃতীয়াংশের ওপর দিকে ৯৫ সেন্টিমিটাির প্রস্থের বন্ধনীতে সোনার প্রলেপকৃত রুপার সুতা দিয়ে কারুকার্যশোভিত আল্লাহর নাম এবং কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ক্যালিগ্রাফি খচিত করা হয়। আরো লেখা থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’, ‘আল্লাহ জাল্লা জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’, ‘ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান’ ইত্যাদি।

কাবার গিলাফ ঠিক করছেন এক দায়িত্বশীল।  ছবি: সংগৃহীতউত্তর দিকের অংশে লেখা থাকে, ‘খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে আব্দুর রহমান আল সাউদের নির্দেশে এই গিলাফ পবিত্র নগরী মক্কায় তৈরি করা হয়েছে’।

কাবার গিলাফ বুনছেন এক শিল্পী।  ছবি: সংগৃহীতমিসর থেকে আসত কাবার গিলাফ
ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কাবাঘরের গিলাফ মিসর থেকে আসত। মাঝে ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ব্যবহূত কাবার গিলাফ সৌদি আরবের মক্কায় তৈরি হয়েছিল। ১৯৩৯ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মিসর ফের সেই দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমানে সৌদি আরবে তৈরি হওয়া এই গিলাফও মিসরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে।

যখন মিশল থেকে আসতো কাবার গিলাফ।  ছবি: সংগৃহীতকোথায় তৈরি করা হয় গিলাফ
১৯৭৭ সালে নতুনভাবে স্থাপিত মক্কা নগরীর উম্মে জাওদ নামের জায়গায় অবস্থিত এ অত্যাধুনিক কারখানায় কাবাঘরের বাইরের ও ভেতরের গিলাফ তৈরি হয়। মদিনায় রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকে ব্যবহূত অভ্যন্তরীণ গিলাফও এখানে তৈরি করা হয়।

কাবার গিলাফ বুনছেন এক শিল্পী।  ছবি: সংগৃহীতকারখানাটি ছয়টি অংশে বিভক্ত—বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং ও অভ্যন্তরীণ পর্দা বিভাগ। বর্তমানে এতে ২৫০ জনের বেশি শিল্পী নিয়োজিত আছেন।

কাবার গিলাফ বুনছেন এক শিল্পী।  ছবি: সংগৃহীতকাবায় গিলাফ পরানো হয় কখন থেকে
হিজরতের পূর্বে কে গিলাফ পরিয়ে ছিলো তাতে মতবিরোধ থাকলেও সকলে ঐক্যমত যে, হিজরতের ২২০ বছর আগে বাদশাহ তুব্বা আবি কারব আসাদ এ গিলাফের প্রথম প্রচলন করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এবং হযরত আবু বকর (রা.) কাবা শরিফে গিলাফ পরিয়ে দেন। এরপর থেকে মুসলিম খলিফা এবং শাসকেরা এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন।

কাবার গিলাফ বুনছেন শিল্পী।  ছবি: সংগৃহীতএছাড়া নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম কাবা শরীফের গিলাফ পরানোর সৌভাগ্য অর্জন করেন আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের জননী নুতাইলা।

কাবার গিলাফ হস্তান্তর।  ছবি: সংগৃহীতগিলাফ পরিবর্তন করা হয়
গিলাফ তৈরি করার পর তা কাবা শরিফের চাবিরক্ষক বনি শাইবা গোত্রের মনোনীত খাদেমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১০ জিলহজ সবার সহযোগিতায় গিলাফ কাবা শরিফের নতুন গিলাফ গায়ে জড়ানো হয়।

পরিবর্তন করা হচ্ছে কাবার গিলাফ।  ছবি: সংগৃহীতগিলাফ পরিবর্তনের কাজে মসজিদুল হারার ও মসজিদে নববির কার্যপরিচালনা পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক নেতৃত্ব দেন। এ সময় সৌদি বাদশার প্রতিনিধিসহ দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। পুরাতন গিলাফ ঠিকভাবে টুকরো টুকরো করে প্রতি বছর বিভিন্ন মুসলিম সরকারপ্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপহার দেওয়া হয়।

গিলাফ তৈরি... ছবি: সংগৃহীতইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১১৬১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।