ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত-নিয়মকানুন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০
শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত-নিয়মকানুন

সিয়াম সাধনের মাস রমজান ইসলামের মৌলিক বিধানগুলোর অন্যতম। জীবন ও জগতের সার্বিক কল্যাণ বিধানে সিয়ামের গুরুত্ব সীমাহীন। মানবজীবনে খোদা ভীতি, সহমর্মিতা, ধৈর্য ইত্যাদি গুণ একটি আদর্শ সমাজের জন্য অপরিহার্য।

কিন্তু মানুষ নিজের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যের অধিকারকে দলিত করার কারণে সামাজিক জীবনটা প্রায়শই উত্তপ্ত হয়ে উঠে। অশান্তির দাবানলে দগ্ধ হয় মানবতা।

তাই মানবজীবনটা যাতে ভোগের মোহকে মিটিয়ে দিয়ে ত্যাগের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়, মনুষ্যসমাজ যাতে আদর্শিক মানদণ্ডের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়, সে জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলমানের ওপর মাহে রমজানের রোজাকে ফরজ করেছেন।

তবে রোজার মহৎ শিক্ষাটা যেন শুধু রমজানের একটি মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বছর ভরে জীবনজুড়ে এর অনুশীলন হতে থাকে সেজন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বছরের বার মাসের বিভিন্ন সময়ে নফল রোজা নিজে রেখেছেন এবং উম্মতকে রাখতে উৎসাহিত করেছেন। নফল রোজাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা। সাধারণ মুসলমান এই ছয় রোজাকে সাক্ষী রোজা হিসেবে জানলেও পবিত্র কোরআন, হাদীস বা ধর্মীয় গ্রন্থাদিতে এই নামটি খুঁজে পাওয়া যায় না।

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত:
রমজান মাসের পরের মাস অর্থাৎ হিজরি সনের দশম মাস হলো শাওয়াল মাস। এ মাসের প্রথম দিনে মুসলিম উম্মার সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসব, ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। উৎসব আনন্দে মুসলমানগণ যাতে রমজানের মহৎ শিক্ষাটা ভুলে না যায়, হয় তো সে জন্যই রাসুলে করিম (সা.) এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখতে উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব ফরজ রোজাগুলো রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬৪)

আলোচ্য হাদিসে যে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তা হলো- শুধু শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখলেই এক বছরের নফল রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে তেমনটি নয়। আবার শুধু মহিমাম্বিত রমজানে পুরো একমাস রোজা রাখলেও এক বছরের নফল রোজার সওয়াব দেওয়া হবে সে কথাও কোথাও বলা হয়নি। বরং পুরো রমজান মাস রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখলে তবেই পূর্ণ এক বছর নফল রোজা রাখার সওয়াব লাভ করা যাবে সে কথাই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন।

বস্তুত হাদিসে পবিত্র কোরআনেরই একটি আয়াতের বক্তব্য বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ কোন নেক আমল করবে তাকে তার দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। ’ (সুরা আল-আনআম: ১৬০) সুতরাং রমজানের এক মাসের ১০ গুণ হলো দশ মাস আর শাওয়াল মাসের ছয়দিনের দশগুণ হলো ৬০ দিন অর্থাৎ দুইমাস।

অর্থাৎ পূর্ণ এক বছরের নফল রোজার সওয়াব লাভের জন্য রমজানের রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার শর্ত থাকলেও যদি কেউ কোনো কারণে রমজানের পূর্ণমাস রাখতে না পেরে থাকেন, তাহলে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখা যাবে না তেমনটি নয়। সে ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরের নফল রোজার সওয়াব না পেলেও নফল রোজা পালনের সীমাহীন নেকি তিনি পাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কীভাবে রাখবেন ছয় রোজা:
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) শাওয়াল মাসের ভেতর ছয় রোজা রাখার কথা বলেছেন। মাসের প্রথম দিকে, মধ্যভাগে না শেষাংশে সে কথা হাদিসে উল্লেখ নেই। আবার ছয়টি রোজা একসঙ্গে লাগাতার রাখতে হবে, না-কি বিরতি দিয়ে দিয়ে রাখতে হবে, সে কথারও কোনো উল্লেখ নেই। তাই বিজ্ঞ ফকীহ ও আলিমগণের অভিমত হল, যেহেতু শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব এবং ওই দিনে রোজা রাখা হারাম, সেহেতু ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে মাসের যে কোনো ছয়দিনে রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব লাভ করা যাবে।

এই আরবি শাওয়াল মাসের অর্থাৎ প্রথমদিকে, মাঝামাঝি দিনগুলোতে অথবা শেষদিকে, আবার একাধারে ছয়দিন অথবা একদিন রোজা রেখে তারপর একদিন বা দু’দিন বিরতি দিয়ে আবার একদিন যে কোনোভাবে রোজা রাখা যাবে। শাওয়াল মাসের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখলেই হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে, ইনশাল্লাহ।

লেখক: পেশ ইমাম, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০
এসএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।