ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

শিশু নির্যাতন রোধে ইসলামের নির্দেশনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
শিশু নির্যাতন রোধে ইসলামের নির্দেশনা

প্রতি বছর বাংলাদেশে শিশু নির্যাতনের হার বাড়ছে। চলতি বছর গড়ে মাসিক শিশু নির্যাতনের হার ২০ শতাংশ বেড়েছে। এমনটাই জানিয়েছে শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ (সিআরএসিবি)।

এবছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গড়ে ৪৫৭ জন করে মোট ৩ হাজার ৬৫৩ শিশু বিভিন্ন রকম সহিংসতার শিকার হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৩৮১ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়।

এক বছরের ব্যবধানে মাসিক গড়ে শিশুসহিংসতা বেড়েছে ২০শতাংশ।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৯৭ শিশু। এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টার শিকার ১০৪ জন। অন্যদিকে এ সময়ের ভেতর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৬১ শিশু। এ ছাড়া হত্যার শিকার ২৮৫, আত্মহত্যা ১৩৩, অপহরণের শিকার ১৪৫, নিখোঁজ ১০৪, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯০, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৯২ জন শিশু। এর বাইরেও পানিতে ডুবে নিহত হয়েছে ৩৯৫ শিশু। (বাংলানিউজ, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)

শিশু নির্যাতন দমনে দেশের আইন
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনে (নারী ও শিশু আইন ১৯৯৫; সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০) ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে তার প্রমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।

শিশু নির্যাতন সম্পর্কে মহানবী (সা.)-এর ভাষ্য
ইসলাম শিশু ও নারী নির্যাতন দমনে শাস্তির নির্দেশনা আরও কঠোর। বিশেষত শিশু নির্যাতনকে ইসলাম জঘন্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে। কারণ শিশুর প্রতি স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসাই ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ছোটকে স্নেহ করে না সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৩)

শিশুর সঙ্গে স্নেহশীল আচরণ ইসলামের মৌলিক সৌন্দর্য। নিজের সন্তানের সঙ্গে সুন্দর আচরণ না করায় মহানবী (সা.) এক পিতাকে ভর্ৎসনা করেন। শিশুরা ভুল করলে প্রহার করা ও বকাঝকার বদলে সুন্দর আচরণ ও উত্তম উপদেশ দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। মায়া-আদরের মাধ্যমে শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)  নিজেও এই নীতি অনুসরণ করতেন। আনাস (রা.) তার শৈশবের দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল (সা.)-এর সেবায় কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার কোনো কাজে আপত্তি করে তিনি কখনো বলেননি ‘এমন কেন করলে বা এমন কেন করলে না’। ” (মুসলিম, হাদিস: ২৩০৯)

শিশু ধর্ষণ সম্পর্কে যা বলে ইসলাম
ধর্ষণ ইসলামী আইনশাস্ত্রের ভাষায় এক ধরনের ‘ব্যভিচার’। তবে যেহেতু ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির অনিচ্ছায় ঘটে থাকে, তাই সে শাস্তির আওতার বাইরে। ধর্ষণকারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে ইসলামী আইনে তার শাস্তি ‘রজম’ বা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা। আর অবিবাহিত হলে এক শ বেত্রাঘাত।

অন্যদিকে শিশু নির্যাতনকে ইসলামে ভয়াবহ ‘সন্ত্রাস’ ও বিশৃঙ্খলা অভিহিত করা হয়েছে। ইসলামী আইনে শিশুর ধর্ষণকারীর আরও কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে।

শিশু নির্যাতন ‘চরম সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা’র অন্তর্ভুক্ত
মিসরের দারুল ইফতা শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন ও সহিংসতাকে কোরআনে বর্ণিত ‘ইহরাব’ ও ‘ফাসাদ ফিল আরদ’ (চরম সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা)-এর অন্তর্ভুক্ত বলেছে। এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বলেও তারা মত দিয়েছে। তারা পবিত্র কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো, তাদের হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে বা বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে ফেলা হবে কিংবা তাদের দেশান্তর করা হবে। দুনিয়ায় এটাই তাদের লাঞ্ছনা এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩৩)

দারুল ইফতার ফতোয়ায় বলা হয়েছে, এই আয়াত বিশ্লেষণ করলে শাস্তির যেসব কারণ পাওয়া যায়, তার সবগুলো শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার মধ্যে প্রমাণিত হয়। যেমন—আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা, দুর্বলের প্রতি অত্যাচার, সমাজে ভয় ছড়ানো, সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করা, মানুষের জীবন ও সম্পদের প্রতি হুমকি তৈরি, মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা ইত্যাদি। যেহেতু পূর্বসূরি ফকিহরা এই আয়াতের আওতাধীন অপরাধীদের ক্ষেত্রে ‘তাজির’ তথা শাস্তি প্রয়োগে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থার স্বাধীনতা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন, তাই শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন বন্ধেও রাষ্ট্র কর্তৃক দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির বিধান করতে পারেন। তবে তা করতে হবে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার পর।

প্রচলিত আইন ও ইসলামী আইনের মৌলিক পার্থক্য
প্রচলিত আইন শুধু অপরাধের শাস্তির কথা বলে আর ইসলামী আইন অপরাধপ্রবণতা বন্ধের জোর দাবি জানায়। শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে ইসলাম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও সচেতনতার পাশাপাশি উপযুক্ত পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলার কথা বলেছে। পাশাপাশি বলেছে সামাজিক প্রতিবাদ ও ন্যায়ের পথে আহ্বানের কথা। সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়া অশ্লীলতা যৌন সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না। ’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৫৫)

ইসলাম বিভাগে আপনিও প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।