ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

জিজ্ঞাসা

মৃতের অসিয়তকৃত কোরবানির পশুর গোশত খাওয়ার বিধান

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৯
মৃতের অসিয়তকৃত কোরবানির পশুর গোশত খাওয়ার বিধান ছবি : প্রতীকী

প্রশ্ন: আপনাদের প্রকাশিত একটি জিজ্ঞাসা-মাসআলা পর্বে দেখেছি—‘মৃত ব্যক্তি কোরবানি করার অসিয়ত করে থাকলে, সেই কোরবানি তার ত্যাজ্য সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে দেওয়া ওয়াজিব এবং এর গোস্ত নিজেরা খেতে পারবেন না। গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।’

এখন আমার প্রশ্ন হলো- মৃত ব্যক্তির অসিয়তকৃত কোরবানি যদি তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে আদায় না হয়, বরং তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশের সঙ্গে ওয়ারিসদের (উত্তরসূরী) সম্পদ থেকে যদি কিছু মেলানো হয়, তাহলে সেই গোশত খাওয়ার হুকুম কী হবে?

উত্তর: মৃত ব্যক্তির অসিয়কৃত কোরবানি যদি এক তৃতীয়াংশ থেকে আদায় না হয়; বরং তা আদায় করার জন্য যদি ওয়ারিসদের মালিকানার সম্পদও ব্যবহৃত হয়, তবুও যেহেতু এই কোরবানি মৃতের অসিয়তকৃত কোরবানি তাই এর গোশত মৃতের ওয়ারিসরা খেতে পারবে না। সদকা করে দিতে হবে।

বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়া গ্রন্থ ফাতাওয়া শামিতে রয়েছে, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস যদি তার অসিয়তকৃত কোরবানি তার নির্দেশে (তারই রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে) আদায় করে থাকে, তাহলে তা সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। তা খাওয়া যাবে না। আর যদি ওয়ারিস মৃতের পক্ষ থেকে নফল আদায় করে, তবে খেতে পারবে। কেননা তখন কোরবানি জবাইকারীর পক্ষ থেকে আদায় হবে, আর সওয়াব মৃত ব্যক্তি পাবেন। (ফাতাওয়া শামি: ৬/৩২৬)

বিখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রহ.) বলেন, আমার কাছে উত্তম মনে হয়, মৃতের পক্ষ থেকে দান-সদকা করা; কোরবানি না করা। তবে যদি কোরবানি করেই ফেলে, তাহলে সেই গোশত না খাওয়া এবং পুরো গোশত সদকা করে দেওয়া।

ফকিহ ইবনুল আরাবি (রহ.) আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারকের কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রহ.) মৃতের নামে তার সম্পত্তি থেকে করা কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এই জন্য যে, কোরবানিদাতা তো নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি দেননি। বরং অন্যের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। সুতরাং তার জন্য অন্যের হক খাওয়া বৈধ হবে না। (আরেদাতুল আহওয়াজি: ৫/২৯০-২৯১)

তবে মনে রাখতে হবে, মৃতের ত্যাজ্য সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ তার ওয়ারিসদের হক। তাই মৃতের অসিয়ত ও ঋণ থাকলে তা এক তৃতীয়াংশ থেকে পূরণ করতে হয়। বাকি দুই ভাগ ওয়ারিসদের মধ্যে মিরাসের অংশ অনুযায়ী বণ্টন করা হয়।

ফাতাওয়া হিন্দিয়াতে রয়েছে, মৃতের অসিয়ত বাস্তবায়ন করা হবে তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে। এরপর বাকি দুই অংশ ওয়ারিসদের মধ্যে মিরাসের অংশ অনুযায়ী বণ্টন করা হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৬/৪৪৭; আস-সিরাজি ফিল মিরাস: ৪-৫)

এক তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদ দিয়ে মৃতের অসিয়ত পূরণ করা জায়েজ নয়। ফিকাহ আকরগ্রন্থ হিদায়াতে রয়েছে, এক তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদ দিয়ে মৃতের অসিয়ত পূরণ করা জায়েজ নয়। (হিদায়া: ৪/৬৩৮)

সুতরাং মৃতের নামে কোরবানি দিতে গিয়ে যদি তিন ভাগের একভাগের চেয়ে বেশি সম্পদ ব্যবহার করতে হয়, তাহলে সমস্ত ওয়ারিসদের কাছ থেকে এটির অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া তাদের সম্পদ ব্যয় করা যাবে না। কারণ, এক তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদ ওয়ারিসদের হক।

প্রশ্নটি করেছেন: সাইদুজ্জামান কামরুল, ইশ্বরদী, পাবনা

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব, মুহাদ্দিস-গবেষক ও সম্পাদক

ইসলাম বিভাগে জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন আপনিও পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬, আগস্ট ০৪, ২০১৯
এমএমই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।