ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

নবীজির জীবনে দুঃখের বছর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২০
নবীজির জীবনে দুঃখের বছর

সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না নিয়েই জীবন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনও এই চিরাচরিত নিয়মের বাইরে ছিল না। তাঁকেও সুখ-দুঃখের মধ্য দিয়ে জীবন পার করতে হয়েছে।

তাঁর জীবনের একটি বছরকে দুঃখের বছর বলা হয়। সেটি হলো নবুয়তের দশম বছর।

এর কারণ হলো, সেই বছর তাঁর আশ্রয়স্থল চাচা আবু তালেব ইন্তেকাল করেন, তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা.) ইন্তেকাল করেন। এ সুযোগে মক্কার কাফির অত্যাচার ও নিপীড়ন বহুগুণ বেড়ে যায়।

চাচা আবু তালেবের ইন্তেকাল
আবু তালেব ঘাঁটিতে কয়েক বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হওয়ার ছয় মাস পর নবুয়তের দশম বর্ষে রজব মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা আবু তালেব ইন্তেকাল করেন। (বুখারি আবু তালেবের কিসসা অধ্যায়)

অন্য বর্ণনায় এ কথা উল্লেখ রয়েছে যে খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকালের তিন দিন আগে রমজান মাসে তিনি ইন্তেকাল করেন।

আবু তালেবের ইন্তেকালের সময় ঘনিয়ে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কাছে যান। সেখানে আবু জেহেলও উপস্থিত ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, চাচাজান আপনি শুধু ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলুন—এই স্বীকারোক্তি করলেই আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য সুপারিশ করতে পারব। আবু জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনে উমাইয়া বলল, আবু তালেব, আপনি কি আবদুল মোত্তালেবের ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন? এরপর তারা দুজন আবু তালেবের সঙ্গে কথা বলতে লাগল। আবু তালেব শেষ কথা বলেছিলেন যে আবদুল মোত্তালেবের ধর্মের ওপর...। নবী করিম (সা.) বলেন, আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আমি আপনার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকব। এরপর মহান আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করেন ‘আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও মুমিনদের জন্য সংগত নয়, যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে ওরা জাহান্নামি। ’ (১১৩, ৯)।

এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াতও নাজিল করেন, ‘তুমি যাকে ভালোবাসো ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভালো জানেন সৎপথ অনুসারীদের। ’ (৫৬, ২৮)

খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল
আবু তালেবের ইন্তেকালের দুই মাস, অন্য বর্ণনা মতে, তিন দিন পর উম্মুল মুমিমিন খাদিজাতুল কোবরা (রা.) ইহলোক ত্যাগ করেন, নবুয়তের দশম বর্ষের রমজান মাসে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছিল। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৫ বছর। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বয়স ছিল ৫০।

খাদিজা (রা.) সিকি শতাব্দী যাবৎ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনসঙ্গী ছিলেন। এ সময় দুঃখ-কষ্ট ও বিপদের সময় প্রিয় স্বামীর জন্য তাঁর প্রাণ কেঁদে উঠত। বিপদের সময় তিনি তাঁকে ভরসা দিতেন, ইসলাম প্রচারে নিত্য সঙ্গী থাকতেন, নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে তাঁর দুঃখ-কষ্ট দূর করতেন।
 
দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও মনোবেদনা
এই দুটি দুর্ঘটনা কয়েক দিনের মধ্যেই সংঘটিত হয়েছিল, এতে রাসুল (সা.) শোকে কাতর হয়ে পড়েন। অন্যদিকে আবু তালেবের ওফাতের পর কাফিররা প্রকাশ্যে রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিতে লাগল। তিনি আশ্রয়ের খোঁজে তায়েফ চলে যান। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, আবু তালেবের ইন্তেকালের পর কোরাইশরা নবী রাসুল (সা.)-এর ওপর এত বেশি নির্যাতন চালিয়েছিল, যা তাঁর জীবদ্দশায় তারা চিন্তাও করতে পারেনি। (ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৬)

এ ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে রাসুল (সা.) ওই বছরের নাম রেখেছিলেন আমুল হোজন বা দুঃখের বছর।

(আর-রাহিকুল মাখতুম অবলম্বনে)

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।