ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বিনয়-নম্রতা ইবাদতের মৌলিক তত্ত্ব: কাবা শরিফের নতুন খতিব

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
বিনয়-নম্রতা ইবাদতের মৌলিক তত্ত্ব: কাবা শরিফের নতুন খতিব

মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে খতিব হিসেবে অভিষেক হয়েছে শায়খ ড. বানদার বালিলাহর। তিনি আগে থেকেই মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার প্রথম খুতবা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি দেখার ও শোনার সুযোগ হয়েছে অগণিত মুসলিমদের।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) মক্কা মুকাররমার পবিত্র মসজিদুল হারামে তিনি প্রথম খুতবা দেন। কাবা শরিফের সঙ্গে লাগোয়া শ্বেত-শুভ্র বিশেষ মিম্বারে দাঁড়িয়ে তিনি মুসলিম উম্মাহর উদ্ধেশ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।

মহান আল্লাহর প্রশংসা আদায়ের পর তিনি বলেন, সঠিকভাবে আল্লাহকে ভয় করুন। গোপনে-প্রকাশ্যে তাকে ভয় করুন। পার্থিব জীবন যেন আপনাদের ধোঁকায় ফেলে না দেয়; কারণ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার স্থান, রয়ে যাওয়ার জায়গা নয়। এখানে আমলদার ও নিষ্ঠাবান কর্মঠের কদর রয়েছে; অলসতা ও অকর্মন্যের স্থান এখানে নেই।

কাবা-প্রাঙ্গনে জুমার খুতবা দিচ্ছেন শায়খ ড. বানদার বালিলাহ।  ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীকে ব্যবসাকেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, আনুগত্য হলো এই ব্যবসাকেন্দ্রের পুঁজি। আর তার লাভ হলো কেয়ামতের দিন সর্বাঙ্গীনভাবে সাফল্য লাভ।

অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন একটি সত্যের কথা বলি, যেটিতে সন্দেহ ও মতানৈক্যের কোনো সুযোগ নেই। আর সেটি হলো, পৃথিবীর সমগ্র সৃষ্টি (মানব-দানব), মহান আল্লাহর প্রতি চূড়ান্ত পর্যায়ের মুখাপেক্ষী। চোখের পলকের জন্যও তার থেকে অমুখাপেক্ষী হতে পারে না। আল্লাহ ছাড়া তাদের বিকল্পও নেই। তিনি ছাড়াও তাদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনিই মহা পরক্রমশালী ও চিরঞ্জিব একমাত্র আল্লাহ, সৃষ্টির কল্যান অনুযায়ী সৃষ্টিকে পরিচালিত করেন। অতএব, তাকে ছাড়া সৃষ্টির কল্যাণ নিরন্তর অসম্ভব।

কাবা-প্রাঙ্গনে জুমার খুতবা দিচ্ছেন শায়খ ড. বানদার বালিলাহ।  ছবি: সংগৃহীত

তবে তার প্রতি মুখাপেক্ষিতার বিভিন্ন ধরন ও পরিবেশের বিভিন্ন রকম রয়েছে। কারণ এখানে একটি মুখাপেক্ষিতা আছে, যেটি সবচেয়ে দামি, সবচেয়ে মূল্যবান, সবচেয়ে সম্মানী ও সবচেয়ে উচ্চাঙ্গীয়; আর সেটি বিশ্বের তাবৎ বিলাসিতা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাস থেকে বহুগুণে সমৃদ্ধ ও সম্মানী। সেটি হলো- আল্লাহর প্রতি এমন মুখাপেক্ষিতা যে তিনি যেন গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন, দোষ-ত্রুটি গোপন রাখেন, হৃদয় পরিশুদ্ধ করে দেন। তাওবা কবুল করে নেন এবং করুণার সব দ্বার খুলে দেন।

তিনি আরও বলেন, মহনবী (সা.) ছিলেন  আল্লাহর প্রতি সবচেয়ে ধাবিত ও ঐকান্তিক ব্যক্তি। তিনি আল্লাহ তাআলাকে সর্বাধিক ভয় করতেন। আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে ভীষণ উৎকণ্ঠিত থাকতেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি দিনে একশ বারেরও বেশি আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাওবা করি। (বুখারি, হাদিস: ৬৩০৭)

কাবা-প্রাঙ্গনে জুমার খুতবা দিচ্ছেন শায়খ ড. বানদার বালিলাহ।  ছবি: সংগৃহীত

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)-এর ইবাদত-বন্দেগির কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘‘একদিন রাতে আমি নবী (সা.)-কে খুঁজছিলাম। পরে ধারণা করলাম উনি হয়তো অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। এরপর ফিরে এসে দেখলাম তিনি সিজদারত অবস্থায় রয়েছেন। আর বলছেন, ‘সুবহানাকা ওয়া বিহামদিকা, লা ইলাহা ইল্লা আনতা!’, এরপর আমি বললাম, আপনার ওপর আমার মা-বাবা উৎস্বর্গ হোক। আমি ভেবেছি এক রকম, অথচ আপনি আছেন অন্য কাজে!’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৮৫)

দ্বিতীয় খুতবায় শায়খ ড. বানদার বালিলাহ বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি তাওবা-ইস্তিগফারে নবী-রাসুলদের অবস্থা দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেননা, কারণ তাওবা হলো প্রথম, দ্বিতীয় ও শেষ মনজিল। আল্লাহর প্রতি অনুগামী বান্দা এটা ছেড়ে দিতে পারে না। মৃত্যু পর্যন্ত তাওবার মগ্ন থাকেন। অতএব, তাওবা হলো বান্দার শুরু এবং শেষ। তাওবার প্রয়োজনীয়তা অনিঃশেষ। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। ’

আর পড়ুন: কাবা শরিফের নতুন খতিব শায়খ ড. বানদার বালিলাহ

শায়খ বানদার বালিলাহকে এর আগে শনিবার (১২ অক্টোবর) সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের নির্দেশে খতিব নিয়োগ দেওয়া হয়। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর প্রেসিডেন্সি বিভাগের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস তার সঙ্গে নতুন অন্যদের নিয়োগের এই ঘোষণা দেন।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লেখা-প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও বিষয়ভিত্তিক লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।