ঢাকা, বুধবার, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদে নববির প্রবীণ ইমাম ও খতিব শায়খ আলী আল-হুজাইফি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
মসজিদে নববির প্রবীণ ইমাম ও খতিব শায়খ আলী আল-হুজাইফি

বিশ্বনন্দিত কারি ড. শায়খ আলী আবদুর রহমান আল-হুজাইফি। পৃথিবীর মুসলমানদের হৃদয়-তীর্থস্থান মদিনা মনওয়ারার মসজিদে নববির প্রবীণ ইমাম ও খতিব। তাকে গোটা মুসলিম বিশ্বের অনন্য একজন কারি হিসেবে গণ্য করা হয়। খোদ আরববিশ্বে তিনি পবিত্র কোরআনের চমৎকার ও বিশুদ্ধ উচ্চারণের জন্য তিনি প্রসিদ্ধ।

শায়খ আলী হুজাইফি অল্প বয়সেই সুমধুর কন্ঠে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে পৃথিবীর কোরআনপ্রেমি মানুষের মন কেড়েছেন। মসজিদে নববিতে এখনো তার কন্ঠে কোরআনের তিলাওয়াত যখন ভেসে আসে ইথারে, উপস্থিত মুসল্লি ও স্যাটেলাইটর কল্যাণে বিশ্ব মুসলিমের হৃদয় আলোড়িত হয় নতুন প্রাণে।

শায়খ ড. আলী বিন আবদুর রহমান হুজায়ফিকে চিনেন না এবং জানেন না—এমন সচেতন মুসলিম বিশ্বে খুব বিরল। আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে মসজিদে ইমামতি করেছেন, সেই মসজিদে নববিতে তিনি একদিন-দু’দিন নয়; দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে ইমামতি ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার মধুর কন্ঠে হৃদয়গ্রাহী কোরআন তেলাওয়াত শ্রোতাকে রীতিমতো সম্মোহিত করে রাখে। যারা তার পেছনে নামাজ আদায় করেছেন, তার সুললিত কন্ঠে পবিত্র কোরআনের মধুরম তিলাওয়াত শুনেছেন, তারা ঠিকই উপলব্ধি করেন, কী জাদু আছে তার কন্ঠে।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
শায়খ হুজায়ফির জন্ম ১৯৪৭ সালের ২২ মে। মক্কা মুকাররামার দক্ষিণাঞ্চলীয় আরদিয়া এলাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। গ্রামের নাম কারনুল মুস্তাকিম। তার পিতা ছিলেন তৎকালীন সৌদি সামরিক বাহিনীর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব।

সম্পূর্ণ দ্বীনি পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন গ্রামের মকতবে। কোরআনের তালিম নেন শায়খ মুহাম্মদ ইবনু ইবরাহিম হুজায়ফির নিকট। তার নিকট পবিত্র কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন।

স্কুল, মাধ্যমিক, অনার্স-মাস্টার্স ও পিএইচডি
শায়খ হুজায়ফি ১৯৬১ সালে ইসলামিক স্কুল ভর্তি হন। এরপর মাআহাদ ইলমিতে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সমাপন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করেন। ১৯৭২ সালে রিয়াদস্থ ইমাম মুহাম্মদ ইবনু সাউদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া অনুষদ থেকে ফিকহশাস্ত্রে বিএ অনার্স করেন। ১৯৭৫ সালে ইসলামী আইনের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি নেন মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তীতে তিনি পিএইচডি ডিগি অর্জন করেন।

শায়খ আলী হুজায়ফির কর্মোচ্ছ্বল জীবন
কর্মক্ষেত্রে শায়খ আলী হুজায়ফি হচ্ছেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। ১৯৭৭ সালে তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন সময়ে দাওয়াহ, হাদিস ও উসুল আদ-দীন বিভাগে বেশ সুনামের সঙ্গে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। এ সময় তিনি প্রথমে মদিনার ঐতিহাসিক মসজিদে কুবায় ইমাম নিযুক্ত হন।

১৯৭৯ সালে মসজিদে নববির প্রধান ইমামের পদে যোগ দান করেন। মাঝখানে ১৯৮০ সালে রমজান মাসে মক্কার হারাম শরিফে ইমামতির দায়িত্ব অর্পন করা হয় তাকে। পরে পুনরায় মদিনার মসজিদে নববিতে ফিরে আনা হয় তাকে। পরবর্তীতে সেখানেই তিনি ইমাম ও খতিব হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও মসজিদে নববিতে ইমাম-খতিবের দায়িত্বের পাশাপাশি শায়খ হুজায়ফি আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত আছেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মুসহাফে মদিনার রিভিও-সংক্রান্ত গবেষণা কমিটির সভাপতি, কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সের উচ্চ কমিটির সদস্য ও পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত রেকর্ডিংয়ের সুপারভিশন কমিটির সদস্য ইত্যাদি।

শায়খ হুজায়ফির শিক্ষক যারা
যেসব মাশায়েখ ও শিক্ষাবিদের কাছ থেকে শায়খ হুজায়ফি বিশেষভাবে ইলমে কিরাআতের উপর দক্ষতা হাসিল করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- শায়খ আহমদ আবদুল আজিজ আয-যায়্যাত, শায়খ আমের আস-সায়্যিদ উসমান, শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আল-কাজি প্রমুখ।

তার অন্যতম ছাত্র-শিষ্য যারা
অনুরূপভাবে তার কাছ থেকেও প্রচুর আলেমে দ্বীন ও কারি—পবিত্র কোরআনের উপর বিশেষত্ব অর্জন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য শাগরেদদের মধ্যে রয়েছেন মদিনা মসজিদে নববির বর্তমান ইমাম ও খতিব শায়খ আবদুল মুহসিন আল-কাসিম, মক্কার হারাম শরিফের বর্তমান ইমাম শায়খ আবদুল্লাহ আল-জুহানি, তাবুকের প্রসিদ্ধ ইমাম ও কোরআনের শিক্ষক শায়খ খিদির আস-সুহাইমি প্রমুখ।

এক সাক্ষাতে তাকে বলেছিলাম, গত কিছুদিন পূর্বে আপনার বরাবরে ও হারামে মক্কার শায়খ সুদাইসের প্রতি সরকারিভাবে বাংলাদেশ সফরের জন্য দাওয়াতনামা পাঠানো হয়েছিল। আশাকরি, আপনি অবগত আছেন। আমরা জেনেছি, আপনার অন্য একটা প্রোগ্রাম থাকায় দাওয়াতে সাড়া দিতে পারেননি। আরেকজন ইমামকে পাঠানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কী?

শায়খ হুজাইফি তখন বলেন, ‘হ্যাঁ। কথা ঠিক। আগামীতে অবশ্যই বাংলাদেশ সফরে যাবো। ভালোবাসার মানুষগুলোকে দেখতে ইনশাআল্লাহ। ’

২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে মক্কার শায়খ সুদাইস ও মদিনার শায়খ আলী হুজাইফিকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। তারা উভয়েরই ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি। তাদের পরিবর্তে শায়খ সুদাইসের ডেপুটি শায়খ ড. মুহাম্মদ নাসের আল-খুজাইম এবং মদিনা মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব ড. আবদুল মুহসিন আল-কাসিমকে ঢাকা পাঠানো হয়।

লেখক: আলেম, লেখক ও অনুবাদক,বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ, সৌদি আরব

ইসলাম বিভাগে আপনিও প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।