ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

সৌদি পৌঁছালেন ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হতাহতদের স্বজনরা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৯
সৌদি পৌঁছালেন ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হতাহতদের স্বজনরা ফুলেল শুভেচ্ছায় তাদের বরণ করছেন সৌদি কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে পৌঁছেছেন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হতাহতদের কিছু স্বজন। এবারের হজ মৌসুমে ক্রাইস্টচার্চ ট্রাজেডির হতাহতদের ২০০ আত্মীয়কে হজ করাচ্ছে সৌদি আরব। তাদের হজে যাওয়া-আসা ও থাকাকালীন যাবতীয় আর্থিক খরচ বহন করছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। খবর সৌদি প্রেস এজেন্সির।

শুক্রবার (০২ আগস্ট) তাদের প্রথম বহর জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিকম বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছান। জেদ্দায় পৌঁছার পর তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান, সৌদি আরবের হজ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উচ্চ স্থানীয় কর্মকর্তারা।

তাদের স্বাগত জানাতে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে সৌদির কর্মকর্তারা।  ছবি: সংগৃহীতসৌদি আরবের দাওয়াহ, নির্দেশনা ও ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. শাইখ আবদুল লতিফ আল-শেইখ বলেন, বাদশাহ সালমান হারামাইন শরিফাইনের অতিথিদের দিক-নির্দেশনা, তত্ত্বাবধান ও সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছেন। সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধীদের মোকাবেলার জন্য আমরা এসব ভাই-বোনদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। মূলত তাদের মনোকষ্ট দূর করতে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

গাড়ি থেকে নামছেন সেই দিনের হতাহতদের স্বজনরা।  তাদের স্বাগত জানাচ্ছেন সৌদির কর্মকর্তারা।  ছবি: সংগৃহীতএর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ড. শাইখ আবদুল লতিফ আল-শেইখ তখন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ক্রাইস্টচার্চ গণহত্যায় যেসব মুসলমনের ওপর মানবিক মূল্যবোধের স্খলন এবং লঙ্ঘন হয়েছিল, তাদের আত্মীয়দের কষ্ট দূর করতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের বিশেষ আদেশেই তারা হজের এমন সুযোগ পাচ্ছেন।

আরো পড়ুন: ক্রাইস্টচার্চে হতাহতদের পরিবারের ২০০ জনকে হজ করাবে সৌদি

‘হাতে মিলাও হাত, মোরা মুহাম্মদের উম্মত’।  ছবি: সংগৃহীততিনি আরও বলেন, মুসলিমদের পক্ষে ও সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে  নিউজিল্যান্ড সরকার সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। বস্তুত সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই, কোনো জাতি নেই। অপরাধীরা প্রত্যেকে অভিন্ন রূপী ও একই মন-মানসিকতার।

ফুলেল শুভেচ্ছায় বিমুগ্ধ।  ছবি: সংগৃহীতগত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে জুমার সময় এক অস্ট্রেলীয় শ্বেতাঙ্গ-খ্রিষ্টান জঙ্গি বর্বরোচিত হামলা চালায়। পৈশাচিক ওই হত্যাকাণ্ডে ৫১ জন মুসল্লি প্রাণ হারান।  সেই ট্রাজেডির পর তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে। নারকীয় সে হত্যাকাণ্ডের শোকে মুষড়ে পড়ে গোটা নিউজিল্যান্ড। বেদনায় হত-বিহ্বল হয়েছে সমগ্র পৃথিবী। শোকে মুহ্যমান হয়েছে মুসলিম বিশ্ব। আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড শুধু নিউজিল্যান্ডে নয়; পৃথিবীতেই নজিরবিহীন।

তাদের স্বাগত জানাতে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে সৌদির কর্মকর্তারা।  ছবি: সংগৃহীতআরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে মুসলিমরা যেমন আছে

মর্মন্তুদ এই নৃশংসতার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের দরদী ও বিমর্ষ চেহারা দেখেছে বিশ্ববাসী। একদিকে হতাহতদের শোকার্ত পরিবারকে তিনি বুকে টেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিমসহ অভিবাসীদের আশ্বাস ও অভয় দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের শোকের সঙ্গী হয়তো হতে পারবো না। কিন্তু কথা দিচ্ছি, আমরা একসঙ্গেই চলবো। ’

আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে কোরআন তেলাওয়াতে সংসদ অধিবেশন শুরু

নিহত মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানাতে প্রথম থেকেই পোশাক-পরিচ্ছদে নিজেকে অনন্য প্রমাণ করেছেন জেসিন্ডা। নিজেদের সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে হিজাব পরে তিনি মুসলিম কমিউনিটিতে হাজির হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) তিনি নিহতদের স্মরণে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আরবিতে ‘আসসালামু আলাইকুম (আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)’ বলে তার বক্তব্য শুরু করেন।

সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করছেন সেই দিনে হতাহতদের স্বজনরা।  ছবি: সংগৃহীতকেবল তা-ই নয়, আমন্ত্রিত মুসলিমদের জন্য সংসদে নামাজের ব্যবস্থাও করে দেন জেসিন্ডা। এরপর অন্য ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনা করেন। তারপর তিনি উঠে গিয়ে সংসদে আসা মুসলিমদের সমবেদনা জানান। মুসলিম নারীদের বুকে টেনে নেন তিনি।

আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডের জাতীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে জুমার আজান, খুতবা ও নামাজ সরাসরি সম্প্রচার

শুক্রবার (২২ মার্চ) ১টা ৩২ মিনিটে হামলার শিকার আল-নূর মসজিদের পাশে হেগলি পার্কে নীরবতার কর্মসূচিতে অংশ নেন জেসিন্ডা। মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনিসহ শত শত কিউই নারী হিজাব পরে শোকানুষ্ঠানে হাজির হন। এতে প্রায় ২৫ হাজার নিউজিল্যান্ডের নাগরিক সমবেত হন। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে আজান প্রচার হয়। এরপরই দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত।  ছবি: বাংলানিউজতার আগে শোকার্ত জনতাকে হাদিস শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেন, ‘নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বাসীরা (মুমিন) সবাই একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে, পুরো শরীর ব্যথা-যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। ’ এরপর তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডবাসী আপনাদের মতোই শোকাহত। আমরা ঐক্যবদ্ধ। ’

আরো পড়ুন: শোকানুষ্ঠানে হাদিস শোনালেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডবাসী ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের হৃদয় হয়তো ভেঙেছে, কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি একসঙ্গে। আমাদের বিভাজিত করার সুযোগ কাউকে আমরা দেবো না বলে, এ ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডবাসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ’

এর আগে দেশের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা জানান, হামলায় যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেরকমসহ সব সামরিক স্টাইলের আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ করবে নিউজিল্যান্ড।

আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডের পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতাজুড়ে ‘সালাম’

মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দয়াদ্র দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জেসিন্ডা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার বাইরের দেয়ালে তার হিজাব পরিহিত একটি ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। এতে জেসিন্ডাকে তার অবস্থান ও আচরণের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডে প্রায় ৫০ হাজার মুসলমান এবং প্রায় ৬০টি মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্র রয়েছে।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।