এছাড়াও সারাদেশে ওয়াজ মাহফিলসহ অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদেরও উপাসনালয়ে সমবেত না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে উপাসনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৬ এপ্রিল) ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ভয়াবহ মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে যথাযথভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করা না হলে ব্যাপক সংক্রমণ এবং বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস মানুষের হাঁচি-কাশি-নিশ্বাস ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে সংক্রমিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির দেহে রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই তার মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটতে পারে। অনেকের মধ্যে ভাইরাসটি সুপ্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে, যার লক্ষণ দৃশ্যমান হয় না।
পূর্ব থেকে সতর্কতা অবলম্বন না করলে এর বিস্তার রোধ অসম্ভব হয়ে পড়বে। এরকম হতে থাকলে অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ব্যাপক সংক্রমণ ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বে এ পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক বা চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। যে কারণে সরকার সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে এবং সামাজিক দূরত্ব বজার রাখার লক্ষ্যে দেশের সব নাগরিককে ঘরে থাকার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জনসমাগমের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার ঘটছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এ ধরনের বিস্তার ও প্রাণহানির ঘটনার উদাহরণ বিদ্যমান। ইতোমধ্যে মুসলিম স্কলারদের অভিমতের ভিত্তিতে মক্কা মুকাররম ও মদিনা মুনাওয়ারাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের মসজিদে মুসল্লিদের আগমন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সর্বসাধারণের আগমন বন্ধ রাখার জোর পরামর্শ দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ২৯ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আহ্বানে এ বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ মিলিত হয়ে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি সীমিত রাখার ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে আহ্বান জানিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে পরিস্থিতি দ্রুত ভয়ঙ্কর অবনতির দিকে যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সবার সঙ্গে পরামর্শক্রমে নিম্নোক্ত নির্দেশনা দেওয়া হলো-
ভয়ানক করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে মসজিদের ক্ষেত্রে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা ব্যতীত অন্য সকল মুসল্লিকে সরকারের পক্ষ থেকে নিজ নিজ বাসস্থানে নামাজ আদায় এবং জুমার জামায়াতে অংশগ্রহণের পরিবর্তে ঘরে জোহরের নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজনে সম্মানিত খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে অনধিক ৫ জন এবং জুমআর জামায়াতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। জনস্বার্থে অন্য মুসল্লি মসজিদের ভিতরে জামায়াতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
একই সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অন্য ধর্মের অনুসারীদেরও উপাসনালয়ে সমবেত না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে উপাসনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে বলে জানানো হয়।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, এ সময়ে সারাদেশে কোথাও ওয়াজ মাহফিল, তাফসির মাহফিল, তাবলীগি তালীম বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যাবে না। সবাই ব্যক্তিগতভাবে তিলাওয়াত, জিকির ও দুয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করবেন।
অন্য ধর্মের অনুসারীরাও এ সময়ে কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য সমবেত হতে পারবেন না।
সব ধর্মের মূলনীতির আলোকে এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা কমিটিকে অনুরোধ জানানো হলো।
কোনো প্রতিষ্ঠানে উক্ত সরকারি নির্দেশ লংঘিত হলে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ নির্দেশ জারি করা হলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২০
এমআইএইচ/এএ