ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

হাসিমুখে সাক্ষাৎ প্রিয় নবীর সুন্নত

মুফতি তাজুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
হাসিমুখে সাক্ষাৎ প্রিয় নবীর সুন্নত

চলার পথে, কাজে-কর্মে অনেক মানুষের সঙ্গেই দেখা হয়। একজন মুসলিম হিসেবে অন্য মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে কীভাবে সাক্ষাৎ করতে হবে, তা-ও শিখিয়েছেন মানবতার মুক্তির দূত রাসুলুল্লাহ (সা.)।

অনেকে পরিচিত মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেও মুখ গোমড়া করে থাকে। অপরিচিত মানুষের মতো অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে মানুষকে অবমূল্যায়ন করা ইসলামের শিক্ষা নয়। আবু জার (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘কোনো ভালো কাজকে তুচ্ছ ভেবো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার কাজ হয়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬২৬)

প্রিয় নবী (সা.) সর্বদা সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। কারো সঙ্গে দেখা হলে কমপক্ষে হাসিমুখে তাকে শুভেচ্ছা জানাতেন। কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি জারির (রা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) যখনই আমাকে দেখেছেন, আমার সামনে মুচকি হাসি দিয়েছেন। ’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৪৯)

মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করলে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। (‘সদকা’ মানে দান, যার বিনিময়ে আল্লাহ আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন। ) একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭০)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সদকা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)
পাশাপাশি অন্যের সঙ্গে নরম ভাষায় কথা বলা উচিত। মন্দের বিপরীতে ভালোর মাধ্যমে প্রতিরোধ করা উচিত। নিজের আওয়াজ উঁচু হওয়া, অন্যকে গালি দেওয়া বা আঘাত করার মনোবাসনা থাকা উচিত নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা উত্তম পন্থা (সৌজন্য ও যুক্তিযুক্ত পন্থা) ছাড়া আহলে কিতাবের সঙ্গে বিতর্ক করবে না...। ’ (সুরা :  আনকাবুত, আয়াত : ৪৬)

ভাষা অবশ্যই নম্র ও হিকমতপূর্ণ হওয়া উচিত। খোদাদ্রোহী ফেরাউনের কাছে যখন মুসা (আ.) ও হারুন (আ.)-কে পাঠানো হয়, তখন এ বিশেষ হিদায়াত দেওয়া হয়েছিল, ‘তোমরা তার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলবে। (এতে) হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। ’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৪৪)

কাউকে কটাক্ষ করা, কারো দিকে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করা ও মন্দ বিশেষণে কাউকে ভূষিত করা ইসলামে গর্হিত অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা অতি নিন্দনীয়...। ’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১১)

বিতর্ক করার সময় কখনো শালীনতার সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়। গালাগাল করা, দম্ভভরে কথা বলা ও কর্কশ ভাষা ব্যবহার করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। লোকমান (আ.) তাঁর পুত্রের প্রতি অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন। তাঁর কিছু উপদেশ আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। এক স্থানে তিনি বলেন, ‘সংযতভাবে তুমি তোমার পা পরিচালনা করবে আর তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রাখবে। নিশ্চয়ই কণ্ঠস্বরের মধ্যে গাধার কণ্ঠস্বরই সবচেয়ে অপ্রীতিকর। ’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৯)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।